ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পুলিশের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা

চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২৩ নেতা-কর্মী কারাগারে

যার যার জায়গা থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলুন : জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৫০:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪
  • / ৪৮ বার পড়া হয়েছে

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের তালিকায় প্রতিদিনি যুক্ত হচ্ছেন দলটির শত শত নেতা-কর্মী। ফলে এক প্রকার গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন পার করছেন নেতা-কর্মীরা। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গার অবস্থাও একই রকম। যদিও চুয়াডাঙ্গায় কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি, তবুও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ২৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি বলছে, সরকার দলীয় লোক নিজেরাই সহিংসতা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপির রুটিন কর্মসূচিও থমকে গেছে। সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন থাকলেও চুয়াডাঙ্গায় চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিএনপির কোনো কর্মসূচি ছিল না। জেলা বিএনপির উদ্যোগে শুধুমাত্র এক দিন গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরও প্রতি রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ নেতা-কর্মীদের খুঁজছেন।
এ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলার পাঁচটি থানায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি, যুবদল, মৎস্যজীবী দল ও ছাত্রদলের ২৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ৮ জন, আলমডাঙ্গা থানায় ৫ জন, দামুড়হুদা থানায় ৩ জন, জীবননগর থানায় ৩ জন ও দর্শনা থানায় ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, জেলা মৎস্যজীবী দলের সদস্যসচিব হাকিম মুন্সি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের সদস্যসচিব মাজেদুল আলম মেহেদী, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সোহেল সিদ্দিকী, তুষার, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফয়সাল ইকবাল, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য মনিরুজ্জামান মনি,
আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন খান আলা, খাসকররা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আব্দুস সাত্তার, আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের সদস্য হাসান কাজী, সালাম শাহ, আলমডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের সদস্য আফজাল হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফারুক হোসেন বাবু, নতিপোতা ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শফিউদ্দিন, নতিপোতা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী উজ্জ্বল হোসেন, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য জয়নাল মেম্বার, আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিম খান, জীবননগর পৌর ছাত্রদলের সদস্য তুহিন, দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য রেজাউল ইসলাম, দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব পলাশ হাসান, আকন্দবাড়ীয়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কালাম ও দর্শনার সুলতানপুর গ্রামের বিএনপি কর্মী নাহিদ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘আজ এক সপ্তাহ হলো বাড়ি যাইনি। কোনো অপরাধ না করেও আমাদের পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া গোসল কোনো কিছুই নাই। পরিবারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগও করতে পারছি না। সবমিলিয়ে একদিকে গ্রেপ্তারের ভয়, অন্যদিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।’
ছাত্রদলের এক কর্মী বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের দলের পক্ষ থেকে সমর্থন থাকলেও আমরা কেউই কোনো কর্মসূচি পালন করিনি। অথচ সব দায় আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে। প্রতি রাতে পুলিশ বাড়ি গিয়ে আমাকে খুঁজছে। গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে বনে-বাদাড়ে রাত কাটাতে হচ্ছে। কারো সাথে সেভাবে যোগাযোগও করতে পারছি না।’
বিএনপির তৃণমূলের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার কষ্টের কথা জানান এ প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, দিনমজুর খেটে টেনেটুনে সংসার চালাই। শহীদ জিয়ার প্রতি ভালোবাসা থেকে দল করি। জাতীয় নির্বাচনের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। ওই সময় পরিবার ঋণ করে সংসার চালিয়েছে। চার মাস জেল খেটে কয়েকদিন আগে জামিন পেয়েছি। সেই ঋণ এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। এর মধ্যে আবার পুলিশ বাড়িতে আসছে আটক করতে। পরিবারের কথা চিন্তা করে আত্মগোপনে রয়েছি। তবে কতদিন এভাবে চলবে ঠিক বলতে পারছি না।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন থাকলেও কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সাধারণ ছাত্ররাই বিক্ষোভ, পিকেটিং, শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছে। সহিংসতার যে ঘটনা ঘটেছে, এটি ফ্যাসিস্ট সরকার ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা করেছে। এখন নাটক সাজিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। বিএনপি বা এর অঙ্গ সংগঠন কখনোই সহিংসতাকে সমর্থন করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী খুনী শেখ হাসিনা পুলিশকে যেভাবে সাধারণ ছাত্র ও মানুষের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে, তা ইতিহাসে জঘন্যতম ঘটনা। হাজারো মানুষকে হত্যা করে একটুও অনুতাপ নেই তার মধ্যে। উল্টো পুলিশ, সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর। এরকম হিংস্র প্রকৃতির মানুষ পৃথিবীতে আর আছে বলে মনে হয় না।’
বিএনপি নেতা শরীফ বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ বুঝে গিয়েছে আওয়ামী লীগের নাটক। শেখ হাসিনার এরকম বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডে ওনাদের দলের অনেক নেতা-কর্মী ও সমর্থকরাও হতবাক। যাদের সামান্যতম মনুষ্যত্ববোধ আছে, মানবিকতা আছে, তারা কখনোই আর চায় না এ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। তাই আমি আপামর জনতা, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানাবো এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। আপনারা যার যার জায়গা থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলুন।’

