ইপেপার । আজ বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

জীবননগরে লাউয়ের ভেজাল বীজ সরবরাহের অভিযোগ

ফলন হচ্ছে না, দিশেহারা কৃষকেরা

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
  • / ৬২ বার পড়া হয়েছে

জীবননগর অফিস:
জীবননগরে লাল তীর সীড ভাণ্ডার কোম্পানির ‘ডায়ানা’ লাউয়ের ভেজাল বীজ সরবরাহের অভিযোগ উঠছে। এই বীজ রোপণ করে ফলন না পেয়ে দিশেহারা হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। প্রতিকার পেতে তারা ছুটছেন এক অফিস থেকে আরেক অফিস।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের ৩০-৩৫ জন কৃষক ৯০-১০০ বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ করেছেন। তবে তাদের ফলন হচ্ছে না। মাত্র এক দুই চাষির খেতে ৪-৫টা লাউ দেখা গেছে। অনেক জমিতে লাউ বড়ো হওয়ার আগেই পচে যাচ্ছে ও গাছ মরে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, লাল তীর সীড ভাণ্ডার কোম্পানির নিম্নমানের ‘ডায়ানা’ লাউয়ের বীজ ক্রয় করে প্রতারিত হয়েছেন তারা। জীবননগর বাজারের শীলা বীজ ভাণ্ডার থেকে তারা বীজ কিনেছে কিন্তু কোনো ভাউচার তাদের দেওয়া হয়নি। বীজে ভেজাল থাকায় জমিতে লাগানোর কারণে তারা এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেক কৃষক ঋণ করে লাউ চাষ করেছেন। এই ভেজাল বীজের কারণে তাদের পুরো চাষে লোকসান। এখন তারা এই ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করবে সেটি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, স্থানীয় কৃষি অফিস তাদের সব রকম সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। কিন্তু বীজে সমস্যা থাকার কারণে তাদের এত লোকসান।

বেনিপুর গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, জীবননগর বাজারের শীলা বীজ ভাণ্ডার থেকে প্রায় এক বিঘা জমিতে লাউ লাগানোর জন্য ‘ডায়ানা’ নামের ৮ প্যাকেট বীজ ক্রয় করেছিলাম। প্রতি প্যাকেট বীজের দাম ১৪০ টাকা করে নিয়েছিল। বীজ রোপণ করার পর গাছ হয়েছে কিন্তু লাউ হয়েছে চার থেকে পাঁচ রকম। আবার লাউয়ের ফলন একেবারেই নেই বললেই চলে। যদিও দুই একটা হয়েছে সেগুলো বড় হওয়ার আগেই পছে যাচ্ছে। এই চাষের জন্য অনেক বাঁশ দড়ি-সুতা, সার ও কীটনাশক লাগে। আমাদের এই চাষে অনেক টাকা খরচ। কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সাহায্য না করে তাহলে আমরা একদম শেষ হয়ে যাব।

আরেক কৃষক মো. আলী হামজা বলেন, আমি দেড় বিঘা জমির জন্য শীলা বীজ ভাণ্ডার থেকে ‘ডায়ানা’ বীজ কিনে রোপণ করেছি। এই বীজে ভেজাল থাকার কারণে আমার জমিতে লাউ হয়নি। আমার নিজের কোনো জমি নাই। তাই আমি ঋণ নিয়ে জমি লিজ নিয়ে লাউ চাষ করছিলাম। এই লাউ চাষ করতে গিয়ে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আবার আমি অনেক টাকা ঋণী। এই ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করবো?

কৃষক মো. হায়দার আলী বলেন, শুধু আমার নয়, আমাদের গ্রামেই অন্তত ১০০ বিঘা জমিতে লাউ চাষে সমস্যা দেখা গেছে। আমরা কৃষকেরা প্রতারিত হয়েছি। প্রতিটা জমিতে অনেক টাকা করে খরচ হয়েছে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হওয়ার কারণে আমরা কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের ক্ষতির কথা জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দেন সহযোগিতা করার।
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাজীব হোসেন বলেন, ‘সীমান্ত ইউনিয়নের বেনিপুরের কৃষকেরা আমাদের অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। এটা আমরা শুনেছি এবং তদন্ত করে দেখার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি অফিসে জানিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যথাযথ সাহায্য সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন।’

লাল তীর সীড ভান্ডারে রিজিওনাল ম্যানেজার মো. হেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোনো হাইব্রিড বীজ শতকরা ৯৭% বিশুদ্ধ হয়। এবং দেখা যায় একটা খেতে ৫০০ চারা থাকলে তারমধ্যে ৫-৬টা চারা অন্য রকম হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত শীতের কারণে লাউয়ের ফলন কম ও ছোট থাকা অবস্থায় পচন ধরছে। যদি কৃষকেরা ভালোভাবে পরিচর্যা করে তাহলে কিছুদিন পরেই ভালো ফলন হবে। ভালো লাউ এই গাছ থেকেই পাবেন তারা।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

