ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউ’র চূড়ান্ত মূল্যায়ন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪
  • / ১০২ বার পড়া হয়েছে

২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মিশন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার যার মধ্যে সমাবেশ, আন্দোলন এবং বক্তৃতা অন্তর্ভুক্ত- এগুলো প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলেও বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা সীমাবদ্ধ ছিল। বিচারিক কার্যক্রম এবং গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা ভোটারদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। মিডিয়া এবং সুশীল সমাজও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল না, সমালোচনামূলক পাবলিক বিতর্কও সীমিত ছিল। ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাংবিধানিক সময়রেখা মেনে ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দল টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। এই নির্বাচন ছিল একটি অত্যন্ত মেরূকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে পরিচালিত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার জোট শরিকরা নির্বাচন বয়কট করায় সত্যিকারের প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। বিরোধীরা সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

প্রাক-নির্বাচনকালীন সময়ে বিরোধী দলের ধারাবাহিক বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ব্যাপক সহিংসতা ২০২৩ সালের ২৮শে অক্টোবর গুরুতর রূপ নেয়। পরবর্তীতে বিএনপি নেতাদের গণগ্রেপ্তার ও আটকের ফলে দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়।
নির্বাচনের পুরো সময় বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ, আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়। গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষমতা বিএনপি’র পক্ষে অসম্ভব ছিল কারণ প্রায় সব সিনিয়র নেতৃৃত্বকে কারাবন্দি করা হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠেকাতে ফৌজদারি অভিযোগ গঠন ব্যাপকভাবে একটি কৌশলের অংশ হিসেবে অনুভূত হয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক আচরণের জন্য মৌলিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার অপরিহার্য, যা বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বলা আছে। কিন্তু এই অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করা হয় আইন দ্বারা যা অযথা বাক স্বাধীনতার অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে।

সমান ভোটাধিকারের নীতিকে পুরোপুরি সম্মান করা হয়নি। বিদ্যমান আসনের সীমানা নির্ধারণের ভিত্তিতে সংসদীয় আসনপ্রতি ভোটার সংখ্যায় তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ন্যূনতম আইনি প্রয়োজনীয়তা মেনে চলে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ তার আইনি আদেশের এখতিয়ারের মধ্যে ছিল এবং লজিস্টিক প্রস্তুত ছিল। তবে কমিশনের ব্যাপক ক্ষমতা থাকলেও আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। তাই তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়নি বলে মনে করে কিছু স্টেকহোল্ডার। তাদের ধারণা, ভোটদান এবং গণনা প্রক্রিয়ার সময় কমিশনের স্বাধীন মর্যাদা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করা হয়নি। স্টেকহোল্ডারদের মতে, ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে যার ফলে নিয়মিত আপডেট এবং ডেটা মিলেছে। ১লা জানুয়ারি ২০২৩’র মধ্যে যারা ১৮ বছরে পৌঁছায়নি তারা এই নির্বাচনে ভোট দিতে অযোগ্য ছিলেন।

ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালে ১৮ বছর বয়সে পৌঁছেছেন এমন ব্যক্তিদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর অযোগ্যতার কিছু কারণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অযথাই প্রার্থীদের অধিকারকে সীমিত করা হয়। নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশ যেমন আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন ঘটে। যার ফলে একটি সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অভাব ছিল। নির্বাচনী প্রচারের সময়কাল অতিমাত্রায় নির্দেশমূলক আইনি বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগই ছিল একমাত্র রাজনৈতিক দল যে বৃহৎ প্রচারর্ যালিসহ যেকোনো উল্লেখযোগ্য জনসাধারণের কার্যক্রম সংঘটিত করতে পেরেছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউ’র চূড়ান্ত মূল্যায়ন

আপলোড টাইম : ০৩:০৪:১৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ মার্চ ২০২৪

