চুয়াডাঙ্গায় তাপপ্রবাহ সামান্য কমলেও ভ্যাপসা গরমে বেড়েছে অস্বস্তি
প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছে গবাদি পশু, মরছে মুরগী
- আপলোড টাইম : ০৭:২১:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
- / ১৯৩ বার পড়া হয়েছে
টানা তিন দিন অতি তীব্র তাপদাহের পর চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রায় সামান্য পরিবর্তন এসেছে। গতকাল রোববার বেলা ৩টায় এবং সন্ধ্যা ছয়টায় এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় এ জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যহত থেকেছে। তীব্র গরমে মানুষের পাশাপাশি প্রাণিকূলেও দেখা দিয়েছে অস্বস্তি। জেলায় গরু ও ছাগলসহ বিভিন্ন পশু-পাখিদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে গরমজনিত রোগ। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস বলছে, তীব্র দাবদাহে সবথেকে বেশি মৃত্যু হচ্ছে মুরগি ও ব্রয়লারের। জেলায় লার্জ অ্যানিমেল (গরু, ছাগল, ভেড়া) গরমের কারণে না মরলেও গত চার দিনে বিভিন্ন খামারে ১৭৫টির ওপরে বয়লার মুরগি মারা গেছে। প্রাণিদের মধ্যে ইফি মিরিল ভাইরাস জহ্বর দেখা দিচ্ছে। গুরু ছাগলসহ গবাদি প্রাণির মধ্যে পাতলা পায়খানা, রুচিহীনতা ও স্ট্রকের মতো রোগে দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদর ও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে চিকিৎসা নিতে প্রাণিসম্পদ অফিসে আসছেন সাধারণ মানুষেরা। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চার দিনে বিভিন্ন খামারে ১৭৫টি ব্রয়লার মুরগি মারা গেছে। গত এক মাসে একটি গরু স্ট্রোকজনিত কারণে মারা গেছে। গরমে রোগবালাই বাড়লেও বাড়িতেই প্রাণিদের চিকিৎসা দিচ্ছেন মালিকরা। গরমে প্রাণিসম্পদ অফিসে এসে প্রাণিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার থেকে বেশি স্বাছন্দ্যবোধ করছেন বাড়িতেই সেবা দিতে। প্রাণিসম্পদ অফিসের মাঠকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পশু-পাখির বিভিন্ন সেবা দিচ্ছেন।
গত এক সপ্তাহে গরু ও ছাগল মিলিয়ে ২৪৫টির বেশি প্রাণি সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে সেবা দেয়া হয়েছে। সাধারণ সময়ে দৈনিক গড়ে ৭০ থেকে ৮০টি পশুর সেবা দিলেও এখন অফিসে এসে সেবা নেওয়ার পরিমাণ কম। দৈনিক ৩৫ থেকে ৪০টি সেবা দেয়া হচ্ছে।
ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সবথেকে বেশি কষ্টে আছে মুরগি খামার মালিকরা। প্রত্যেকদিন ব্রয়লার মারা যাওয়া বা অসুস্থতার খবর আসে। খামার মালিকদের সাথে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। আমাদের মাঠকর্মীরা নিয়মিত গিয়ে সেবা দিচ্ছেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ডা. খন্দকার শাওন হাসনাত বলেন, পেট ফেফে যাওয়া, খাবারে অরুচিসহ গরমজনিত রোগ বেড়েছে। তবে তীব্র গরমের কারণে প্রাণিসম্পদ অফিস পর্যন্ত আসতে আগ্রহী নন পশু মালিকরা। আমাদের মাঠ কর্মীরা গিয়ে সেবা দিচ্ছে। আমাদের চিকিৎসা সামগ্রী পর্যাপ্ত সাপ্লাই আছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার সন্ধ্যা ছয়টায় এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৫৮ শতাংশ। যা সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এরআগে গত শনিবার (২০ এপ্রিল) এ জেলায় সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এরপর রোববার (২১ এপ্রিল) ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি, সোমবার (২২ এপ্রিল) ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি, মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, বুধবার (২৪ এপ্রিল) ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি, বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি ও শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সিনিয়র আবহাওয়া পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, এপ্রিল মাসের শুরু থেকে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে মৃদু, মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত চলমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। এপ্রিল মাসে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই। বাতাসে জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে গরমে অস্বস্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে।