দর্শনা কেরুর ডিস্টিলারি থেকে ১৩ হাজার লিটার আরএস স্পিরিট গায়েব
বন্ডেড ওয়্যারহাউসের ইনচার্জ তুফানের দিকে সন্দেহের তীর!
- আপলোড টাইম : ১১:০৬:০৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জুন ২০২৪
- / ৮১ বার পড়া হয়েছে
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চিনিকল থেকে বিভিন্ন মালামাল চুরি, গায়েবসহ নানা অনিয়মই যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ নামমাত্র তদন্ত কমিটি করে দোষীদের সাময়িক শাস্তি দেওয়ায় একই ব্যক্তি আবার সেই অপরাধ করেন। এবার কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি থেকে ১৩ হাজার ১৯০.৭৫ লিটার আরএস স্পিরিট গায়েব হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই স্পিরিটের আনুমানিক মূল্য ৩০ লাখ টাকা।
কেরু ডিস্টিলারিতে আরএস স্পিরিট দিয়ে বিলাতি মদ ফরেন লিগারের বিভিন্ন ব্রান্ডের মদ উৎপাদন করা হয়। এত মালামাল গায়েবে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগে বন্ডেড ওয়্যারহাউস (ডিস্টিলারি ভাণ্ডার) ইনচার্জ এ কে এম মাজেদুর রহমান ওরফে তুফানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। তবে এই ঘটনাটি কেরু ডিস্টিলারি বিভাগে জানাজানি হলে অজ্ঞাত কারণে বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি।
দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগে বন্ডেড ওয়্যারহাউজে সহকারী ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমোশন পেয়ে ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পান। এর আগে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগে বন্ডেড ওয়্যারহাউস ইনচার্জ ছিলেন এ কে এম মাজেদুর রহমান ওরফে তুফান।
ডিস্টিলারি বিভাগে বন্ডেড ওয়্যারহাউজে বর্তমান ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর হোসেন লিখিত অভিযোগে বলেন, ‘আমাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার সময় ডি/এস গোডাউন, ডি এস স্পিরিটের ৩ নম্বর ভ্যাট গোডাউনে সরেজমিনে গভীরতা ১০৯ ইঞ্চি। যার বাস্তবিক মজুদ রয়েছে ৩৫ হাজার ৫১২.২৩ লিটার। কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুদ রয়েছে ৩৯ হাজার ৭১১.৫৫ লিটার।’
তিনি আরও বলেন, ৭ নম্বর ভ্যাট গোডাউনে সরেজমিনে গভীরতা ৫৩ ইঞ্চি। যার বাস্তবিক মজুদ রয়েছে ৪ হাজার ৮৪.৩০ লিটার। কিন্তু হস্তান্তর তালিকায় মজুদ রয়েছে ১৩ হাজার ৭৯৫.৭৩ লিটার। এছাড়া ১০ নম্বর ভ্যাটে ৪ ইঞ্চি মালামাল কম আছে। ভ্যাট নম্বর ৩, ভ্যাট নম্বর ৭ ও ভ্যাট নম্বর ১০ বাস্তবিক মজুদ অনুযায়ী ১৩ হাজার ১৯০.৭৫ লিটারের বেশি মালামাল কম থাকায় আমি দায়িত্ব গ্রহণ করিনি। এ ব্যাপারে আমি গত ২ মে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। বিষয়টি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করা যেতে পারে বলে সুপারিশ করেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা।
এ নিয়ে কেরু ক্যাম্পাসে চলছে আলোচনা সমালোচনা ঝড়। স্থানীয় শ্রমিকরা বলছেন, এএসএস সাজেদুর রহমান ওরফে তুফানের অজ্ঞাত কারণে এ বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। তবে এ বিষয়টি নিয়ে কেরুজ এক শ্রমিক নেতা তেলেসমাতি কারবার করে থামিয়ে দিয়েছে বলেও জনশ্রুতি রয়েছে।
এ ব্যাপারে গতকাল সোমবার দুপুরে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানি চিনিকলের ডিস্টিলারি বিভাগের বন্ডেড ওয়্যারহাউস (ডিস্টিলারি ভাণ্ডার) ইনচার্জ এ কে এম মাজেদুর রহমান ওরফে তুফান বলেন, ‘কে বলেছে আপনার? (জাহাঙ্গীর হোসেন) যখন চার্জ দিতে আসে তখন খাতায় ঠিক হয়নি। উনি দায়িত্ব না নিয়ে শ্রীমঙ্গলে বসে আছে। পরে আলমগীর এসে খাতা ঠিক করে দিয়েছে। মালামাল কোনো শট-ফট নেই। আমি নিজে এখন ওয়্যারহাউস চালাচ্ছি। জুনের পরে হিসাব এসে দেখে যাবেন সব ঠিক আছে। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন। আর যেটা ওয়ারহাউজে থাকে ২০০-১০০ লিটার এটা কোনো বিষয় না।’
এ ঘটনায় ডিস্টিলারি জিএম মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কোনো বক্তব্য দিতে পারব না। আপনি জিএম (প্রশাসনের) সাথে কথা বলতে পারেন।’
এ বিষয়ে দর্শনা কেরু অ্যান্ড কোম্পানির চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, ‘ডিস্টিলারি বিভাগের বন্ডেড ওয়্যারহাউসের (ডিস্টিলারি ভাণ্ডার) মালামাল চুরি হয়েছে, এমন তথ্য জানতে পায়। পরে আমাকে জানানো হয় সব ঠিক আছে। তবে আমি বিষয়টি আগামীকাল অফিসে এসে খতিয়ে দেখব।’ এ ঘটনায় দর্শনা কেরু কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি জানি না।’