পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ নেই, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কাঠ পোড়ানোর অভিযোগ
ঘুষ ও প্রভাব খাটিয়ে চলছে হরিণাকুণ্ডুর ১৮টি ইটভাটা
- আপলোড টাইম : ১১:৩৭:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ মার্চ ২০২৪
- / ১৪৭ বার পড়া হয়েছে
ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় ১৮টি ইটভাটা অবৈধ। এগুলোর না আছে পরিবেশ অধিদপ্তরের সনদ, না আছে প্রশাসনিক অনুমোদন। ঘাটে ঘাটে অর্থ দিয়ে এসব ইটভাটা বছরের পর বছর চলে আসলেও নীরব জেলা প্রশাসন। তবে মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে ঘুষের রেট বৃদ্ধি করা হয় এমন অভিযোগ অহরহ। ইটভাটাগুলো অবৈধ হওয়ার পরও কীভাবে চলছে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠলেও মাথা ব্যথা নেই জেলা কিংবা হরিণাকুণ্ডু উপজেলা প্রশাসনের। তবে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে ২১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রভাব খাটিয়ে তারা অনেকটা গায়ের জোরে ইটভাটা পরিচালনা করছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় মোট ১৮টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ৮ নম্বর চাঁদপুর ইউনিয়নে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে গড়ে উঠেছে ৫টি অবৈধ ইটভাটা। সড়কের পাশে বাড়িঘর ও ফসলি জমির মধ্যে এমএসবি ব্রিকস, বাবুল হোসেন খানের আরএসবি ব্রিকস, আলমগীর হোসেনের আনিশা অ্যান্ড তানিশা বিক্রস, শিতলীপাড়া হাকিমপুর এলাকায় মিলন অ্যান্ড জান্নাত ব্রিকস ও পারমথুরাপুর এলাকায় এজেবি ব্রিকস নামে ইটভাটা রয়েছে। এছাড়া হরিণাকুণ্ডু পৌর মেয়রসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির ইটভাটা চলছে অভৈধভাবে। যেগুলোর অধিকাংশরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স।
ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, আম, জাম, রেইনট্রি, কদম, কাঁঠাল, খেঁজুর ও নারকেলসহ সবুজ বনায়ন ধ্বংস করে শত শত মণ বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের কাঠ মজুদ করা হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফলে চুল্লি থেকে অনবরত বের হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। এছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে স্তুপ করা হয়েছে। স্থানীয় কৃষক মুকুল জোয়ার্দার জানান, খেতের পাশে ইটভাটা গড়ে ওঠায় ধুলোবালিতে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটার নিজস্ব মাটিভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে প্রায়ই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা।
চাঁদপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই ইটভাটায় দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কালো ধোঁয়ার কারণে আমার বৃদ্ধ মা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। আক্কাস আলী নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, এই সকল অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ না করলে পরিবেশ বিপণ্ন হবে। এসব বিষয় নিয়ে হরিণাকুণ্ডু ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, শুধু ঝিনাইদহে না, সারা দেশেই অবৈধ উপায়ে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। ফলে তার ইটভাটারও কোনো বৈধ কাগজ নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ইটভাটা মালিক জানান, ‘পদে পদে আমাদের টাকা দিতে হচ্ছে। প্রথমে ভাটা প্রতি ২০ হাজার ও পরে আড়াই লাখ টাকা করে চাঁদা ধরা হয়। এই টাকা কার পকেটে উঠছে তা জানেন না সাধারণ ইটভাটা মালিকরা।’ অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান জানান, হরিণাকুণ্ডু উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি ভাটায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি। হরিণাকুণ্ডুতে ১৮টি ইটভাটা রয়েছে, যাদের কারোরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে অভিযান পরিচালিত করতে হয় বলে বিলম্ব হচ্ছে।