দেশে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে
- আপলোড টাইম : ০৯:৫৯:৩৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
- / ৫২ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ প্রতিবেদন:
গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে পারিবারিক ও সামাজিক সহিংসতায় বেশ কয়েক জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে নারী, শিশুসহ কোনো কোনো ক্ষেত্রে গোটা পরিবারই মারা গেছে। কেন বেড়েছে এই সামাজিক অস্থিরতা? মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজব্যবস্থায় এখনো পিছিয়ে পড়া নারীরা অসহায়। আবার অর্থলিপ্সা মানুষকে হিংস্র করে তুলছে। আমাদের সমাজব্যবস্থায় অর্থশালীদের পক্ষেই থাকে সবকিছু। আইন, বিচার কোনো কিছুই সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে নয়। ফলে তারা যখন আইনের শাসনের কথা ভাবে, তখন এই পথে যাওয়ার চেয়ে মৃত্যুকেই শ্রেয় হিসেবে মনে করে। আবার একজন অপরাধী একটা অপরাধ করার পর সেটা ঢাকতে আরো একাধিক অপরাধ করে। এটা আমাদের সহজাত প্রবণতা।
সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. নেহাল করিম বলেন, ‘সামাজিক অস্থিরতা অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি। এর কারণ, যাদের বেড়ে ওঠা সঠিকভাবে হয়নি, তারাই এ ধরনের আচরণ করে। এছাড়া এর পেছনে অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা থাকে। এখন দেখেন, স্বামী মদ খাবে, টাকা না পেলে স্ত্রীকে মারধর করবে। এ ধরনের ঘটনা থেকেই সূত্রপাত হয় কলহের। অনেক ক্ষেত্রে বিদেশি সংস্কৃতির প্রভাবও এর জন্য দায়ী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তারা মনে করে নিজেরা সর্বেসর্বা। তারা যেহেতু আয় করে, তাই তারা মনে করে পুরো পৃথিবীই তার। অনেক ক্ষেত্রে নারীরা অসহায়। আর যেসব নারী আয় করেন, তারা পুরুষের এই একগুঁয়েমি সহ্য করেন না, যা পারিবারিক কলহে রূপ নেয়। এতে করে পারিবারিক সহিংসতা থেকে রূপ নিচ্ছে হত্যাকাণ্ডেও।’
গণ মঙ্গলবার গোপালগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে তিন শিশুসন্তান নিয়ে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন এক গৃহবধূ। এ ঘটনায় তাদের অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করালে ছোট মেয়ে মারা যায়। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১০ বছর আগে লংকারচর গ্রামের হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে টিটু মোল্লার সঙ্গে বিয়ে হয় একই উপজেলার খাগড়াবাড়ী গ্রামের শরিফুল শেখের মেয়ে পলি বেগমের। বিয়ের পর থেকে শাশুড়িসহ পুরো পরিবার পলির বাবার একাধিক বিয়ে করা নিয়ে তার ওপর মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল। একপর্যায়ে জমিতে ব্যবহারের জন্য বাড়িতে থাকা কীটনাশক পান করেন পলি। পরে চামচে করে একে একে আট বছরের মেয়ে আফসানা, আড়াই বছরের আমেনা ও দেড় বছরের মিমকে বিষ পান করান।
ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল গণ বছরের সেপ্টেম্বরে সুনামগঞ্জে। জামালগঞ্জে স্বামীর ওপর অভিমান করে দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ যমুনা খাতুন নামের এক নারী বিষ পান করেন। এ ঘটনায় স্বামী জাহাঙ্গীরকে পুলিশ আটক করে। বিষক্রিয়ায় তার তিন সন্তান মারা যায়। পরে যমুনা খাতুনও মৃত্যুবরণ করেন।
গণ মঙ্গলবার সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ট্রিপল মার্ডারের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত বিকাশ সরকারের বোনের ছেলে রাজিব ভৌমিক (৩৫) এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। মামার সঙ্গে মোটা অঙ্কের ব্যাবসায়িক লেনদেনের কারণে তিনি এই হত্যাকাণ্ড ঘটান বলে পুলিশের কাছে স্বীকারাক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন রাজিব। মঙ্গলবার ভোরে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার পৌর শহরের বারোয়ারী বটতলা মহল্লার নিজ বাড়ি থেকে একই পরিবারের স্বামী বিকাশ সরকার, স্ত্রী স্বর্ণা সরকার ও তাদের মেয়ে পারমিতা সরকার তুষির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এণ হিংস্রতা কেন? জানতে চাইলে মনোবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অর্থলিপ্সা মানুষকে আরো বেশি হিংস্র করে তুলেছে। আমাদের মধ্যে সামাজিক বন্ধন দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। আমরা সবাই অর্থের পেছনে ছুটছি। আবার দেখেন, আমাদের সমাজে নারীরা যখন আর পারে না, তখন তারা নিজে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সন্তানদের ভবিষ্যত্ নিয়েও চিন্তা করে। তখন ভাবে, সন্তানগুলো কার কাছে বড় হবে? কীভাবে বাঁচবে? সেই চিন্তা থেকেই তারা নিজের সঙ্গে সন্তানদের নিয়েও মৃত্যুর কথা ভাবে।’
গণকাল বৃহস্পতিবার মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুরের টেকেরহাট বাজারে প্রকাশ্যে বালু ব্যবসায়ী হোসেন সরদারের (৬০) দুটি পা হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিত্সা দিয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আবার পাবনার চাটমোহরে বাড়ি নির্মাণের ইট কেনা দেখে এবং ব্যাংক থেকে টাকা তোলার কথা জেনে চুরি করতে গিয়েছিল তিন জন। তাদের ঘরে ঢোকার বিষয়টি টের পাওয়ায় গৃহবধূ লাবনী খাতুন ও তার শিশুসন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে টাকা ও গয়না চুরি করে পালিয়ে যায় তারা। প্রবাসীর স্ত্রী ও তার শিশুসন্তান হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনে তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। জব্দ করা হয়েছে চুরি করা মালামাল। গণকাল দুপুরে পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী এ তথ্য জানান।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় সন্ত্রাসীর গুলিতে নুরনবী (৩৫) নামে এক বালু ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আহত অবস্থায় নুরনবীকে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে চর এলাহী ইউনিয়নের বিচ্ছিন্ন এলাকা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের চরবালুয়া গ্রামে সমিতি বাজারের পাশে এ ঘটনা ঘটে। আহত নুরনবী চর এলাহী ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি এবং ঐ এলাকার সাবেক মেম্বার দুলালের ছেলে।
চর এলাহী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুর রাজ্জাক জানান, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সন্ত্রাসী রাহাত নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন এলাকা চর বালুয়ায় এসে আধিপত্য বিস্তার করছিল। বুধবার রাতে চর এলাহী ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি নুরনবী বারআউলিয়া বাজার থেকে রাতে বাড়ি ফেরার পথে সমিতি বাজারের পাশে সন্দ্বীপের ঐ সন্ত্রাসী রাহাত তার দলবল নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে তাকে গুলি ও কুপিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয় আশপাশের লোকজন বের হলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। এ সময় আহত নুরনবীকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।