ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দামুড়হুদার সুবুলপুর ও কাদিপুরে একই দিনে দুই গৃহবধূর আত্মহত্যা

দুই পরিবারেরই দাবি, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ২৯ বার পড়া হয়েছে

প্রতিবেদক, দামুড়হুদা:
দামুড়হুদা উপজেলার সুবুলপুর গ্রাম থেকে চাঁদনি খাতুন (২১) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে তাঁর ঝুলন্ত লাশ দেখে পরিবারের সদস্যরা পুলিশে খবর দেয়। গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে দামুড়হুদা মডেল থানা-পুলিশ ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়। চাঁদনি খাতুন মেহেরপুর জেলার মোনাখালি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে। চাঁদনির বাবার দাবি, তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।

জানা গেছে, মেহেরপুরের মোনাখালি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে চাঁদনি খাতুনের সাথে প্রায় তিন বছর আগে দামুড়হুদা উপজেলার সুবুলপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে আলামিনের বিয়ে হয়। পরে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। এই সন্তান হওয়ার পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ীর সাথে চাঁদনির মাঝে কলহ হতো।

বাবর আলী বলেন, ‘আমার মেয়েকে এখানে বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। জোর করেই মেয়ে তারা নিয়েছে। আর বিয়ের পর থেকে জামাই ও পরিবারের লোকজনের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকত। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। আমার মেয়েকে তারা হত্যা করেছে। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’ চাঁদনির শাশুড়ী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের সাথে বউমার কোনো ঝামেলা নাই। চাঁদনির একটু ওপর দৃষ্টি ছিল। তার কারণেই গলাই দড়ি দিতে পারে। আমাদের কোনো দোষ নেই।’

চাঁদনির স্বামী আলামিন বলেন, ‘আমি আলমডাঙ্গা উপজেলার উশলামপুর এসএস ব্রিকসে কাজ করি। একমাস পর পর বাড়ি আসি। আমি শুক্রবার সকালে কথা বলেছিলাম তখন বলল সবাই ভালো আছে। এর মধ্যে কী হলো আমি কিছুই জানি না।’

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শেখ মহাবুবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে এমন খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গায় সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এটি হত্যা না আত্মহত্যা এটি বলা যাচ্ছে না।’

এদিকে, গতকাল শনিবার রাত সাতটার দিকে দামুড়হুদার কাদিপুর গ্রামে শ্বশুড় বাড়ি থেকে সুখজান খাতুন (২০) নামের এক নববধূর লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য সুখজান খাতুনের লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত সুখজান কাদিপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে ইকবলের স্ত্রী ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ঝাঝরি গ্রামের কুদ্দুসের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ মাস পূর্বে ইকবালের সঙ্গে পারিবারিকভবে সুখজানের বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে তারা সুখেই ছিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল থাকলেও মাঝে মাঝে ইকবাল তার স্ত্রী সুখজানের কাছে টাকা দাবি করলে উভয়ের মধ্যে বাগবিতন্ডা হতেও শুরু করে। এরই জেরে সুখজান আত্মহত্যা করতে পারে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। তবে সুখজানের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানার, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ইকবালের বাড়ির লোকজন চিৎকার করলে সবাই ছুটে যায়। এসময় সুখজানকে কয়েকজন ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করছিল। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে সুখজানের লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত সুখজানের চাচাতো ভাই জুড়ন আলী বলেন, ‘বোনের বিয়ে দেওয়ার পর বিভিন্ন সময় ইকবাল টাকা চাইতো। কিছুদিন আগেও ইকবাল দেড় লাখ টাকা দাবি করলে আমরা এটা দিতে পারিনি। তার কারণে আমার বোনকে তারা মেরে ফেলতে পরে। এর সুষ্ঠু বিচার চায়।’

সুখজানের মা সেলিনা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই জামাই বিভিন্ন জিনিস ও টাকা চাইতো, আমি সব দিয়েছি। আবার কয়েকদিন আগে দেড় লাখ টাকা চেয়েছে, আমি এক লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছি। তারপরও আমার মেয়েকে মেরে ফেললো।’
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) হিমেল রানা বলেন, কাদিপুর গ্রামে এক নববধূ আত্মহত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ হয়নি। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

