চুয়াডাঙ্গায় টানা ৮ দিন প্রক্সি, ভুয়া পরীক্ষার্থীর জেল
- আপলোড টাইম : ০৫:৩৬:০৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ জুলাই ২০২৪
- / ১৫৩ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্নাস চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার অপরাধে এক ভুয়া পরীক্ষার্থীকে আটকের পর এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
সোমবার (০১ জুলাই) চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ কেন্দ্রে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ওই পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়। টানা ৮ দিন প্রক্সি দেওয়ার পর নবমতম পরীক্ষার দিনে জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সনাক্ত হয় ওই ভুয়া পরীক্ষার্থী। অভিযোগ উঠেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার।
দণ্ডপ্রাপ্ত শামীম আহম্মেদ তুষার জীবননগর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মো. খোকনের পুত্র এবং যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।
জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনের অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা গ্রহণের কেন্দ্র চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজ। এই কেন্দ্রে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। এ পরীক্ষায় অংশ নেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও জীবননগর উপজেলার আবুুল কাশেমের ছেলে মো. শহীদুজ্জামান। তার রোল নম্বর ২০২৮১৭৭ ও নিবন্ধন ননম্বর ১৮২১৫০৩৯৪২৬। কিন্তু তার পরিবর্তে আগের টানা ৮টি পরীক্ষাসহ সোমবারে অনুষ্ঠিত পরীক্ষাটিও দিচ্ছিলেন ভুয়া পরিক্ষার্থী শামীম আহম্মেদ তুষার।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিষয়টি জেলা প্রশাসনের নজরে আসে। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হন জেলা কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাঈমা জাহান সুমাইয়া। সেখানে তিনি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে পাবলিক পরীক্ষাসমূহ (অপরাধ) আইন, ১৯৮০-এর ৩ ধারা অনুযায়ী ভুয়া পরীক্ষার্থীকে এক বছরের জেল প্রদান করেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ও সহকারী কমিশনার নাঈমা জাহান সুমাইয়া বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় ভুয়া পরীক্ষার্থীকে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। আর যিনি প্রকৃত পরীক্ষার্থী তাঁকেও শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁর ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ কলেজ কৃতর্পক্ষ নিবেন।’
তিনি আরও জানান, গোপন খবর পেয়ে আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন। তার কথাও প্রথম দিকে দৃঢ় কণ্ঠে ছিল। পরীক্ষার্থীর পিতার নম্বর চাওয়া হলে, ভুয়া পরীক্ষার্থী আসল পরীক্ষার্থীর নম্বর প্রদান করেন। তার সাথে কথা বলেই আরও বেশি সন্দেহ হয়। তিনি যে ওই পরীক্ষার্থীর পিতা নন, সেটি কথা শুনেই স্পষ্ট মনে হচ্ছিলো। তারপর ভালোভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করায় দুজনের কথার মিল পাওয়া যায় না। পরবর্তীতে ভুয়া পরীক্ষার্থী স্বীকার করেন। এছাড়াও তার কাছে একটি মুঠোফোনও পাওয়া যায়।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সহযোগী অধ্যাপক মামুন অর রশিদ বলেন, অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষায় ২১৫ নম্বর কক্ষে ইতিহাস বিভাগের শহীদুজ্জামান নামের এক পরীক্ষার্থীর পক্ষে শামীম আহম্মেদ তুষার নামে একজন প্রক্সি দিচ্ছিলেন। বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে পরীক্ষা চলাকালে তাকে শনাক্ত করে। এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতে তাকে এক বছরের সাজা প্রদান করেন। ইতোমধ্যে আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষ মূল পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করেছি। এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রেরণ করেছি।
পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থী কীভাবে মুঠোফোন নিয়ে প্রবেশ করলেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে এই শিক্ষক বলেন, এসব কথা লেখার প্রয়োজন নেই। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে ৮টি পরীক্ষায় প্রক্সি দেওয়ার ব্যাপারটি ছড়িয়ে পড়লে সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের পরীক্ষা সংক্রান্ত নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে একজন চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীর টানা ৮ দিন প্রক্সি পরীক্ষা দেয়া এবং নবম দিনে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শনাক্ত সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছে।
সচেতন মহলের মানুষ বলছেন, একজন ভুয়া পরীক্ষার্থী নবম দিনে সনাক্ত হচ্ছে, তাও আবার তার কাছে মোবাইল ছিল। কেন্দ্রের মধ্যে মোবাইল নিয়ে প্রবেশের বিষয়েও প্রশ্ন উঠছে জনমনে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে কলেজ কৃর্তপক্ষের দায়িত্ব অবহেলার তীব্র নিন্দা চলছে। দাবি উঠেছে, কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার।
চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ ঘটনার আরও গভীর তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।