৪ দিনে সাপের কামড়ে দুজনের মৃত্যু
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন আরও চারজন
- আপলোড টাইম : ০৪:৪৪:৪৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪
- / ১০৯ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গায় গত ৪ দিনে সাপের কামড়ে শিশু ও কিশোরসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এসময় আরও চারজন সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার নিহত শিশু ও কিশোরকে সাপে কামড়ানোর চিকিৎসার একমাত্র ওষুধ অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দেয়া হলেও তাদের বাঁচানো যায়নি। সদর হসপাতাল কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, সাপে কামড়ানোর পর তাদের প্রথমে ওঁঝার বাড়িতে নেয়া হয়। দুটি রোগীর ক্ষেত্রেই হাসপাতালে নিতে সময় বিলম্ব হয়েছে। নিহতরা হলো- সদর উপজেলার ডিঙ্গেদহ গ্রামের জয়দেব পালের ছেলে দেবাশীষ (১২) ও সদর উপজেলার ভুলটিয়া গ্রামের বুলা মিয়ার ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী রাজন (১৬)। এছাড়া সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার পীতম্বরপুর গ্রামের হাসান আলীর মেয়ে মোছা. কনিকা (১৭), জীবননগর উপজেলার পেয়ারাতলা গ্রামের আশরাফ আলীর মেয়ে ইভা খাতুন, মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের সিংহাট গ্রামের মকবুল হোসেন (৪৫) ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের নতুনভাÐারদহ গ্রামের সাইদুর রহমানের স্ত্রী নিলুফা ইয়াসমিন (৩৬)।
গতকাল রোববার বিকেলে নিজ বাড়ির রান্নাঘরে কাজ করার সময় নিলুফা ইয়াসমিনের হাতে একটি বাঁচ্চা সাপ কামড় দেয়। এসময় পরিবারের সদস্যরা দ্রæত সময়ের মধ্যে তাকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। এছাড়া কনিকা, ইভা খাতুন ও মকবুল হোসেন চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফেরেন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় সাপের কামড়ের শিকার হয় দেবাশীষ। কিছুক্ষণ পর সে বমি করতে শুরু করলে সাপে কামড়ের বিষয়টি জানতে পারে পরিবার। এসময় তাকে স্থানীয় এক কবিরাজের কাছে নেয়া হয়। পরে সেখান ভোর সাড়ে চারটার দিকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর হাসপাতাল থেকে তার শরীরে অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন দেয়া হলেও সকাল ছয়টার দিকে দেবাশীষের মৃত্যু হয়।
অপর দিকে, একই দিনে ভোরে একটি বিষধর সাপের কামড়ের শিকার হয় কিশোর রাজন। নিজ ঘরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় তার হাতে কামড় দেয় সাপ। সঙ্গে সঙ্গে রাজন সাপটির মাথা চেপে ধরে মেরে ফেলে। এসময় পরিবারের সদস্যরা রাজনকে স্থানীয় একজন ওঁঝার (কবিরাজ) কাছে নেয়। সেখানে প্রায় তিন ঘণ্টা কবিরাজের চিকিৎসায় রাজনের অবস্থার আরও অবনতি হলে সকাল সাড়ে সাতটার দিকে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। এসময় তার শরীরেও সাপে কামড়ানোর চিকিৎসার একমাত্র ওষুধ অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন পুশ করা হয়। তবে এর কিছুক্ষণ পর মৃত্যু হয় রাজনের।
এসময় সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ছিলেন ডা. নাজমুস সাকিব। তিনি জানান, সাপে কামড়ের প্রায় চার ঘণ্টা পরে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজনকে জরুরি বিভাগে আনে পরিবার। বিষধর সাপের কামড়ের বিষয়টি নিশ্চিত হলে তার শরীরে ১০টি সাপের বিষের প্রতিষেধক ‘অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন’ দেয়া হয়। তবে এর ৩০ মিনিট পর তার মৃত্যু হয়। একই ঘটনা ঘটে শিশু দেবাশীষের ক্ষেত্রেও। সাপে কামড়ের পর প্রথমে ওঁঝা ও পরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে।
ডা. নাজমুস সাকিব বলেন, বিষধর সর্পদংশনের স্বীকৃত চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিভেনম। বিষধর সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ অসচেতনতা ও সঠিক চিকিৎসার অভাব বা চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হওয়া। গত বৃহস্পতিবার সকালে মৃত্যু হওয়ায় দুজনেরই সাপে কামড়ানোর অনেক পরে জরুরি বিভাগে নেয়া হয়। সময় বিলম্ব হওয়ায় অ্যান্টিভেনম দিয়েও তাদের বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
তিনি বলেন, এখনো অনেক গ্রামে কুসংস্কার আছে, সাপে কাটলে ওঁঝা বা বেদের কাছে নিয়ে বিষ নামালে রোগী ভালো হয়। সাপে কাটলে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কীভাবে চিকিৎসা নিতে হবে বা করণীয় কী, তা অনেকেই জানেন না। ফলে অনেক ক্ষেত্রে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও শুধু সঠিক জ্ঞানের অভাবে সময় মতো হাসপাতালে না নিতে পারায় মারা যান।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ওয়াহিদ মাহমুদ রবিন বলেন, হাসপাতালে অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে। সাপে কাটা রোগীদের হাসপাতালে আসা বেড়েছে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় বিষধর সাপে কামড়ানো রোগীকে ওঁঝার কাছে নেয়া হয়। ওঁঝা বা কবিরাজের চিকিৎসা না নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, সাপে কাটলে ওঁঝার কাছে নয়, দ্রæত সময়ের মধ্যে হাসপাতালে আসতে হবে। বিষধর সাপে কাটা রোগীকে ওঁঝার মাধ্যমে চিকিৎসা করালে তাকে বাঁচানো সম্ভব হয় না।