গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা; নৃশংস এক অপরাধ
- আপলোড টাইম : ০৭:১৯:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
- / ১২২ বার পড়া হয়েছে
মাঝে মধ্যে গণমাধ্যমে খবর হয়, দেশের কোথাও না কোথাও নানা কারণে সন্দেহের বশে গণপিটুনিতে মানুষ হত্যা করা হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নে মন্দিরে আগুনের ঘটনায় সন্দেহের জেরে দুই শ্রমিক আশরাফুল খান ও আসাদুল খানকে (আপন ভাই) গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করে উত্তেজিত একদল লোক। নৃশংস এই হত্যার ঘটনা নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় এখনো চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে।
গণপিটুনিতে যারা হত্যার শিকার হয়েছেন, পরে দেখা গেছে, তারা সবাই নিরপরাধ ছিলেন। তবে আইনসঙ্গত হলো, কেউ যদি কোনো অপরাধ করেও থাকেন তাহলেও তাকে পিটিয়ে হত্যা করার অধিকার আইনে কাউকে দেয়া হয়নি। কেউ ব্যক্তিগত বা সমষ্টিগত আক্রোশে আইনের তোয়াক্কা না করে হত্যার মতো এমন নৃশংস ও নিষ্ঠুর কাজ করতে পারে না। কাউকে পিটিয়ে হত্যা করা কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। দেশের কোনো নাগরিক নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারেন না। যারা এ ধরনের ঘটনায় অংশ নিয়েছেন; তারা হত্যার অপরাধ করেছেন। হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা উচিত।
আইনের দৃষ্টিতে গণপিটুনি একটি বৈআইনি কর্মকাণ্ড। যা সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। তবু এমন নৃশংস ঘটনা বন্ধের কোনো লক্ষণ নেই। বরং দিন দিন গণপিটুনিতে হত্যার ঘটনা বাড়ছে। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব, ২০২৩ সালে দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ৫১ জন, ২০২২ সালে এ সংখ্যা ছিল ৩৬, ২০২১ সালে ২৮, ২০২০ সালে ৩৫ এবং ২০১৯ সালে ৬৫। আর ২০১৯ সাল থেকে চলতি বছরের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত সারা দেশে গণপিটুনিতে নিহত হয়েছেন ২৪৮ জন। মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির পরিসংখ্যান বলছে, দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত এই চার মাসে ২৪ জনকে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়েছে।
গণপিটুনিতে হত্যার বড় নজির রেনু হত্যাকাণ্ড। ২০১৯ সালের জুলাইয়ে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তসলিমা বেগম রেনু নামের ওই নারীকে। তখন শহরে ছেলেধরা গুজব চলছিল। পিটিয়ে হত্যার ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। বিশেষ করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে মানুষকে সচেতন করতে হবে। একই সাথে আইনের তোয়াক্কা না করে মানুষ পিটিয়ে হত্যার মতো ঘটনায় যারা জড়িত হচ্ছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
প্রশ্ন হলো, কেন দেশে গণপিটুনির মতো বেআইনি নিষ্ঠুর ঘটনা বাড়ছে? এর সমাজতাত্ত্বিক কারণের অন্যতম হলো- সম্পদশালী ও ক্ষমতাবান একশ্রেণীর মানুষের অপরাধ করে সহজে পার পেয়ে যাওয়া। সবাই দেখছে, দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি জেঁকে বসেছে। এতে আইন-আদালতের প্রতি নাগরিকদের আস্থায় বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। সঙ্গতকারণে বলা যায়, গণপিটুনিতে নির্বিচারে মানুষ হত্যা আইন-আদালত ও বিচারব্যবস্থার প্রতি একধরনের গণ-অনাস্থা। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আইনের চোখে সবাই সমান এই নীতি কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।