ইপেপার । আজ শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় কোটা সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি পালন

ছাত্রলীগের দুই পক্ষেই কঠোর অবস্থান, সতর্ক অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপলোড টাইম : ০৪:৫১:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪
  • / ১১৯ বার পড়া হয়েছে

চুয়াডাঙ্গায় কোটা বিরোধী আন্দোলন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে দলে দলে অংশ নেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তাঁদের অভিযোগ, আন্দোলনে নানাভাবে দেয়া হচ্ছে বাধা। গতকাল মঙ্গলবারও চুয়াডাঙ্গা শহীদ আলাউল ইসলাম সড়কে রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে মানববন্ধনের চেষ্টা করেন কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীরা। এদিন জেলা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষকেই কলেজ রোড, শহীদ আলাউল ইসলাম সড়ক, প্রেসক্লাব চত্বর ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। এদিকে, জেলা প্রশাসক বরাবর কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের শাস্তি ও আইনের আওতায় আনার দাবিতে স্মারকলিপি ও মানববন্ধন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের তেমন প্রভাব না থাকলেও গুটি কয়েক শিক্ষার্থী ঢাকার কর্মসূচির সাথে মিল রেখে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। মানববন্ধনের পাশাপাশি স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কোটা বিরোধীরা শহীদ আলাউল ইসলাম সড়কের রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে মানববন্ধনের চেষ্টা করেন। এসময় অল্প কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ানোর চেষ্টাকালে কোটাবিরোধীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, কোটা প্রথার ঠাই নাই’, ছাত্র সমাজ জেগেছে, কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ স্লোগানসহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। সে সময় কলেজের সামনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নানা পরামর্শে তারা যে যার মতো ফিরে যান। তবে এসময় ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপকে মিছিল সহকারে কলেজের দিকে দেখা যায়। মূলত ছাত্রলীগের দুটি পক্ষই সরকারি কলেজে অবস্থান নেয়।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ স্মারকলিপি

আন্দোলনকারীদের অন্যতম রনি বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশে ৫৭ শতাংশ কোটার কোনো যুক্তি নেই। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী যারা আছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলনে থাকবো, যতক্ষণ না আমাদের দাবি মেনে নেয়া হয়।

অপর দিকে, বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। কর্মসূচিটির নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গরিব রুহানী মাসুম। পরে মিছিল সহকারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন। জেলা প্রশাসক বরাবরে কোটাবিরোধীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান।

স্মারকলিপিতে লিখিতভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, ৩০ লাখ ভাইয়ের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্যদিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, সেই স্বাধীনতার নাম নিশানা মুছে ফেলার একটা ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু হয়েছে তথাকথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে। কোটা সংস্কারের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির মদদে জনজীবনে অচল অবস্থা সৃষ্টি করে চলেছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি চালু রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথম যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি পরিপত্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ কোটা ব্যাবস্থা বাতিল করেন। পরবর্তী পর্যায়ে এই কোটা ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়। মহামান্য হাই কোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করেছেন। যেখানে আদালতে এই মামলা চলমান আছে, সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সারাদেশকে অচল অবস্থা সৃষ্টি করে চলেছে। আমরা মনে করি মহান স্বাধীনতার নাম নিশানা মুছে ফেলার জন্যই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির প্রত্যক্ষ মদদে এবং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য সাধারণ কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে চাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এই অপশক্তির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে মোকাবিলা করতে বদ্ধপরিকর। এমতাবস্থায়, কোটা সংস্কারের নামে তথাকথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যারা দেশকে অস্থিতিশীল পারস্থিতি সৃষ্টি করে নৈরাজ্যে সৃষ্টি করতে চাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় কোটা সংস্কারের পক্ষে-বিপক্ষে কর্মসূচি পালন

ছাত্রলীগের দুই পক্ষেই কঠোর অবস্থান, সতর্ক অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ

আপলোড টাইম : ০৪:৫১:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ জুলাই ২০২৪

