চুয়াডাঙ্গায় উপসম নার্সিং হোমের অপারেশন টেবিলে নারীর মৃত্যু
‘আগে জানলে বোনের অপারেশন করাতাম না’
- আপলোড টাইম : ০৪:১৫:১৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪
- / ৬৩ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সড়কের উপসম নার্সিং হোমের অপারেশন টেবিলে সাহানারা বেগম (৫২) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে অস্ত্রোপচারের সময় তার মৃত্যু হয়। নিহত সাহানার বেগম মেহেরপুর সদর উপজেলার বাড়াদী ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী। মৃত্যুর পর রাতেই পরিবারের সদস্যরা সাহানারা বেগমের লাশ রাজনগর গ্রামে নেয়। উপসম নার্সিং হোমে সাহানার বেগমের অস্ত্রোপচার করেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় এবং অ্যানেসথেসিয়া দেন মেডিকেল অফিসার (অ্যানেসথেসিয়া) ডা. রেজওয়ানুল হক।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সাহানারা বেগম চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট ডা. শাপলা খাতুনের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিন দিন পূর্বে সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময়ের কাছে চিকিৎসা নেন তিনি। সাহানারা বেগম ‘এইউবি’ ‘জরায়ুতে রক্ত ধারণক্ষমতা কম’ রোগে ভুগছিলেন। অস্ত্রোপচারের জন্য গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় উপসম নার্সিং হোমে তাকে ভর্তি করেন পরিবারের সদস্যরা। ভর্তির প্রায় ১২ ঘণ্টা পর রাত ৯টার দিকে জরায়ুর অস্ত্রোপচারের জন্য সাহানারাকে অপারেশন থিয়েটারে নেয়া হয়। রাত ১১টার দিকে অপারেশন থিয়েটার থেকে জানানো হয় অস্ত্রোপচারের সময় হার্ট অ্যাটাকে তিনি মারা গেছেন।
মেডিকেল অফিসার (অ্যানেসথেসিয়া) ডা. রেজওয়ানুল হক বলেন, ‘মেশিনের মাধ্যমে ‘ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি’ রোগীর অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়। অপারেশনের পূর্বে রোগীর ফিটনেস ঠিক আছে কি না, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে সবকিছু ঠিক থাকায় রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে তার অস্ত্রোপচার শুরু করা হয়। অস্ত্রোপচার শুরুর কিছুক্ষণ পর তার হার্ট ফেইলিউর হয়। এসময় আমাদের পক্ষ থেকে সিপআর, মাউথ টু মাউথ ব্রেথসহ সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। এমন ঘটনা লাখে একটি ঘটতে পারে। এই রোগীর ক্ষেত্রে সেই ঘটনাটিই ঘটেছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট ডা. এহসানুল হক তন্ময় বলেন, ‘গত তিন দিন আগে সাহানারা বেগম চিকিৎসার জন্য আমার কাছে আসেন। এর আগে তিনি গাইনি কনসালটেন্ট ডা. শাপলা খাতুনের প্রেসক্রিপশনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। রোগীর জরায়ুতে রক্ত ধারণক্ষমতা কম ছিল। মেডিকেলের ভাষায় এই রোগটিকে ‘এইউবি’ বলা হয়। যার কারণে তার অস্ত্রোপরারের প্রয়োজন ছিল। অপারেশন টেবিলে রোগীকে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পর কমপ্লিকেশন দেখা দেয়। এসময় হার্ট ফেইলিউর-এর কারণে তিনি মারা যান। অপারেশন থিয়েটারে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার পর কোনো কোনো রোগীর ক্ষেত্রে কমপ্লিকেশন দেখা দিতে পারে। যে কোনো রোগীর ক্ষেত্রে এমন হতে পারে, এটা নির্ধারণ করে বলা যায় না।’
নিহত সাহানারার বোন নাসরিন খাতুন বলেন, ‘অপারেশনের আগে বোন অনেক ভয় পাচ্ছিলো। কিন্তু জানতাম না সে মারা যাবে। জানলে বোনের অপারেশন করাতাম না।’
ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ‘রাত সাড়ে ১০টার পরে আমার আরেক বোন মোবাইলে আমাকে বোনের অপারেশনের জন্য ১ ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করতে বলে। রক্ত ম্যানেজ করে ১১টার দিকে চুয়াডাঙ্গায় এসে জানতে পারি বোন মারা গেছে। ডাক্তার জানান, অপারেশনের সময় আমার বোনের হার্ট ফেল হওয়ায় মৃত্যু হয়। অনেক চেষ্টা করেও ডাক্তাররা তাকে বাঁচাতে পারেনি।’