দামুড়হুদার সুবুলপুর ও কাদিপুরে একই দিনে দুই গৃহবধূর আত্মহত্যা

দুই পরিবারেরই দাবি, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে

আপলোড টাইম : ১০:৫৯:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রতিবেদক, দামুড়হুদা:
দামুড়হুদা উপজেলার সুবুলপুর গ্রাম থেকে চাঁদনি খাতুন (২১) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে তাঁর ঝুলন্ত লাশ দেখে পরিবারের সদস্যরা পুলিশে খবর দেয়। গতকাল শনিবার সকাল ৯টার দিকে দামুড়হুদা মডেল থানা-পুলিশ ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে পাঠায়। চাঁদনি খাতুন মেহেরপুর জেলার মোনাখালি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে। চাঁদনির বাবার দাবি, তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।

জানা গেছে, মেহেরপুরের মোনাখালি গ্রামের বাবর আলীর মেয়ে চাঁদনি খাতুনের সাথে প্রায় তিন বছর আগে দামুড়হুদা উপজেলার সুবুলপুর গ্রামের মোবারকের ছেলে আলামিনের বিয়ে হয়। পরে তাদের একটি ছেলে সন্তান হয়। এই সন্তান হওয়ার পর থেকেই স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ীর সাথে চাঁদনির মাঝে কলহ হতো।

বাবর আলী বলেন, ‘আমার মেয়েকে এখানে বিয়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছা ছিল না। জোর করেই মেয়ে তারা নিয়েছে। আর বিয়ের পর থেকে জামাই ও পরিবারের লোকজনের সাথে ঝগড়া লেগেই থাকত। আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে না। আমার মেয়েকে তারা হত্যা করেছে। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’ চাঁদনির শাশুড়ী মমতাজ বেগম বলেন, ‘আমাদের সাথে বউমার কোনো ঝামেলা নাই। চাঁদনির একটু ওপর দৃষ্টি ছিল। তার কারণেই গলাই দড়ি দিতে পারে। আমাদের কোনো দোষ নেই।’

চাঁদনির স্বামী আলামিন বলেন, ‘আমি আলমডাঙ্গা উপজেলার উশলামপুর এসএস ব্রিকসে কাজ করি। একমাস পর পর বাড়ি আসি। আমি শুক্রবার সকালে কথা বলেছিলাম তখন বলল সবাই ভালো আছে। এর মধ্যে কী হলো আমি কিছুই জানি না।’

দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) শেখ মহাবুবুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছে এমন খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গায় সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছি। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত এটি হত্যা না আত্মহত্যা এটি বলা যাচ্ছে না।’

এদিকে, গতকাল শনিবার রাত সাতটার দিকে দামুড়হুদার কাদিপুর গ্রামে শ্বশুড় বাড়ি থেকে সুখজান খাতুন (২০) নামের এক নববধূর লাশ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। পরে ময়নাতদন্তের জন্য সুখজান খাতুনের লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত সুখজান কাদিপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিনের ছেলে ইকবলের স্ত্রী ও চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বেগমপুর ইউনিয়নের ঝাঝরি গ্রামের কুদ্দুসের মেয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১০ মাস পূর্বে ইকবালের সঙ্গে পারিবারিকভবে সুখজানের বিবাহ হয়। বিয়ের পর থেকে তারা সুখেই ছিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মিল থাকলেও মাঝে মাঝে ইকবাল তার স্ত্রী সুখজানের কাছে টাকা দাবি করলে উভয়ের মধ্যে বাগবিতন্ডা হতেও শুরু করে। এরই জেরে সুখজান আত্মহত্যা করতে পারে বলে স্থানীয়রা ধারণা করছেন। তবে সুখজানের পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানার, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ইকবালের বাড়ির লোকজন চিৎকার করলে সবাই ছুটে যায়। এসময় সুখজানকে কয়েকজন ধরে হাঁটানোর চেষ্টা করছিল। এর কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে সুখজানের লাশ সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
নিহত সুখজানের চাচাতো ভাই জুড়ন আলী বলেন, ‘বোনের বিয়ে দেওয়ার পর বিভিন্ন সময় ইকবাল টাকা চাইতো। কিছুদিন আগেও ইকবাল দেড় লাখ টাকা দাবি করলে আমরা এটা দিতে পারিনি। তার কারণে আমার বোনকে তারা মেরে ফেলতে পরে। এর সুষ্ঠু বিচার চায়।’

সুখজানের মা সেলিনা বলেন, ‘বিয়ের পর থেকেই জামাই বিভিন্ন জিনিস ও টাকা চাইতো, আমি সব দিয়েছি। আবার কয়েকদিন আগে দেড় লাখ টাকা চেয়েছে, আমি এক লাখ টাকা দিতে রাজি হয়েছি। তারপরও আমার মেয়েকে মেরে ফেললো।’
দামুড়হুদা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (অপারেশন) হিমেল রানা বলেন, কাদিপুর গ্রামে এক নববধূ আত্মহত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ হয়নি। থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়েছে।