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

পুলিশের ভয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নেতা-কর্মীরা

চুয়াডাঙ্গা জেলাজুড়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক, বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ২৩ নেতা-কর্মী কারাগারে

যার যার জায়গা থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলুন : জেলা বিএনপির সদস্যসচিব শরীফ

আপলোড টাইম : ০৯:৫০:৫৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ইতিমধ্যে সারাদেশে বিএনপি-জামায়াত ও এর অঙ্গ সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারের তালিকায় প্রতিদিনি যুক্ত হচ্ছেন দলটির শত শত নেতা-কর্মী। ফলে এক প্রকার গ্রেপ্তার আতঙ্কে দিন পার করছেন নেতা-কর্মীরা। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।
সারাদেশের মতো চুয়াডাঙ্গার অবস্থাও একই রকম। যদিও চুয়াডাঙ্গায় কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি, তবুও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলায় বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের ২৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি বলছে, সরকার দলীয় লোক নিজেরাই সহিংসতা ঘটিয়ে বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংস পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপকভাবে ধরপাকড় শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় বিএনপির রুটিন কর্মসূচিও থমকে গেছে। সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন থাকলেও চুয়াডাঙ্গায় চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বিএনপির কোনো কর্মসূচি ছিল না। জেলা বিএনপির উদ্যোগে শুধুমাত্র এক দিন গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপরও প্রতি রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশ নেতা-কর্মীদের খুঁজছেন।
এ পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলার পাঁচটি থানায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি, যুবদল, মৎস্যজীবী দল ও ছাত্রদলের ২৩ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ৮ জন, আলমডাঙ্গা থানায় ৫ জন, দামুড়হুদা থানায় ৩ জন, জীবননগর থানায় ৩ জন ও দর্শনা থানায় ৪ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীরা হলেন- চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও চুয়াডাঙ্গা পৌর বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মনি, জেলা মৎস্যজীবী দলের সদস্যসচিব হাকিম মুন্সি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন, চুয়াডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের সদস্যসচিব মাজেদুল আলম মেহেদী, পৌর ছাত্রদলের সদস্য সোহেল সিদ্দিকী, তুষার, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক ফয়সাল ইকবাল, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সদস্য মনিরুজ্জামান মনি,
আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন খান আলা, খাসকররা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি আব্দুস সাত্তার, আলমডাঙ্গা উপজেলা যুবদলের সদস্য হাসান কাজী, সালাম শাহ, আলমডাঙ্গা পৌর ছাত্রদলের সদস্য আফজাল হোসেন, দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ফারুক হোসেন বাবু, নতিপোতা ইউনিয়ন ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি শফিউদ্দিন, নতিপোতা ইউনিয়ন যুবদলের কর্মী উজ্জ্বল হোসেন, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য জয়নাল মেম্বার, আন্দুলবাড়ীয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিম খান, জীবননগর পৌর ছাত্রদলের সদস্য তুহিন, দর্শনা পৌর বিএনপির সমন্বয় কমিটির সদস্য রেজাউল ইসলাম, দর্শনা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব পলাশ হাসান, আকন্দবাড়ীয়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি কালাম ও দর্শনার সুলতানপুর গ্রামের বিএনপি কর্মী নাহিদ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘আজ এক সপ্তাহ হলো বাড়ি যাইনি। কোনো অপরাধ না করেও আমাদের পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া গোসল কোনো কিছুই নাই। পরিবারের সাথে মোবাইলে যোগাযোগও করতে পারছি না। সবমিলিয়ে একদিকে গ্রেপ্তারের ভয়, অন্যদিকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছি।’
ছাত্রদলের এক কর্মী বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনে আমাদের দলের পক্ষ থেকে সমর্থন থাকলেও আমরা কেউই কোনো কর্মসূচি পালন করিনি। অথচ সব দায় আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে। প্রতি রাতে পুলিশ বাড়ি গিয়ে আমাকে খুঁজছে। গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছেড়ে বনে-বাদাড়ে রাত কাটাতে হচ্ছে। কারো সাথে সেভাবে যোগাযোগও করতে পারছি না।’
বিএনপির তৃণমূলের এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে তার কষ্টের কথা জানান এ প্রতিবেদকের কাছে। তিনি বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ, দিনমজুর খেটে টেনেটুনে সংসার চালাই। শহীদ জিয়ার প্রতি ভালোবাসা থেকে দল করি। জাতীয় নির্বাচনের সময় গ্রেপ্তার হয়েছিলাম। ওই সময় পরিবার ঋণ করে সংসার চালিয়েছে। চার মাস জেল খেটে কয়েকদিন আগে জামিন পেয়েছি। সেই ঋণ এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। এর মধ্যে আবার পুলিশ বাড়িতে আসছে আটক করতে। পরিবারের কথা চিন্তা করে আত্মগোপনে রয়েছি। তবে কতদিন এভাবে চলবে ঠিক বলতে পারছি না।’
চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. শরীফুজ্জামান শরীফ বলেন, ‘ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিএনপির সমর্থন থাকলেও কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সাধারণ ছাত্ররাই বিক্ষোভ, পিকেটিং, শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছে। সহিংসতার যে ঘটনা ঘটেছে, এটি ফ্যাসিস্ট সরকার ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা করেছে। এখন নাটক সাজিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। বিএনপি বা এর অঙ্গ সংগঠন কখনোই সহিংসতাকে সমর্থন করে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী খুনী শেখ হাসিনা পুলিশকে যেভাবে সাধারণ ছাত্র ও মানুষের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে, তা ইতিহাসে জঘন্যতম ঘটনা। হাজারো মানুষকে হত্যা করে একটুও অনুতাপ নেই তার মধ্যে। উল্টো পুলিশ, সেনাবাহিনীকে লেলিয়ে দিয়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর। এরকম হিংস্র প্রকৃতির মানুষ পৃথিবীতে আর আছে বলে মনে হয় না।’
বিএনপি নেতা শরীফ বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষ বুঝে গিয়েছে আওয়ামী লীগের নাটক। শেখ হাসিনার এরকম বর্বরোচিত কর্মকাণ্ডে ওনাদের দলের অনেক নেতা-কর্মী ও সমর্থকরাও হতবাক। যাদের সামান্যতম মনুষ্যত্ববোধ আছে, মানবিকতা আছে, তারা কখনোই আর চায় না এ সরকার ক্ষমতায় থাকুক। তাই আমি আপামর জনতা, সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আহ্বান জানাবো এই স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। আপনারা যার যার জায়গা থেকে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলুন।’