ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার ঘোষণা; আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৪৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • / ১১৬ বার পড়া হয়েছে

দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বহু আগে। মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাভোগী ছাড়া দেশের প্রায় সব মানুষ মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রভাবের শিকার। এ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, মজুদদার চক্র বা সিন্ডেকেটের সংশ্লিষ্টতা ও কারসাজি আছে এমনটা বলা হয়। কিন্তু এ চক্র ভাঙা বা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তেমন কোনো নজির খুব একটা দেখা যায়নি। সম্প্রতি নতুন করে ক্ষমতা নিয়ে সরকার এখন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে। সরকারের শীর্ষ তিন নেতা এ বিষয়ে কথা বলেছেন। সর্বশেষ বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাজারের অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার সবরকম ব্যবস্থা নেবে। এর আগেও মন্ত্রীদের এমন ঘোষণা এসেছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি এ মুহূর্তে স্থিতিশীল রয়েছে বলে সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন। কিন্তু বাজারে গেলে তা বোঝা যায় না। সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, চিনির দাম নিয়ে বাজার নাড়াচাড়া খেয়েছে। অন্যসব জিনিসের দামও সর্বোচ্চে।
মাস ছয়েক আগে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপে দেখা গিয়েছিল, ৮৪ শতাংশ মানুষের জীবনে দ্রব্যমূল্যের আঘাত পড়েছে মারাত্মকভাবে। এছাড়া কোনো না কোনোভাবে দ্রব্যমূল্যের আঘাত পড়েছে ১৩ শতাংশ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। অর্থাৎ শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অথচ সরকারের কোনো কথা বা কাজে মানুষের এই দুর্ভোগের স্বীকৃতি নেই।
উল্লিখিত জরিপে এক প্রশ্নের জবাবে ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছিলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভুল পথে এগোচ্ছে। মাত্র ২৫ শতাংশের মত ছিল, দেশ ঠিক পথেই যাচ্ছে। আমাদের ধারণা, সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু নয়। জবাবদিহির অনুপস্থিতিতে শুধু অর্থনীতি নয়, এক অরাজকতা ছাড়া আর কোনো কিছুই সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। বিগত সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে গেলে তারা জনগণের জন্য আরো দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। সেই অবস্থান থেকে সরে আসায় মানুষ কিছুটা আশাবাদী হয়েছে। তারা ভাবছে, গত ১৫ বছরে যাদের বিরুদ্ধে লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবার সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে নিজেদের ভাবমর্যাদা উন্নয়নে আন্তরিক চেষ্টা করবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা সেরকম নয়। কারণ, সরকারের শীর্ষ নেতারা সিন্ডিকেটের নামে সেই পুরোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিহ্নিত করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকার সেইসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যাদের গুদামে জমিয়ে রাখা পচা পেঁয়াজ ফেলে দিতে হয়েছে। ইঙ্গিতটি বিএনপির প্রতি। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা, সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দ্রব্যমূল্যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে মজুদদার ও সিন্ডিকেটকে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দিচ্ছে বিএনপি। তাদের কোনো অবস্থাতে ছাড় দেয়া হবে না। মানুষের মনে যে সামান্য আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, এসব বক্তব্য সেটি নষ্ট করা ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না। সরকারের আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে শুধু। কথায় আছে, শিকারি বিড়াল গোঁফ দেখে চেনা যায়। ১৫ বছরে তেমনটা দেখা যায়নি।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বাজার সিন্ডিকেট ভাঙার ঘোষণা; আশাবাদী হওয়ার সুযোগ কম

আপলোড টাইম : ০৩:৪৩:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দ্রব্যমূল্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে বহু আগে। মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাভোগী ছাড়া দেশের প্রায় সব মানুষ মূল্যস্ফীতির বিরূপ প্রভাবের শিকার। এ মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মুনাফালোভী ব্যবসায়ী, মজুদদার চক্র বা সিন্ডেকেটের সংশ্লিষ্টতা ও কারসাজি আছে এমনটা বলা হয়। কিন্তু এ চক্র ভাঙা বা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার তেমন কোনো নজির খুব একটা দেখা যায়নি। সম্প্রতি নতুন করে ক্ষমতা নিয়ে সরকার এখন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে। সরকারের শীর্ষ তিন নেতা এ বিষয়ে কথা বলেছেন। সর্বশেষ বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাজারের অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে সরকার সবরকম ব্যবস্থা নেবে। এর আগেও মন্ত্রীদের এমন ঘোষণা এসেছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি এ মুহূর্তে স্থিতিশীল রয়েছে বলে সরকারের দায়িত্বশীলরা বলছেন। কিন্তু বাজারে গেলে তা বোঝা যায় না। সম্প্রতি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, চিনির দাম নিয়ে বাজার নাড়াচাড়া খেয়েছে। অন্যসব জিনিসের দামও সর্বোচ্চে।
মাস ছয়েক আগে দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) জরিপে দেখা গিয়েছিল, ৮৪ শতাংশ মানুষের জীবনে দ্রব্যমূল্যের আঘাত পড়েছে মারাত্মকভাবে। এছাড়া কোনো না কোনোভাবে দ্রব্যমূল্যের আঘাত পড়েছে ১৩ শতাংশ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে। অর্থাৎ শতকরা ৯৭ ভাগ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অথচ সরকারের কোনো কথা বা কাজে মানুষের এই দুর্ভোগের স্বীকৃতি নেই।
উল্লিখিত জরিপে এক প্রশ্নের জবাবে ৭০ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছিলেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভুল পথে এগোচ্ছে। মাত্র ২৫ শতাংশের মত ছিল, দেশ ঠিক পথেই যাচ্ছে। আমাদের ধারণা, সরকারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠু নয়। জবাবদিহির অনুপস্থিতিতে শুধু অর্থনীতি নয়, এক অরাজকতা ছাড়া আর কোনো কিছুই সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না। বিগত সরকারের বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সিন্ডিকেট ভাঙতে গেলে তারা জনগণের জন্য আরো দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে। সেই অবস্থান থেকে সরে আসায় মানুষ কিছুটা আশাবাদী হয়েছে। তারা ভাবছে, গত ১৫ বছরে যাদের বিরুদ্ধে লুটপাট, অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবার সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়ে নিজেদের ভাবমর্যাদা উন্নয়নে আন্তরিক চেষ্টা করবে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা সেরকম নয়। কারণ, সরকারের শীর্ষ নেতারা সিন্ডিকেটের নামে সেই পুরোনো রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চিহ্নিত করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সরকার সেইসব সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে যাদের গুদামে জমিয়ে রাখা পচা পেঁয়াজ ফেলে দিতে হয়েছে। ইঙ্গিতটি বিএনপির প্রতি। আওয়ামী লীগের দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা, সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দ্রব্যমূল্যে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে মজুদদার ও সিন্ডিকেটকে পৃষ্ঠপোষকতা ও মদদ দিচ্ছে বিএনপি। তাদের কোনো অবস্থাতে ছাড় দেয়া হবে না। মানুষের মনে যে সামান্য আশাবাদ তৈরি হয়েছিল, এসব বক্তব্য সেটি নষ্ট করা ছাড়া আর কোনো কাজে আসবে না। সরকারের আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে শুধু। কথায় আছে, শিকারি বিড়াল গোঁফ দেখে চেনা যায়। ১৫ বছরে তেমনটা দেখা যায়নি।