ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা; স্বার্থপরতার বিষফল

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • / ১১৪ বার পড়া হয়েছে

গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে নারী, শিশুসহ ক্ষেত্রবিশেষে পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, দেশে সামাজিক অস্থিরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত মঙ্গলবার গোপালগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে তিন শিশুসন্তান নিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক গৃহবধূ। পারিবারিক কলহ ও মানসিক নির্যাতনে ওই নারী সন্তানদের জীবন সংহার করে নিজে আত্মহননের পথ বেছে নেন। ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জে। জামালগঞ্জে স্বামীর ওপর অভিমান করে তিন ছেলেমেয়েসহ এক নারী বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

গত মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। ব্যবসায়িক বিরোধে নিকটাত্মীয়ের হাতে খুন হন তারা। পাবনার চাটমোহরে বাড়ি নির্মাণের নতুন ইট কেনা দেখে এবং ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা জেনে চুরি করতে যায় তিন চোর। তাদের ঘরে ঢোকার বিষয়টি টের পাওয়ায় প্রবাসীর স্ত্রী ও তার শিশুসন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরের টেকেরহাট বাজারে প্রকাশ্যে এক বালু ব্যবসায়ীর দুই পা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ দিকে বুধবার রাতে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ইউনিয়নে সন্ত্রাসীর গুলিতে এক বালু ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।

প্রশ্ন হলো, কেন বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা? কেন এত হিংস্র হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সাম্প্রতিককালে সামাজিক বন্ধন কমে গেছে। একই সাথে অর্থলিপ্সা মানুষকে বেপরোয়া করে তুলেছে। যেকোনো উপায়ে অর্থবান হতে হিংস্রতার আশ্রয় নিতেও পিছপা হচ্ছে না অনেকে। ভোগবাদী মানসিকতায় মাত্রাতিরিক্ত স্বার্থপর হয়ে আমরা সবাই অর্থের পেছনে ছুটছি। দেশে সুশাসনের অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ ছাড়া কর্তৃত্ববাদী সমাজে দুর্বলরা সবলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে নারীরা। নির্যাতন সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেলে তারা নিজের ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। নিরাপত্তাহীনতা থেকেই তারা সন্তানদের সাথে নিয়ে মৃত্যুর কথা ভাবেন।

আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীরা এখনো অসহায়। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় সব কিছুই অর্থশালীদের পক্ষে। আইন, বিচার, কোনো কিছু সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে নয়। ফলে আইনের আশ্রয়বঞ্চিত মানুষ অসহায়তা থেকেই মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেন। আবার মানুষের সহজাত প্রবণতা হলো একটি অপরাধ ঢাকতে আরো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

লক্ষণীয় যে, সামাজিক অস্থিরতা অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। এর কারণ, যাদের বেড়ে ওঠা সঠিকভাবে হয়নি, তারা এ ধরনের আচরণ করেন। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাবও দায়ী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষ নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করেন। অনেক ক্ষেত্রে সংসারে নারীরা থাকেন অসহায়। আর উপার্জনকারী নারীরা পুরুষের একগুঁয়েমি সহ্য করেন না। ফলে পারিবারিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ঘটে হিংসা ও বিচ্ছেদ। পারিবারিক সহিংসতা থেকে ঘটনা প্রায়ই গড়ায় হত্যাকাণ্ডে। এগুলো মূলত স্বার্থপরতার বিষফল। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে গণসচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজপতিদের সক্রিয় হতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা; স্বার্থপরতার বিষফল

আপলোড টাইম : ১০:৩৯:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতায় বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এতে নারী, শিশুসহ ক্ষেত্রবিশেষে পুরো পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

স্পষ্টই প্রতীয়মান হয়, দেশে সামাজিক অস্থিরতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত মঙ্গলবার গোপালগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে তিন শিশুসন্তান নিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক গৃহবধূ। পারিবারিক কলহ ও মানসিক নির্যাতনে ওই নারী সন্তানদের জীবন সংহার করে নিজে আত্মহননের পথ বেছে নেন। ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জে। জামালগঞ্জে স্বামীর ওপর অভিমান করে তিন ছেলেমেয়েসহ এক নারী বিষপানে আত্মহত্যা করেন।

গত মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশে সন্তানসহ স্বামী-স্ত্রী নিহত হয়েছেন। ব্যবসায়িক বিরোধে নিকটাত্মীয়ের হাতে খুন হন তারা। পাবনার চাটমোহরে বাড়ি নির্মাণের নতুন ইট কেনা দেখে এবং ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা জেনে চুরি করতে যায় তিন চোর। তাদের ঘরে ঢোকার বিষয়টি টের পাওয়ায় প্রবাসীর স্ত্রী ও তার শিশুসন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গত বৃহস্পতিবার মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরের টেকেরহাট বাজারে প্রকাশ্যে এক বালু ব্যবসায়ীর দুই পা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ দিকে বুধবার রাতে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চর এলাহী ইউনিয়নে সন্ত্রাসীর গুলিতে এক বালু ব্যবসায়ী আহত হয়েছেন।

প্রশ্ন হলো, কেন বেড়েছে সামাজিক অস্থিরতা? কেন এত হিংস্র হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ? মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দেশে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে সাম্প্রতিককালে সামাজিক বন্ধন কমে গেছে। একই সাথে অর্থলিপ্সা মানুষকে বেপরোয়া করে তুলেছে। যেকোনো উপায়ে অর্থবান হতে হিংস্রতার আশ্রয় নিতেও পিছপা হচ্ছে না অনেকে। ভোগবাদী মানসিকতায় মাত্রাতিরিক্ত স্বার্থপর হয়ে আমরা সবাই অর্থের পেছনে ছুটছি। দেশে সুশাসনের অভাবও এর জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ ছাড়া কর্তৃত্ববাদী সমাজে দুর্বলরা সবলের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে নারীরা। নির্যাতন সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেলে তারা নিজের ও সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। নিরাপত্তাহীনতা থেকেই তারা সন্তানদের সাথে নিয়ে মৃত্যুর কথা ভাবেন।

আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীরা এখনো অসহায়। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় সব কিছুই অর্থশালীদের পক্ষে। আইন, বিচার, কোনো কিছু সমাজের নিম্নআয়ের মানুষের পক্ষে নয়। ফলে আইনের আশ্রয়বঞ্চিত মানুষ অসহায়তা থেকেই মৃত্যুকে শ্রেয় মনে করেন। আবার মানুষের সহজাত প্রবণতা হলো একটি অপরাধ ঢাকতে আরো অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

লক্ষণীয় যে, সামাজিক অস্থিরতা অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। এর কারণ, যাদের বেড়ে ওঠা সঠিকভাবে হয়নি, তারা এ ধরনের আচরণ করেন। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশী সংস্কৃতির প্রভাবও দায়ী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে একজন পুরুষ নিজেকে সর্বেসর্বা মনে করেন। অনেক ক্ষেত্রে সংসারে নারীরা থাকেন অসহায়। আর উপার্জনকারী নারীরা পুরুষের একগুঁয়েমি সহ্য করেন না। ফলে পারিবারিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। ঘটে হিংসা ও বিচ্ছেদ। পারিবারিক সহিংসতা থেকে ঘটনা প্রায়ই গড়ায় হত্যাকাণ্ডে। এগুলো মূলত স্বার্থপরতার বিষফল। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হলে গণসচেতনতার পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজপতিদের সক্রিয় হতে হবে।