চুয়াডাঙ্গায় কোটা বিরোধী আন্দোলন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে দলে দলে অংশ নেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তাঁদের অভিযোগ, আন্দোলনে নানাভাবে দেয়া হচ্ছে বাধা। গতকাল মঙ্গলবারও চুয়াডাঙ্গা শহীদ আলাউল ইসলাম সড়কে রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে মানববন্ধনের চেষ্টা করেন কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীরা। এদিন জেলা ছাত্রলীগের দুটি পক্ষকেই কলেজ রোড, শহীদ আলাউল ইসলাম সড়ক, প্রেসক্লাব চত্বর ও চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চত্বরে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থানে দেখা যায়। এদিকে, জেলা প্রশাসক বরাবর কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের শাস্তি ও আইনের আওতায় আনার দাবিতে স্মারকলিপি ও মানববন্ধন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গাতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের তেমন প্রভাব না থাকলেও গুটি কয়েক শিক্ষার্থী ঢাকার কর্মসূচির সাথে মিল রেখে নানা কর্মসূচি পালন করছেন। মানববন্ধনের পাশাপাশি স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে কোটা বিরোধীরা শহীদ আলাউল ইসলাম সড়কের রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে মানববন্ধনের চেষ্টা করেন। এসময় অল্প কিছুক্ষণের জন্য দাঁড়ানোর চেষ্টাকালে কোটাবিরোধীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, কোটা প্রথার ঠাই নাই’, ছাত্র সমাজ জেগেছে, কোটা না মেধা, মেধা মেধা’ স্লোগানসহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। অতিরিক্ত পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের দিকে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করেন। সে সময় কলেজের সামনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নানা পরামর্শে তারা যে যার মতো ফিরে যান। তবে এসময় ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপকে মিছিল সহকারে কলেজের দিকে দেখা যায়। মূলত ছাত্রলীগের দুটি পক্ষই সরকারি কলেজে অবস্থান নেয়।

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ স্মারকলিপি

আন্দোলনকারীদের অন্যতম রনি বিশ্বাস বলেন, বাংলাদেশে ৫৭ শতাংশ কোটার কোনো যুক্তি নেই। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থী যারা আছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলনে থাকবো, যতক্ষণ না আমাদের দাবি মেনে নেয়া হয়।

অপর দিকে, বড় বাজার শহীদ হাসান চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা। কর্মসূচিটির নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান গরিব রুহানী মাসুম। পরে মিছিল সহকারে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন। জেলা প্রশাসক বরাবরে কোটাবিরোধীদের আইনের আওতায় আনার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা। স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিজানুর রহমান।

স্মারকলিপিতে লিখিতভাবে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা বলেন, ৩০ লাখ ভাইয়ের রক্ত ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির মধ্যদিয়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল, সেই স্বাধীনতার নাম নিশানা মুছে ফেলার একটা ঘৃণ্য চক্রান্ত শুরু হয়েছে তথাকথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে। কোটা সংস্কারের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির মদদে জনজীবনে অচল অবস্থা সৃষ্টি করে চলেছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি চালু রয়েছে। ২০১৮ সালে প্রথম যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি পরিপত্রের মাধ্যমে সম্পূর্ণ কোটা ব্যাবস্থা বাতিল করেন। পরবর্তী পর্যায়ে এই কোটা ব্যবস্থা বাতিলের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়। মহামান্য হাই কোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় প্রদান করেছেন। যেখানে আদালতে এই মামলা চলমান আছে, সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে সারাদেশকে অচল অবস্থা সৃষ্টি করে চলেছে। আমরা মনে করি মহান স্বাধীনতার নাম নিশানা মুছে ফেলার জন্যই স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির প্রত্যক্ষ মদদে এবং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য সাধারণ কোমলমতি ছাত্র/ছাত্রীদের ব্যবহার করে দেশকে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যেতে চাই। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা এই অপশক্তির অপতৎপরতার বিরুদ্ধে রাজপথে থেকে মোকাবিলা করতে বদ্ধপরিকর। এমতাবস্থায়, কোটা সংস্কারের নামে তথাকথিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যারা দেশকে অস্থিতিশীল পারস্থিতি সৃষ্টি করে নৈরাজ্যে সৃষ্টি করতে চাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।