ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে টিউবওয়েলে পানি সংকট

সমীকরণ প্রতিবেদন:
  • আপলোড টাইম : ০৯:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪
  • / ১১৫ বার পড়া হয়েছে

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলাসহ ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার বিভিন্ন হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। তীব্র গরমে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে।

জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাধারণত মাটির নিচে ৫০-৬০ ফুট গভীরে পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ওইসব এলাকায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোও ক্রমেই শূন্য হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হওয়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা। পানি নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান মানিকদিয়া গ্রামের গৃহবধূ তছলিমা খাতুন। একই অবস্থা তাদের আশপাশেও। অথচ তাদের বাড়ি থেকে দেড়শ গজ দূরে বয়ে চলেছে মাথাভাঙ্গা নদী। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অনেকে বলেন, আগে ২০-৩০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক পূর্ণ হয়ে যেত। অথচ গত ১৫-২০ দিন ধরে দুই-তিন ঘণ্টা মোটর চালিয়েও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না।

এদিকে, নিজ বাড়ির টিউবওয়েলে পানি না থাকায় মানিকদিয়া গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের খাবার পানির চাহিদা মেটাতে গৃহবধূ ও শিশুরা জগ, কলস ও ঘরা নিয়ে লাইন ধরে গভীর একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

কৃষক মহিদুল হক জানান, গরম পড়ার পর থেকে এলাকার টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। আমার নিজের টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় পাশের বাড়ির একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করছি। প্রায় ১৫/২০ দিন এভাবে চলছে।

এদিকে, তীব্র গরম আর তাপদাহে পানির সংকটে পড়েছে ঝিনাইদহ জেলার ছয়টি উপজেলার মানুষ। সেই সঙ্গে হাঁসফাঁস করছে সব ধরনের পশুপাখিরা। হস্তচালিত নলকূপ এবং শ্যালো বোরিংয়ে উঠছে না পানি। ফলে গৃহস্থালি ও মাঠে কৃষকরা উভয়ই সংকটে পড়ছে।
ঝিনাইদহের সদর উপজেলার গোপালপুর এলাকার ইবাদত হোসেন জানান, দুই সপ্তাহ আগেও তার সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠত। এখন মাটির গভীরে মেশিন বসিয়েও পানি উঠছে না। ভারী বৃষ্টি না হলে ইবাদতের মতো ঝিনাইদহের হাজারও কৃষক জমিতে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইরি ধানের সেচ কাজে এবং পুকুর খনন করে মাছের চাষের জন্যে মাত্রাতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার বেশিরভাগ বিল বাঁওড়, জলাশয় ও পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর তলদেশে কৃষকেরা এখন ধানচাষ করছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নলকূপে পানি কম উঠছে। সাধারণত ২০-৩০ ফুট নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন ৩০-৪০ ফুট নিচেও পানির লেয়ার মিলছে না। জেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বলছে, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এসব নলকূপ থেকে নিয়ম না মেনে পানি উত্তোলন করায় স্তর নেমে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, শুধু ঝিনাইদহ জেলাতে না। জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে, তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে ঝিনাইদহ জেলায় ১৭ হাজার গভীর ও ১৮ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে।

ঝিনাইদহ জেলার কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. জাহিদ হাসান জানান, বর্তমান সময়টা শুষ্ক এবং উষ্ণকাল। এসময় নদ-নদীর পানি এমনিতেই কমে যায় । ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নেমে যায়। যে কারণে পানি ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলে এ সব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে টিউবওয়েলে পানি সংকট

আপলোড টাইম : ০৯:৪৩:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলাসহ ঝিনাইদহের ছয় উপজেলার বিভিন্ন হস্তচালিত টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। তীব্র গরমে এসব এলাকার মানুষের মধ্যে পানির সংকট চরমে পৌঁছেছে। দীর্ঘ অনাবৃষ্টি, ভূ-গর্ভস্থ পানির অতিরিক্ত ব্যবহার, অপরিকল্পিতভাবে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি তোলা, এবং পুকুর-খাল-বিল ভরাটের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামীতে বৃষ্টিপাত না হলে পরিস্থিতি আরও অবনতি হবে বলেও জানান তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমেই নিচে নামছে।

জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সাধারণত মাটির নিচে ৫০-৬০ ফুট গভীরে পানির স্তর স্বাভাবিক থাকে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ায় ওইসব এলাকায় পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলোও ক্রমেই শূন্য হয়ে পড়ছে। এতে একদিকে গৃহস্থালির কাজে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে বোরো চাষে পানির সংকটের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। উপজেলার ষোলটাকা ইউনিয়নের আমতৈল, মানিকদিয়া, কেশবনগর, শিমুলতলা, রইয়েরকান্দি, সহড়াবাড়িয়া, কাথুলি ইউনিয়নের গাঁড়াবাড়িয়া, ধলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় চলতি শুষ্ক মৌসুম শুরু থেকেই সুপেয় পানির সংকট প্রকট হওয়ায় সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, গ্রীষ্মকাল শুরু না হতেই এবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ টিউবওয়েলে পানি উঠছে না। অথচ গ্রামে সুপেয় পানির জন্য নলকূপই শেষ ভরসা। পানি নিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে জানান মানিকদিয়া গ্রামের গৃহবধূ তছলিমা খাতুন। একই অবস্থা তাদের আশপাশেও। অথচ তাদের বাড়ি থেকে দেড়শ গজ দূরে বয়ে চলেছে মাথাভাঙ্গা নদী। ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এ অবস্থা হয়েছে। ভুক্তভোগীদের অনেকে বলেন, আগে ২০-৩০ মিনিট মোটর চালালেই বাড়ির ছাদের ট্যাংক পূর্ণ হয়ে যেত। অথচ গত ১৫-২০ দিন ধরে দুই-তিন ঘণ্টা মোটর চালিয়েও প্রয়োজনীয় পানি মিলছে না।

এদিকে, নিজ বাড়ির টিউবওয়েলে পানি না থাকায় মানিকদিয়া গ্রামের বিভিন্ন পরিবারের খাবার পানির চাহিদা মেটাতে গৃহবধূ ও শিশুরা জগ, কলস ও ঘরা নিয়ে লাইন ধরে গভীর একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করতে দেখা যায়।

কৃষক মহিদুল হক জানান, গরম পড়ার পর থেকে এলাকার টিউবওয়েলগুলোতে পানি উঠছে না। আমার নিজের টিউবওয়েলে পানি না ওঠায় পাশের বাড়ির একটি টিউবওয়েল থেকে পানি সংগ্রহ করছি। প্রায় ১৫/২০ দিন এভাবে চলছে।

এদিকে, তীব্র গরম আর তাপদাহে পানির সংকটে পড়েছে ঝিনাইদহ জেলার ছয়টি উপজেলার মানুষ। সেই সঙ্গে হাঁসফাঁস করছে সব ধরনের পশুপাখিরা। হস্তচালিত নলকূপ এবং শ্যালো বোরিংয়ে উঠছে না পানি। ফলে গৃহস্থালি ও মাঠে কৃষকরা উভয়ই সংকটে পড়ছে।
ঝিনাইদহের সদর উপজেলার গোপালপুর এলাকার ইবাদত হোসেন জানান, দুই সপ্তাহ আগেও তার সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠত। এখন মাটির গভীরে মেশিন বসিয়েও পানি উঠছে না। ভারী বৃষ্টি না হলে ইবাদতের মতো ঝিনাইদহের হাজারও কৃষক জমিতে সেচ নিয়ে বিপাকে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ইরি ধানের সেচ কাজে এবং পুকুর খনন করে মাছের চাষের জন্যে মাত্রাতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে।

জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার বেশিরভাগ বিল বাঁওড়, জলাশয় ও পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর তলদেশে কৃষকেরা এখন ধানচাষ করছেন।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নলকূপে পানি কম উঠছে। সাধারণত ২০-৩০ ফুট নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন ৩০-৪০ ফুট নিচেও পানির লেয়ার মিলছে না। জেলা কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বলছে, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। এসব নলকূপ থেকে নিয়ম না মেনে পানি উত্তোলন করায় স্তর নেমে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম জানান, শুধু ঝিনাইদহ জেলাতে না। জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলকূপ রয়েছে, তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে ঝিনাইদহ জেলায় ১৭ হাজার গভীর ও ১৮ হাজার অগভীর নলকূপ রয়েছে। এসব নলকূপে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলকূপ স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে।

ঝিনাইদহ জেলার কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. জাহিদ হাসান জানান, বর্তমান সময়টা শুষ্ক এবং উষ্ণকাল। এসময় নদ-নদীর পানি এমনিতেই কমে যায় । ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নেমে যায়। যে কারণে পানি ব্যবহারে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তাহলে এ সব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে।