ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আর্সেনিকের দূষণ বিপজ্জনক মাত্রায়; বিশুদ্ধ পানির আয়োজন দরকার

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ১০৬ বার পড়া হয়েছে

পানির অপর নাম জীবন। সহজে প্রাপ্তি ঘটায় এর গুরুত্ব আমরা টের পাইনি। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও পানির পর্যাপ্ত আধার- পুকুর, খাল-বিল, নদী-নালায় আমরা পরিবেষ্টিত। তবে প্রকৃতির উদার হাতে দেয়া এ পানি দূষিত করে ফেলেছি। এর সাথে বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাবও কম দায়ী নয়। মিষ্টি পানির উৎস কমে যাচ্ছে। খাওয়ার পানির প্রাপ্তি হয়ে উঠছে ক্রমে কঠিন। এ জন্য ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। তবে শঙ্কা বাড়াচ্ছে আর্সেনিক। একটি গবেষণায় জানা গেছে, পান করার পানিতে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক দশক ধরে আর্সেনিকের দূষণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দুর্ভাগ্য হলো, কিভাবে এ দূষণ রোধ করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যাবে তা নিয়ে দেশে খুব বেশি কাজ হয়নি। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল পিএলওএস গত বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, বাংলাদেশে পান করার ৪৯ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকর পর্যায়ে আর্সেনিকের মিশ্রণ রয়েছে। এতে রয়েছে ক্যান্সার তৈরির মারাত্মক ঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্কেল অনুযায়ী, আর্সেনিকের নিরাপদ মান ধরা হয় লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। গবেষকরা বিভিন্ন অঞ্চলের নমুনা সংগ্রহ করে দেখতে পান, প্রায় অর্ধেক নমুনায় এর মিশ্রণ অনেক বেশি। কিছু ক্ষেত্রে সেটি দেখা যাচ্ছে ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম বা ৪৫ গুণ বেশি।
জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনে আর্সেনিক দূষণ ব্যাপক বিস্তার ঘটছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লবণাক্ত পানি নিচু এলাকায় ঢুকে পড়ছে। বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় একইভাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। এতে করে মিষ্টি পানির সাথে লবণাক্ত পানি মিশে সেখানে আর্সেনিক দূষণ হচ্ছে। সমুদ্রে পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় পলির সাথে মিশে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানিতে চলে যাচ্ছে আর্সেনিক। এখন এমন একসময় এসেছে, জলাশয় ও ভূগর্ভস্থ পানি একই সাথে দূষিত হচ্ছে। এতে করে বিশুদ্ধ পানির উৎস দ্রুত কমে যাচ্ছে। পান করা ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারে উপযুক্ত পানির সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে নলকূপের পানিতেও আর্সেনিকের আশঙ্কাজনক বিস্তৃতি ঘটছে। আর্সেনিকের কারণে মানুষ ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা ও নানাবিধ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি ও লিভার জটিলতা তৈরি করছে। আর্সেনিক মানবদেহে ২০ বছর পরও ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। কয়েক দশক আগে থেকে জনস্বাস্থ্যের জন্য বর্ধমান হুমকি হয়ে উঠলেও এর মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নেই। গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, আগামীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ আর্সেনিকের কারণে ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে দেশে অবকাঠামো নির্মাণ দরকার। একদিকে প্রাকৃতিক উৎসগুলোকে যতটা পারা যায় আর্সেনিকমুক্ত রাখতে হবে, সেগুলোকে সংরক্ষণ বা নিরাপদ করার যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব একটা নেই। ভূগর্ভস্থ পানি ফিল্টার করে ব্যবহার করার কার্যক্রম নিতে হবে। শোধন করে এই পানি নিরাপদ না করতে পারলে সমূহ বিপদ। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

