মৌসুমের আগেই ঊর্ধ্বমুখী ডেঙ্গু
- আপলোড টাইম : ০৯:৪২:৪৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ মার্চ ২০২৪
- / ৮৫ বার পড়া হয়েছে
মৌসুমের আগেই এ বছর মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুর গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। এবারো দেশ বিপজ্জনক ডেঙ্গু সংক্রমণের মুখে পড়তে যাচ্ছে। এমন ইঙ্গিত আগেই দিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যেও মিলছে সেই আভাস। এতে চলতি বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের শঙ্কা নিয়ে মানুষের মধ্যে আতঙ্কও বেড়েছে। গেল বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর শীর্ষে ছিল বাংলাদেশ। ডেঙ্গুর বিস্তার ছড়িয়েছিল ৬৪ জেলায়ই। তবে ২০২৩ সালের আগের ২২ বছরে এ জ্বরে মারা যায় ৮৬৮ জন। সেসব রেকর্ড ভেঙে যায় ১ বছরেই। প্রাণ গেছে ১ হাজার ৭০৫ জনের। চলতি বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ১ হাজার ৫৪৬ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ২০ জনের। অথচ এক বছর আগে এই সময় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭৬৬ ও মৃতের সংখ্যা ছিল ৯। মৌসুমের আগে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানায়। কিন্তু প্রতি বছরই এ সংক্রমণ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে।
এদিকে মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমার নিশ্চয়তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। গত ১৭ জানুয়ারি রোগ প্রতিরোধবিষয়ক জাতীয় কমিটির সভাশেষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ডেঙ্গুর সংক্রমণ কমার নিশ্চয়তা দিতে অপারগতার কথা জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সারা বাংলাদেশে এটি সংক্রামিত হয়ে গেছে। এটার পরিমাণ কমে যাবে সেটা বলা যাবে না। কীটতত্ত্ববিদরাও বলছেন, এডিস ও কিউলেক্স মশার চরিত্র বদলে গেছে। ফলে সারা বছরই এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু হবে। এটি আর শূন্যতে নামানো যাবে না। সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারের যে ধরনের প্রস্তুতি থাকা দরকার তা নেই।
স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ডেঙ্গু নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সতর্ক রয়েছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের নিয়ে খুব শিগগিরই একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি ‘ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক বৈঠকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার জানান, এখন ঢাকায় ৯৯ শতাংশ কিউলেক্স মশা আছে, আর ১ শতাংশ এডিস মশা আছে। এই ১ শতাংশ এডিস মশাই জনস্বাস্থ্যে সমস্যা তৈরি করে। তাই কিউলেক্স মশা ও ডেঙ্গু মশার নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপের বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা করে ফেলতে হবে। আর এ কার্যক্রমের সঙ্গে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া এডিস মশা নিধন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আলাদা ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। যতদিন সাধারণ মশার সঙ্গে এডিস মশাকে মেশানো হবে ততদিন দেশ থেকে ডেঙ্গু যাবে না। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আলাদা ব্যবস্থাপনা করা দরকার। সিটি করপোরেশনকে মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচিকে ভাগ করে ফেলতে হবে। সেখানে থাকবে ডেঙ্গু ম্যানেজমেন্ট ও কিউলেক্স ম্যানেজমেন্ট। ৪৩ শতাংশ ডেঙ্গুর প্রজনন হয় সুউচ্চ ভবনের বেসমেন্টে। ২৩ শতাংশ ডেঙ্গুর প্রজনন হয় নির্মাণাধীন ভবনের বেসমেন্টে। জনগণকে সম্পৃক্ত করা না গেলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।
এদিকে গত ৪ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সচিবালয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগে ডেঙ্গুবিষয়ক এক সভায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ১০টি নির্দেশনা দেয়া হয়। যাতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কথা বলা হয়েছে বেশি। ডেঙ্গু নিয়ে সবার মধ্যে একটা ঢিলেমি ভাব আছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি এত ভয়াবহ হবার পরও মানুষের মধ্যে একটা ঢিলেমি ভাব আছে। বর্তমানে করোনার সংক্রমণ যে বাড়ছে সে বিষয়ে মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। ডেঙ্গু নিয়েও এই অসচেতনতা আছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সবার আগে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমাদের দেশে এখন চারপাশে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। যেসব জায়গায় নির্মাণ কর্মকাণ্ড চলছে, সেসব জায়গায় অপরিচ্ছন্ন থাকে, পানি জমে থাকে। নির্মাণাধীন ভবনে যাতে পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। আবার মশা মারার ওষুধ দিতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ মনে করেন সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোকে উচ্চ-মধ্য-নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁকি নেই এই চার ভাগে ভাগ করে কাজ করলে সুফল আসবে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় প্রচুর কাজ করতে হবে। মধ্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায়ও অনেক কাজ করতে হবে। নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোয় একটু কম কাজ করলেও হবে। তবে লোক দেখানো অভিযান নয়, মশার প্রজনন ধ্বংসে দরকার আন্তরিকতা সেই সঙ্গে জনসচেতনতাও দরকার।