পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দেশ নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই
- আপলোড টাইম : ০৪:২২:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৯ জুলাই ২০২৪
- / ৯২ বার পড়া হয়েছে
আজও ১৬ ঘণ্টা কারফিউ শিথিল পাচ্ছে চুয়াডাঙ্গাবাসী। ধীরে ধীরে চুয়াডাঙ্গা আগের চেনা রূপে ফিরেছে। রাতে কারফিউ জারি থাকলেও খুব বেশি তা জনজীবনে প্রভাব পড়ছে না, বলছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সাধারণ মানুষের দাবি, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে মানুষের অতিরিক্ত চিন্তা কমে। দেশ নিয়ে সকলেই ভাবেন। দেশের প্রত্যেকটা পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে। দেশে কারফিউ জারির আজ সোমবার দশম দিনে চুয়াডাঙ্গায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা। এর আগে গতকাল রোববারও চুয়াডাঙ্গায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল।
দেশে কারফিউ জারি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি উদ্বেগ রয়েই গেছে। কয়েকদিনের উত্তাল পরিস্থিতির প্রভাব খুব বেশি চুয়াডাঙ্গায় না পড়লেও এই সময়ে মানুষের চিন্তা বেড়েছে। সাধারণ মানুষেরা বলছেন, দেশ নিয়ে চিন্তা প্রত্যেকের থাকে। রাষ্ট্রকে এদেশের মানুষ জন্মগতভাবে ভালোবাসে। সাধারণ মানুষের দাবি, উদ্বেগ না বাড়িয়ে সমস্যার সমাধান করা।
দৈনিক সময়ের সমীকরণের এই প্রতিবেদক চুয়াডাঙ্গার অন্তত ৫০ জন সাধারণ মানুষের সাথে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলাপ করেছেন। প্রায় সকলেই দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। অভিন্ন ভাষায় সকলের দাবি, আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার। বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজের চিন্তার বিষয়ও উঠে এসেছে প্রতিবেদকের এই আলাপে। অনেকেই বাংলাদেশ নিয়ে বহির্বিশ্বের কাছে ভুল তথ্য তুলে ধরার দাবি করেছেন। তাদের ভাষ্যমতে, বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এখনই সেদিকে নজর দেওয়ার আশা তাদের।
শহরের বাসিন্দা সাবেক স্কুল শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মহলে দেশকে বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে না তো? আমাদের দেশের সমস্যা, আমাদেরই সমাধান করা উচিত। বাইরের চাপ আসার আগেই সেটি করা প্রয়োজন। যে যার মতো সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করছে। ভারতের কয়েকটি মিডিয়ায় দেখলাম, নিউজ দেখাচ্ছে কোটা আন্দোলনের, আর ভিডিও দেখাচ্ছে কবে কোথায় কয়েকজন তাদের পণ্য বর্জন করেছে, সেটার। দুটি আন্দোলন কিন্তু পৃথক ছিল। সবকিছু দেখে ভয় হয়, এসব সুবিধাবাদীরা আবার কখন কী বলে বসে।’
সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কখনোই অশান্ত পরিবেশ চাই না। একটি সুন্দর শান্তিময় রাষ্ট্র আমাদের বাপ-দাদারাও চেয়েছেন। যেকোনো বিষয় এতদূর যাওয়ার আগেই সমাধান করা উচিত ছিল।’ অবসরপ্রাপ্ত এক পরিবার পরিকল্পনা কল্যাণ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কেনই বা এতদূর গড়াবে? আগে থেকে কি সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেয়া যেত না, কেন নেয়া হয়নি, সেটাও দেখা দরকার। এখন আবার যা শুনছি, তাতে পরিস্থিতি অন্যদিকে না গড়ায়। নিরীহ শিক্ষার্থীদের কেন আদালতে তোলা হচ্ছে?’
শহরের এক রিকশা চালক মুতালিব বিশ্বাস বলেন, ‘বাপু দেশ নিয়া সবারই চিন্তা আছে। সবাই ভাবে দেশে কী হচ্ছে!’ চা-বিক্রেতা আলম আলী বলেন, ‘সারাদিন তো টিভির সামনেই বসে থাকি। দেশ সম্পর্কে আপনার থেকে ভালো জানি। খবরের কাগজও পড়ি। কদিন মনে শান্তি নাই। কখন আবার কী হয়, মন তাই ডেকে ডেকে বলছে।’
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রায় স্বাভাবিক আছে। জেলার কোথাও কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। গতকাল রোববার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহর ঘুরে দেখা যায়, কারফিউ শিথিলের সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা শহরের রূপ আগের মতো প্রায় স্বাভাবিক হয়েছে। শহরের শহিদ আবুল কাশেম সড়ক, কোর্ট মোড়, কেদারগঞ্জ নতুন বাজার, রেল বাজার, শহিদ আলাউল ইসলাম সড়কের বেশিরভাগ দোকানপাট খুলেছে। সাধারণ মানুষ আগের মতো কেনাকাটাও করেছেন। এই সময়ে শহরের বড় বাজার মুদি এবং কাঁচা সবজির দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। বড় বাজার থেকে ইজিবাইক, পাখিভ্যান ও লেগুনায় কিছুটা যান চলাচল হয়। তবে চুয়াডাঙ্গা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছাড়েনি। এদিন অফিস-আদালত সব খোলা ছিল। স্বাভাবিক নিয়মে সব পরিচালিত হয়েছে।
কারফিউ শিথিলের সময় বৃদ্ধি পাওয়ায় জনমনে স্বস্তি ফিরেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও ভোগান্তি কমতে শুরু করেছে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো না চলায় অনেকটা ভোগান্তি আছে। তবুও জেলার সচেতন মহলের মানুষ বলছেন, পুরোপুরি কারফিউ তুলে দিলে পরিস্থিতি ভালো হবে। সাধারণ মানুষ বিনা উদ্বেগে নিজ নিজ কাজ করতে পারবেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, আজ সোমবার চুয়াডাঙ্গায় সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। তবে রাত ১০টা থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানানো হবে।