২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের ফলাফল সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মিশন। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচন কিছু গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মানদণ্ড পূরণ করতে পারেনি। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার যার মধ্যে সমাবেশ, আন্দোলন এবং বক্তৃতা অন্তর্ভুক্ত- এগুলো প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য হলেও বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রে তা সীমাবদ্ধ ছিল। বিচারিক কার্যক্রম এবং গণগ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা মারাত্মকভাবে সীমিত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর আসন ভাগাভাগি চুক্তি এবং আওয়ামী লীগের নিজস্ব প্রার্থী ও দলের সঙ্গে যুক্ত ‘স্বতন্ত্র প্রার্থীদের’ মধ্যে প্রতিযোগিতা ভোটারদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয়নি। মিডিয়া এবং সুশীল সমাজও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সহায়ক ছিল না, সমালোচনামূলক পাবলিক বিতর্কও সীমিত ছিল। ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাংবিধানিক সময়রেখা মেনে ২০২৪ সালের ৭ই জানুয়ারি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দল টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। এই নির্বাচন ছিল একটি অত্যন্ত মেরূকৃত রাজনৈতিক পরিবেশে পরিচালিত। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও তার জোট শরিকরা নির্বাচন বয়কট করায় সত্যিকারের প্রতিযোগিতার অভাব ছিল। বিরোধীরা সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচন পরিচালনায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানিয়েছিল, যা প্রত্যাখ্যান করা হয়।

প্রাক-নির্বাচনকালীন সময়ে বিরোধী দলের ধারাবাহিক বিক্ষোভের অংশ হিসেবে ব্যাপক সহিংসতা ২০২৩ সালের ২৮শে অক্টোবর গুরুতর রূপ নেয়। পরবর্তীতে বিএনপি নেতাদের গণগ্রেপ্তার ও আটকের ফলে দেশের নাগরিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়।
নির্বাচনের পুরো সময় বিরোধী দলগুলোর সমাবেশ, আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতা কঠোরভাবে সীমিত করা হয়। গ্রেপ্তার এড়িয়ে যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষমতা বিএনপি’র পক্ষে অসম্ভব ছিল কারণ প্রায় সব সিনিয়র নেতৃৃত্বকে কারাবন্দি করা হয়। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যেকোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ঠেকাতে ফৌজদারি অভিযোগ গঠন ব্যাপকভাবে একটি কৌশলের অংশ হিসেবে অনুভূত হয়েছে। বিশ্বাসযোগ্য গণতান্ত্রিক আচরণের জন্য মৌলিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার অপরিহার্য, যা বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধান এবং আন্তর্জাতিক চুক্তিতে বলা আছে। কিন্তু এই অধিকারগুলো ক্ষুণ্ন করা হয় আইন দ্বারা যা অযথা বাক স্বাধীনতার অধিকারকে সীমাবদ্ধ করে।

সমান ভোটাধিকারের নীতিকে পুরোপুরি সম্মান করা হয়নি। বিদ্যমান আসনের সীমানা নির্ধারণের ভিত্তিতে সংসদীয় আসনপ্রতি ভোটার সংখ্যায় তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ন্যূনতম আইনি প্রয়োজনীয়তা মেনে চলে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ তার আইনি আদেশের এখতিয়ারের মধ্যে ছিল এবং লজিস্টিক প্রস্তুত ছিল। তবে কমিশনের ব্যাপক ক্ষমতা থাকলেও আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। তাই তারা একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দিতে সক্ষম হয়নি বলে মনে করে কিছু স্টেকহোল্ডার। তাদের ধারণা, ভোটদান এবং গণনা প্রক্রিয়ার সময় কমিশনের স্বাধীন মর্যাদা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত করা হয়নি। স্টেকহোল্ডারদের মতে, ভোটার নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে যার ফলে নিয়মিত আপডেট এবং ডেটা মিলেছে। ১লা জানুয়ারি ২০২৩’র মধ্যে যারা ১৮ বছরে পৌঁছায়নি তারা এই নির্বাচনে ভোট দিতে অযোগ্য ছিলেন।

ফলস্বরূপ, ২০২৩ সালে ১৮ বছর বয়সে পৌঁছেছেন এমন ব্যক্তিদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানোর অযোগ্যতার কিছু কারণ অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অযথাই প্রার্থীদের অধিকারকে সীমিত করা হয়। নির্বাচনী প্রচারণা সমাবেশ যেমন আন্দোলন এবং বক্তৃতার স্বাধীনতার ওপর ব্যাপক সীমাবদ্ধতার প্রতিফলন ঘটে। যার ফলে একটি সম্পূর্ণ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের অভাব ছিল। নির্বাচনী প্রচারের সময়কাল অতিমাত্রায় নির্দেশমূলক আইনি বিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল। আওয়ামী লীগই ছিল একমাত্র রাজনৈতিক দল যে বৃহৎ প্রচারর্ যালিসহ যেকোনো উল্লেখযোগ্য জনসাধারণের কার্যক্রম সংঘটিত করতে পেরেছে।