আর্সেনিকের দূষণ বিপজ্জনক মাত্রায়; বিশুদ্ধ পানির আয়োজন দরকার

আপলোড টাইম : ০৪:১২:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৪

পানির অপর নাম জীবন। সহজে প্রাপ্তি ঘটায় এর গুরুত্ব আমরা টের পাইনি। প্রয়োজনীয় বৃষ্টিপাত ও পানির পর্যাপ্ত আধার- পুকুর, খাল-বিল, নদী-নালায় আমরা পরিবেষ্টিত। তবে প্রকৃতির উদার হাতে দেয়া এ পানি দূষিত করে ফেলেছি। এর সাথে বৈশ্বিক জলবায়ুর প্রভাবও কম দায়ী নয়। মিষ্টি পানির উৎস কমে যাচ্ছে। খাওয়ার পানির প্রাপ্তি হয়ে উঠছে ক্রমে কঠিন। এ জন্য ভূগর্ভের পানির ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। তবে শঙ্কা বাড়াচ্ছে আর্সেনিক। একটি গবেষণায় জানা গেছে, পান করার পানিতে উচ্চমাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতি পাওয়া যাচ্ছে। কয়েক দশক ধরে আর্সেনিকের দূষণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। দুর্ভাগ্য হলো, কিভাবে এ দূষণ রোধ করে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা যাবে তা নিয়ে দেশে খুব বেশি কাজ হয়নি। বিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল পিএলওএস গত বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছে, বাংলাদেশে পান করার ৪৯ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকর পর্যায়ে আর্সেনিকের মিশ্রণ রয়েছে। এতে রয়েছে ক্যান্সার তৈরির মারাত্মক ঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্কেল অনুযায়ী, আর্সেনিকের নিরাপদ মান ধরা হয় লিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। গবেষকরা বিভিন্ন অঞ্চলের নমুনা সংগ্রহ করে দেখতে পান, প্রায় অর্ধেক নমুনায় এর মিশ্রণ অনেক বেশি। কিছু ক্ষেত্রে সেটি দেখা যাচ্ছে ৪৫০ মাইক্রোগ্রাম বা ৪৫ গুণ বেশি।
জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনে আর্সেনিক দূষণ ব্যাপক বিস্তার ঘটছে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাসে লবণাক্ত পানি নিচু এলাকায় ঢুকে পড়ছে। বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় একইভাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে। এতে করে মিষ্টি পানির সাথে লবণাক্ত পানি মিশে সেখানে আর্সেনিক দূষণ হচ্ছে। সমুদ্রে পানির স্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় পলির সাথে মিশে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানিতে চলে যাচ্ছে আর্সেনিক। এখন এমন একসময় এসেছে, জলাশয় ও ভূগর্ভস্থ পানি একই সাথে দূষিত হচ্ছে। এতে করে বিশুদ্ধ পানির উৎস দ্রুত কমে যাচ্ছে। পান করা ও গৃহস্থালি কাজে ব্যবহারে উপযুক্ত পানির সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গে নলকূপের পানিতেও আর্সেনিকের আশঙ্কাজনক বিস্তৃতি ঘটছে। আর্সেনিকের কারণে মানুষ ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা ও নানাবিধ চর্মরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি ও লিভার জটিলতা তৈরি করছে। আর্সেনিক মানবদেহে ২০ বছর পরও ক্ষতিকর প্রভাব রাখতে পারে বলে জানাচ্ছেন গবেষকরা। কয়েক দশক আগে থেকে জনস্বাস্থ্যের জন্য বর্ধমান হুমকি হয়ে উঠলেও এর মোকাবেলায় আমাদের প্রস্তুতি নেই। গবেষণা প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে, আগামীতে বিপুল সংখ্যক মানুষ আর্সেনিকের কারণে ক্যান্সার আক্রান্ত হতে পারে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে দেশে অবকাঠামো নির্মাণ দরকার। একদিকে প্রাকৃতিক উৎসগুলোকে যতটা পারা যায় আর্সেনিকমুক্ত রাখতে হবে, সেগুলোকে সংরক্ষণ বা নিরাপদ করার যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। তবে এ ব্যাপারে অগ্রগতি খুব একটা নেই। ভূগর্ভস্থ পানি ফিল্টার করে ব্যবহার করার কার্যক্রম নিতে হবে। শোধন করে এই পানি নিরাপদ না করতে পারলে সমূহ বিপদ। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে এ নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।