ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসএসসি পাস করেই সর্বরোগের ডাক্তার গাংনীর সুজন আলী, নিয়মিত করেন চেম্বার

ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু, ভুয়া চিকিৎসকের দুই বছর কারাদণ্ড

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:৪৯:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৫০ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, গাংনী:
ভোকেশনাল থেকে এসএসসি পাস করেছেন। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতো নেই কোনো ডিগ্রি। তবে গাংনী উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সুজন আলী (২৪) সর্বরোগের চিকিৎসক। তার অপচিকিৎসায় গত বৃহস্পতিবার এক শিশুর মৃত্যু হয়। একদিন বয়সী শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ভুয়া চিকিৎসক সুজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহম্মদপুর গ্রামের একটি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে তাকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট ও গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম। এসময় সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকায় হালিমা ফার্মেসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুল আল মারুফ ও গাংনী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা খাতুন গত বুধবার সকালে বামন্দীর একটি ক্লিনিকে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেন। ক্লিনিক থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। পরে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে মোহাম্মদপুর গ্রামের হালিমা ফার্মেসিতে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যাকমো চিকিৎসক শরিফুল ইসলামের উদ্দেশে নিয়ে যান। ওই ফার্মেসির চিকিৎসক চেম্বারে শরিফুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় তার ছোট ভাই সুজন আলী শিশু রোগীদের চিকিৎসা দেন।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ভোকেশনাল শাখায় এসএসসি পাশ করেই চিকিৎসক বনে গেছেন সুজন হোসেন। তিনি এলাকার সর্বরোগের ডাক্তার নামে পরিচিত। মৃত শিশুটির বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা নাজমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের শিশু অসুস্থ হওয়ায় ডাক্তার শরিফুল ইসলামের কাছে নিয়ে যাই। এসময় সেখানে শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে চেম্বার তার ছোট ভাই সুজন বসে রোগী দেখছিল। আমাদের শিশুটিকেও দেখে সে নাবাসেট, অ্যাম্বুলিট ও পালমলিন নামের তিনটি সিরাপ লিখে দেয়। কোনো সমস্যা হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলে। বাড়িতে এসে ওষুধগুলো খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিশু আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে আমরা সঙ্গে সঙ্গে বামন্দী ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে কুষ্টিয়া নেওয়ার পথে মারা যায় সে।’
এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যার দিকে মোহাম্মদ গ্রামে অবস্থিত সরকারি অনুমোদনহীন ওই ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক সুজন আলীকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ভুয়া চিকিৎসক সুজন আলীকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গাংনী থানায় নেওয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম বলেন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) শরিফুল ইসলাম নিজ গ্রাম মোহাম্মদপুরে রাবেয়া ফার্মেসি ও চেম্বার খুলেছেন। এলাকার মানুষের কাছে শিশু বিশেষজ্ঞ নামে পরিচিত শরিফুল ইসলাম। চিকিৎসক শরিফুলের অনুপস্থিতিতে তার ছোট ভাই সুজন শিশু থেকে শুরু করে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে জানতে পারি। পরে বৃহস্পতিবার সকালের পার্শ্ববর্তী বাওট গ্রামের একটি শিশু রোগীকে তিনি অপচিকিৎসা দিলে শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় ওই চেম্বারে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডাক্তার সুজনকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ বসিয়ে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

এসএসসি পাস করেই সর্বরোগের ডাক্তার গাংনীর সুজন আলী, নিয়মিত করেন চেম্বার

ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু, ভুয়া চিকিৎসকের দুই বছর কারাদণ্ড

আপলোড টাইম : ১২:৪৯:০৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রতিবেদক, গাংনী:
ভোকেশনাল থেকে এসএসসি পাস করেছেন। চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতো নেই কোনো ডিগ্রি। তবে গাংনী উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে সুজন আলী (২৪) সর্বরোগের চিকিৎসক। তার অপচিকিৎসায় গত বৃহস্পতিবার এক শিশুর মৃত্যু হয়। একদিন বয়সী শিশু মৃত্যুর ঘটনায় ভুয়া চিকিৎসক সুজনকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মোহম্মদপুর গ্রামের একটি ক্লিনিকে অভিযান চালিয়ে তাকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রট ও গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম। এসময় সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকায় হালিমা ফার্মেসি নামের একটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুল আল মারুফ ও গাংনী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) তৌহিদুল ইসলাম।
জানা গেছে, গাংনী উপজেলার বাওট গ্রামের মনিরুল ইসলামের স্ত্রী নাজমা খাতুন গত বুধবার সকালে বামন্দীর একটি ক্লিনিকে একটি কন্যা শিশুর জন্ম দেন। ক্লিনিক থেকে বিকেলে বাড়ি ফিরে আসেন তিনি। পরে বৃহস্পতিবার সকালের দিকে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়লে মোহাম্মদপুর গ্রামের হালিমা ফার্মেসিতে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্যাকমো চিকিৎসক শরিফুল ইসলামের উদ্দেশে নিয়ে যান। ওই ফার্মেসির চিকিৎসক চেম্বারে শরিফুল ইসলাম উপস্থিত না থাকায় তার ছোট ভাই সুজন আলী শিশু রোগীদের চিকিৎসা দেন।
স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ভোকেশনাল শাখায় এসএসসি পাশ করেই চিকিৎসক বনে গেছেন সুজন হোসেন। তিনি এলাকার সর্বরোগের ডাক্তার নামে পরিচিত। মৃত শিশুটির বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা নাজমা খাতুন বলেন, ‘আমাদের শিশু অসুস্থ হওয়ায় ডাক্তার শরিফুল ইসলামের কাছে নিয়ে যাই। এসময় সেখানে শরিফুল ইসলামের পরিবর্তে চেম্বার তার ছোট ভাই সুজন বসে রোগী দেখছিল। আমাদের শিশুটিকেও দেখে সে নাবাসেট, অ্যাম্বুলিট ও পালমলিন নামের তিনটি সিরাপ লিখে দেয়। কোনো সমস্যা হলে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য বলে। বাড়িতে এসে ওষুধগুলো খাওয়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শিশু আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে আমরা সঙ্গে সঙ্গে বামন্দী ক্লিনিকে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। পরে কুষ্টিয়া নেওয়ার পথে মারা যায় সে।’
এ ঘটনায় উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সন্ধ্যার দিকে মোহাম্মদ গ্রামে অবস্থিত সরকারি অনুমোদনহীন ওই ফার্মেসিতে অভিযান চালিয়ে ভুয়া চিকিৎসক সুজন আলীকে আটক করেন। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ভুয়া চিকিৎসক সুজন আলীকে দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে গাংনী থানায় নেওয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও গাংনী উপজেলা সহকারী কমিশন (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম বলেন, গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (ডিএমএফ) শরিফুল ইসলাম নিজ গ্রাম মোহাম্মদপুরে রাবেয়া ফার্মেসি ও চেম্বার খুলেছেন। এলাকার মানুষের কাছে শিশু বিশেষজ্ঞ নামে পরিচিত শরিফুল ইসলাম। চিকিৎসক শরিফুলের অনুপস্থিতিতে তার ছোট ভাই সুজন শিশু থেকে শুরু করে সব ধরনের রোগীর চিকিৎসা দিয়ে থাকেন বলে জানতে পারি। পরে বৃহস্পতিবার সকালের পার্শ্ববর্তী বাওট গ্রামের একটি শিশু রোগীকে তিনি অপচিকিৎসা দিলে শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় ওই চেম্বারে অভিযান চালিয়ে ভুয়া ডাক্তার সুজনকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ বসিয়ে তাকে দুই বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।