জীবননগরে লাউয়ের ভেজাল বীজ সরবরাহের অভিযোগ

ফলন হচ্ছে না, দিশেহারা কৃষকেরা

আপলোড টাইম : ১১:১২:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

জীবননগর অফিস:
জীবননগরে লাল তীর সীড ভাণ্ডার কোম্পানির ‘ডায়ানা’ লাউয়ের ভেজাল বীজ সরবরাহের অভিযোগ উঠছে। এই বীজ রোপণ করে ফলন না পেয়ে দিশেহারা হচ্ছেন কৃষকেরা। এতে লোকসানে পড়তে হচ্ছে তাদের। প্রতিকার পেতে তারা ছুটছেন এক অফিস থেকে আরেক অফিস।

গতকাল বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, জীবননগর উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের বেনীপুর গ্রামের ৩০-৩৫ জন কৃষক ৯০-১০০ বিঘা জমিতে লাউয়ের চাষ করেছেন। তবে তাদের ফলন হচ্ছে না। মাত্র এক দুই চাষির খেতে ৪-৫টা লাউ দেখা গেছে। অনেক জমিতে লাউ বড়ো হওয়ার আগেই পচে যাচ্ছে ও গাছ মরে যাচ্ছে।

ভুক্তভোগী কৃষকেরা বলছেন, লাল তীর সীড ভাণ্ডার কোম্পানির নিম্নমানের ‘ডায়ানা’ লাউয়ের বীজ ক্রয় করে প্রতারিত হয়েছেন তারা। জীবননগর বাজারের শীলা বীজ ভাণ্ডার থেকে তারা বীজ কিনেছে কিন্তু কোনো ভাউচার তাদের দেওয়া হয়নি। বীজে ভেজাল থাকায় জমিতে লাগানোর কারণে তারা এমন ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। অনেক কৃষক ঋণ করে লাউ চাষ করেছেন। এই ভেজাল বীজের কারণে তাদের পুরো চাষে লোকসান। এখন তারা এই ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করবে সেটি নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, স্থানীয় কৃষি অফিস তাদের সব রকম সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। কিন্তু বীজে সমস্যা থাকার কারণে তাদের এত লোকসান।

বেনিপুর গ্রামের কৃষক আল আমিন বলেন, জীবননগর বাজারের শীলা বীজ ভাণ্ডার থেকে প্রায় এক বিঘা জমিতে লাউ লাগানোর জন্য ‘ডায়ানা’ নামের ৮ প্যাকেট বীজ ক্রয় করেছিলাম। প্রতি প্যাকেট বীজের দাম ১৪০ টাকা করে নিয়েছিল। বীজ রোপণ করার পর গাছ হয়েছে কিন্তু লাউ হয়েছে চার থেকে পাঁচ রকম। আবার লাউয়ের ফলন একেবারেই নেই বললেই চলে। যদিও দুই একটা হয়েছে সেগুলো বড় হওয়ার আগেই পছে যাচ্ছে। এই চাষের জন্য অনেক বাঁশ দড়ি-সুতা, সার ও কীটনাশক লাগে। আমাদের এই চাষে অনেক টাকা খরচ। কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সাহায্য না করে তাহলে আমরা একদম শেষ হয়ে যাব।

আরেক কৃষক মো. আলী হামজা বলেন, আমি দেড় বিঘা জমির জন্য শীলা বীজ ভাণ্ডার থেকে ‘ডায়ানা’ বীজ কিনে রোপণ করেছি। এই বীজে ভেজাল থাকার কারণে আমার জমিতে লাউ হয়নি। আমার নিজের কোনো জমি নাই। তাই আমি ঋণ নিয়ে জমি লিজ নিয়ে লাউ চাষ করছিলাম। এই লাউ চাষ করতে গিয়ে আমার অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আবার আমি অনেক টাকা ঋণী। এই ঋণের টাকা কীভাবে শোধ করবো?

কৃষক মো. হায়দার আলী বলেন, শুধু আমার নয়, আমাদের গ্রামেই অন্তত ১০০ বিঘা জমিতে লাউ চাষে সমস্যা দেখা গেছে। আমরা কৃষকেরা প্রতারিত হয়েছি। প্রতিটা জমিতে অনেক টাকা করে খরচ হয়েছে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হওয়ার কারণে আমরা কৃষি অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে আমাদের ক্ষতির কথা জানিয়েছি। তিনি আমাদের আশ্বাস দেন সহযোগিতা করার।
এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. রাজীব হোসেন বলেন, ‘সীমান্ত ইউনিয়নের বেনিপুরের কৃষকেরা আমাদের অফিসে অভিযোগ দিয়েছেন। এটা আমরা শুনেছি এবং তদন্ত করে দেখার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আমি অফিসে জানিয়েছি, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের যথাযথ সাহায্য সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন।’

লাল তীর সীড ভান্ডারে রিজিওনাল ম্যানেজার মো. হেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেকোনো হাইব্রিড বীজ শতকরা ৯৭% বিশুদ্ধ হয়। এবং দেখা যায় একটা খেতে ৫০০ চারা থাকলে তারমধ্যে ৫-৬টা চারা অন্য রকম হতে পারে। তাছাড়া অতিরিক্ত শীতের কারণে লাউয়ের ফলন কম ও ছোট থাকা অবস্থায় পচন ধরছে। যদি কৃষকেরা ভালোভাবে পরিচর্যা করে তাহলে কিছুদিন পরেই ভালো ফলন হবে। ভালো লাউ এই গাছ থেকেই পাবেন তারা।