ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আয়ানের মৃত্যু নিয়ে রিপোর্ট লোক দেখানো ও হাস্যকর : হাইকোর্ট

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ১২১ বার পড়া হয়েছে

সমীকরণ প্রতিবেদন:
রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খতনা করার পর এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু আয়ানের (৫) মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন লোক দেখানো ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। শুনানিতে আদালত বলেছেন, কোনো চিকিৎসকই রোগীর মৃত্যু চায় না, তবে এখানে আয়ানের ক্ষেত্রে অবহেলা দেখা যাচ্ছে। গতকাল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন দেখে এ মন্তব্য করেন। এ দিন ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সাথে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। আর ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়ানের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা (হাঁপানি) ছিল। সুন্নতে খতনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি। তবে আইনজীবী গতকাল হাইকোর্টকে বলেছেন যে, আয়ানের অ্যাজমার বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়েছিল। শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, কোনো চিকিৎসকই রোগীর মৃত্যু চায় না, তবে এখানে আয়ানের ক্ষেত্রে নেগলিজেন্স (অবহেলা) দেখা যাচ্ছে। ছেলেটির অ্যাজমা জেনেও অপারেশনের সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো?’
আদালত আয়ানের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধের তথ্য দেখে বলেন, বাইপাস সার্জারিতেও এত ওষুধ লাগে না। এখানে শিশুটিকে যত ওষুধ দেয়া হয়েছে! শুনানির একপর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনকে ‘লোক দেখানো (আইওয়াশ) এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। সেই সাথে চিকিৎসকদের একটা ডিসিপ্লিনে চলা উচিত উল্লেখ করে হাইকোর্ট ‘মেডিক্যাল নেগলিজেন্স’ বিষয়ে একটি টিম বা বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

অপর দিকে রিটের পক্ষের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে মেনুপুলেটেড উল্লেখ করে এ ঘটনায় পুনরায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান। এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আয়ানকে সাঁতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর সাত দিন পর গত ৮ জানুয়ারি লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু আয়ানকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।গত ১৫ জানুয়ারি শিশু আয়ানের (৫) মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। একই সাথে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। তবে প্রতিবেদন দাখিল না করায় গত ২২ জানুয়ারি আদালত ২৫ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দেন। ৯ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

আয়ানের মৃত্যু নিয়ে রিপোর্ট লোক দেখানো ও হাস্যকর : হাইকোর্ট

আপলোড টাইম : ০৫:০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৪

সমীকরণ প্রতিবেদন:
রাজধানীর বাড্ডায় ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে খতনা করার পর এক সপ্তাহ ধরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশু আয়ানের (৫) মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন লোক দেখানো ও হাস্যকর বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। শুনানিতে আদালত বলেছেন, কোনো চিকিৎসকই রোগীর মৃত্যু চায় না, তবে এখানে আয়ানের ক্ষেত্রে অবহেলা দেখা যাচ্ছে। গতকাল বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন দেখে এ মন্তব্য করেন। এ দিন ১৫ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। সাথে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ।

আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। আর ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কুমার দেবুল দে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়ানের ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা (হাঁপানি) ছিল। সুন্নতে খতনার অপারেশনের আগে ওয়েটিং রুমে তাকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেয়া হয়েছিল। এ বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়নি। তবে আইনজীবী গতকাল হাইকোর্টকে বলেছেন যে, আয়ানের অ্যাজমার বিষয়টি চিকিৎসকদের জানানো হয়েছিল। শুনানির একপর্যায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, কোনো চিকিৎসকই রোগীর মৃত্যু চায় না, তবে এখানে আয়ানের ক্ষেত্রে নেগলিজেন্স (অবহেলা) দেখা যাচ্ছে। ছেলেটির অ্যাজমা জেনেও অপারেশনের সিদ্ধান্ত কেন নেয়া হলো?’
আদালত আয়ানের চিকিৎসায় বিভিন্ন ধরনের ওষুধের তথ্য দেখে বলেন, বাইপাস সার্জারিতেও এত ওষুধ লাগে না। এখানে শিশুটিকে যত ওষুধ দেয়া হয়েছে! শুনানির একপর্যায়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির দেয়া প্রতিবেদনকে ‘লোক দেখানো (আইওয়াশ) এবং তদন্ত কমিটির সুপারিশকে হাস্যকর বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। সেই সাথে চিকিৎসকদের একটা ডিসিপ্লিনে চলা উচিত উল্লেখ করে হাইকোর্ট ‘মেডিক্যাল নেগলিজেন্স’ বিষয়ে একটি টিম বা বোর্ড গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।

অপর দিকে রিটের পক্ষের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটির রিপোর্টকে মেনুপুলেটেড উল্লেখ করে এ ঘটনায় পুনরায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত চান। এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ১১ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেন।

গত ৩১ ডিসেম্বর সুন্নতে খতনা করানোর জন্য আয়ানকে সাঁতারকুল বাড্ডার ইউনাইটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান অভিভাবকরা। খতনা শেষ হওয়ার পর আয়ানের জ্ঞান না ফেরায় তাকে সেখান থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ এর ইউনাইটেড হাসপাতালে। সেখানে পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এর সাত দিন পর গত ৮ জানুয়ারি লাইফ সাপোর্টে থাকা শিশু আয়ানকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।গত ১৫ জানুয়ারি শিশু আয়ানের (৫) মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। একই সাথে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। তবে প্রতিবেদন দাখিল না করায় গত ২২ জানুয়ারি আদালত ২৫ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করার আদেশ দেন। ৯ জানুয়ারি শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় জনস্বার্থে রিট আবেদনটি করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম।