বড় কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস, লোডশেডিং চরমে
- আপলোড টাইম : ১০:৫৬:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
- / ১০৮ বার পড়া হয়েছে
গ্যাস সংকটে একদিকে গ্যাসভিত্তিক বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বড় কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এতে বিদ্যুতের বড় ধরনের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ফলে দেশব্যাপী হঠাৎ করে তিন দিন ধরে লোডশেডিং বেড়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং চরম আকার ধারণ করেছে। গতকাল অনেকেই জানান, গ্রামাঞ্চলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৪-৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। বাকি সময় লোডশেডিং হচ্ছে। এতে একদিকে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাটারিচালিত যানবাহনের ব্যাটারি চার্জ দেয়া যাচ্ছে না পূর্ণভাবে। এতে যাতায়াতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আবার কোথাও এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং হচ্ছে। তবে তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ে জনগণের ভোগান্তির সীমা নেই।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, গতকাল রাত ১২টায় রেকর্ড দুই হাজার ২৮৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। রাত ১টায় লোডশেডিং হয় দুই হাজার ২৪০ মেগাওয়াট, ২টায় দুই হাজার ১৯৯ মেগাওয়াট, ৩টায় দুই হাজার ১২৩ মেগাওয়াট, ৪টায় দুই হাজার ৫৮ মেগাওয়াট ও ভোর ৫টায় দুই হাজার ৩৪ মেগাওয়াট। সকালে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমায় বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাস পায়। এরপরও গতকাল সারাদিন এক হাজার থেকে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়।
এর আগে ২৫ জুন সারাদিন এক হাজার ৩০০ থেকে দুই হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়। এর মধ্যে রাত ১১টায় সর্বোচ্চ দুই হাজার ৫১ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয়। তার আগের দিন (২৪ জুন) দুপুর ২টার পর হঠাৎ করে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিং বাড়তে শুরু করে। ওইদিন বিকাল ৪টায় লোডশেডিং প্রথমবার এক হাজার মেগাওয়াট ছাড়ায়। পরে তা ৮৭৪ মেগাওয়াট থেকে এক হাজার ৭০০ মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠানামা করে। সূত্র জানায়, বর্তমানে কয়লাভিত্তিক বড় চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি করে ইউনিট বা আংশিক বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুৎ আসে ভারতের গড্ডার আদানি পাওয়ারের বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। ওই কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ৪৯৬ মেগাওয়াট। তবে গত দুদিন ধরে কেন্দ্রটি থেকে গড়ে ৩৭০ থেকে ৩৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আদানির গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট (৭৪৮ মেগাওয়াট) পুরোপুরি বন্ধ। অন্য ইউনিট থেকেও আংশিক বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে দেশের সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রার একটি ইউনিটও পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। তবে এর একটি ইউনিট বন্ধ থাকায় অন্য ইউনিট থেকে গড়ে ৬০০ থেকে ৬২২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। দ্বিতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপালের একটি ইউনিটেরও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলছে। ফলে এক হাজার ২৩৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি থেকে গড়ে ৮০০ থেকে ৮১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। দেশের তৃতীয় বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এসএস পাওয়ার। চট্টগ্রামের এ কেন্দ্রটির সক্ষমতা এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট। তবে এ কেন্দ্রটিরও একটি ইউনিট রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বন্ধ রয়েছে। এতে গড়ে ৬০০ থেকে ৬১২ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। অন্যদিকে দেশের গ্যাসভিত্তিক দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র ইউনিট মেঘনাঘাট। গ্যাস সংকটে ৫৮৪ মেগাওয়াট সক্ষমতার কেন্দ্রটি বর্তমানে পুরোপুরি বন্ধ।
যদিও গ্যাস সংকটে শুধু এই একটি নয় বরং ২৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের চাহিদা দৈনিক প্রায় ২৩২ কোটি ঘনফুট। ২৪ জুন এ খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১০০ কোটি ঘনফুট। ২৫ জুন তা আরও কমে দাঁড়ায় ৯৭ কোটি ঘনফুট। মূলত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস তথা এলএনজি বিদ্যুৎ খাতে বড় অংশ সরবরাহ করা হয়। তবে সামিটের ভাসমান এলএনজি টার্মিনালটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানোয় গ্যাস সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। গতকাল গ্যাস সংকটে দুই হাজার ৯৪৮ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ ছিল।
হঠাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস ও লোডশেডিং নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ বা পিডিবি আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য এখনও জানায়নি। তবে পিডিবির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, জুনের শেষ সপ্তাহে এলএনজি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণে পাঠানো হবে-এটা আগেই জানিয়েছিল পেট্রোবাংলা। তবে হঠাৎ করেই পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট বন্ধ হওয়া এবং আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্র রক্ষণাবেক্ষণে থাকায় সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমলে ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে বলে তারা দাবি করেন।