ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

দেশে দুর্নীতি বাড়ছেই; সব অর্জন নষ্ট হবে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:৪৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
  • / ১০৭ বার পড়া হয়েছে

দেশে দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। এর কারণ, রোধের ন্যূনতম উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। অথচ বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এর অর্থ হলো- সরকার দেশে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকার করেছে যেখানে পরিপূর্ণ আইনের শাসন নিশ্চিত হবে। ওই সনদে স্বাক্ষরের কারণে পুলিশ, আইন-আদালত, দুদকসহ দুর্নীতি রোধের নানা উপায়-উপকরণ সরকার জনগণের অর্থে পরিচালনা করে। সরকারের সব পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহিষ্ণুতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘোষণার অর্থ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। যেকোনো সামাজিক রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য এই রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দেশে দুর্নীতি কমার সামান্যতম লক্ষণ তো নেই-ই; বরং দিন দিন তা এমনভাবে বাড়ছে যে, স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরে আমাদের এ যাবৎকালের সব অর্জন ধ্বংসের উপক্রম হচ্ছে।


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে (করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স বা সিপিআই)-২০২৩ বাংলাদেশ ২০২২ সালে ১৮০ দেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে ১২ নম্বরে ছিল। ২০২৩ সালে উঠে এসেছে দশে। প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একযোগে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, দুর্নীতির পরিস্থিতি উন্নয়নসংক্রান্ত স্কোরেও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ১০০ নম্বরের মধ্যে এবার বাংলাদেশ ২৪ নম্বর পেয়েছে। গত বছরের স্কোর ছিল ২৫। সব মিলিয়ে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চতুর্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ হলো দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
দেশের এতসব নেতিবাচক অবস্থানের পেছনে সরকারের দায় আছে। তারা অঙ্গীকার পূরণ করতে পারেননি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এ নিয়ে দায় স্বীকার দূরের কথা বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধও নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর এ অপবাদ মোটেও সত্য নয়। কেন সত্য নয়, বা কেন এটি অপবাদ সেই ব্যাখ্যা দেননি মন্ত্রী; বরং টিআইয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন। বলেছেন, টিআইবি বিএনপির দালাল, বিএনপি যা বলে, টিআইবিও তা-ই বলে। কিন্তু রিপোর্টটি টিআইবির নয়, টিআইয়ের। সেটি সারা বিশ্বের কাছে দলিল হয়ে থাকবে।


ওবায়দুল কাদের আরো বলেছেন, ‘আমরা এগুলোর পরোয়া করি না।’ এটি সত্য। কিন্তু বেপরোয়া হলে সত্য চাপা পড়ে না। গত ১৫ বছরে দুর্নীতির প্রশ্রয় দেয়া কিংবা দুর্নীতিবাজদের সুবিধা দিয়ে উৎসাহিত করার অসংখ্য দৃষ্টান্ত সবার জানা।


দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশের সময় টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, সরকার দুর্নীতি রোধে অঙ্গীকার করলেও তাদের কথাবার্তা শুনলে হতাশ না হয়ে উপায় থাকে না। সন্দেহ থেকে যায়, তারা নিজেদের কথা রাখবেন কি না। দুর্নীতি রোধে টিআইয়ের বিভিন্ন সুপারিশের অন্যতম হলো- রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া। এসব সুপারিশ অরণ্যে রোদন ছাড়া কিছু নয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দেশে দুর্নীতি বাড়ছেই; সব অর্জন নষ্ট হবে

আপলোড টাইম : ০৮:৪৩:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

দেশে দুর্নীতির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। এর কারণ, রোধের ন্যূনতম উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। অথচ বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এর অর্থ হলো- সরকার দেশে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক এমন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকার করেছে যেখানে পরিপূর্ণ আইনের শাসন নিশ্চিত হবে। ওই সনদে স্বাক্ষরের কারণে পুলিশ, আইন-আদালত, দুদকসহ দুর্নীতি রোধের নানা উপায়-উপকরণ সরকার জনগণের অর্থে পরিচালনা করে। সরকারের সব পর্যায় থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স বা শূন্য সহিষ্ণুতার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ধরনের ঘোষণার অর্থ সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ। যেকোনো সামাজিক রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক লক্ষ্য পূরণের জন্য এই রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। দেশে দুর্নীতি কমার সামান্যতম লক্ষণ তো নেই-ই; বরং দিন দিন তা এমনভাবে বাড়ছে যে, স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরে আমাদের এ যাবৎকালের সব অর্জন ধ্বংসের উপক্রম হচ্ছে।


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের ‘দুর্নীতির ধারণা সূচকে (করাপশন পারসেপশন ইনডেক্স বা সিপিআই)-২০২৩ বাংলাদেশ ২০২২ সালে ১৮০ দেশের মধ্যে নিচের দিক থেকে ১২ নম্বরে ছিল। ২০২৩ সালে উঠে এসেছে দশে। প্রতিবেদনটি গত মঙ্গলবার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে একযোগে প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, দুর্নীতির পরিস্থিতি উন্নয়নসংক্রান্ত স্কোরেও পিছিয়েছে বাংলাদেশ। ১০০ নম্বরের মধ্যে এবার বাংলাদেশ ২৪ নম্বর পেয়েছে। গত বছরের স্কোর ছিল ২৫। সব মিলিয়ে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চতুর্থ এবং দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ হলো দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ।
দেশের এতসব নেতিবাচক অবস্থানের পেছনে সরকারের দায় আছে। তারা অঙ্গীকার পূরণ করতে পারেননি। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এ নিয়ে দায় স্বীকার দূরের কথা বিন্দুমাত্র লজ্জাবোধও নেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের ওপর এ অপবাদ মোটেও সত্য নয়। কেন সত্য নয়, বা কেন এটি অপবাদ সেই ব্যাখ্যা দেননি মন্ত্রী; বরং টিআইয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেছেন। বলেছেন, টিআইবি বিএনপির দালাল, বিএনপি যা বলে, টিআইবিও তা-ই বলে। কিন্তু রিপোর্টটি টিআইবির নয়, টিআইয়ের। সেটি সারা বিশ্বের কাছে দলিল হয়ে থাকবে।


ওবায়দুল কাদের আরো বলেছেন, ‘আমরা এগুলোর পরোয়া করি না।’ এটি সত্য। কিন্তু বেপরোয়া হলে সত্য চাপা পড়ে না। গত ১৫ বছরে দুর্নীতির প্রশ্রয় দেয়া কিংবা দুর্নীতিবাজদের সুবিধা দিয়ে উৎসাহিত করার অসংখ্য দৃষ্টান্ত সবার জানা।


দুর্নীতির ধারণাসূচক প্রকাশের সময় টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, সরকার দুর্নীতি রোধে অঙ্গীকার করলেও তাদের কথাবার্তা শুনলে হতাশ না হয়ে উপায় থাকে না। সন্দেহ থেকে যায়, তারা নিজেদের কথা রাখবেন কি না। দুর্নীতি রোধে টিআইয়ের বিভিন্ন সুপারিশের অন্যতম হলো- রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া। এসব সুপারিশ অরণ্যে রোদন ছাড়া কিছু নয়।