ইপেপার । আজ শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিজ্ঞাপন প্রচারেও দুর্নীতি; স্বাস্থ্য খাত রক্ষা করুন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১২:১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ২০১ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে সরকারি কাজে দুর্নীতি নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। এসব অপকর্মকে কোনোকালে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয় না। চেয়ার, চামচ, বালিশ, পর্দা এমন তুচ্ছ জিনিস কিনতে দুষ্টুচক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দুর্নীতির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাত সবার নজর কেড়েছে। দেশে দেশে স্বাস্থ্য খাতে দায়িত্বে থাকেন সংবেদনশীল ব্যক্তিবর্গ। নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষায় তারা থাকেন নিবেদিত। আমাদের দেশ এর উল্টো। এর দায়িত্বে যেসব ব্যক্তি রয়েছেন, তারা মানুষের অসুস্থতা পুঁজি করে বিপুল অর্থ লোপাট করেছেন।

এ বিভাগের অনিয়ম নিয়ে কানাঘুষা থাকলেও করোনাকালে এ খাতের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে। মহামারীকালে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটার ধুমধাম পড়েছিল। পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত সুচের বাজারমূল্য ২৫০ টাকা হলেও এর ক্রয়মূল্য দেখানো হয় ২৫ হাজার টাকা, যা রীতিমতো ১০০ গুণ বেশি। অস্ত্রোপচারে ব্যবহার টিস্যু পেপারের দাম ছিল ৩০০-৪০০ টাকা। এর ক্রয় দেখানো হয় ২০ হাজার টাকা। প্রস্রাব রাখার ব্যাগের বাজার দাম ছিল ৬০ টাকা। কেনা হয় এক হাজার ৩০০ টাকায়।

করোনাকালে মহাপ্রতারক সাহেদ-সাবরিনার দেখা মেলে। পরীক্ষা না করে করোনাসনদ বিতরণ করে প্রতারণায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন তারা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সাথে সাহেদের দহরম মহরম ছিল। এমনকি সুশীলসমাজের সদস্য সেজে বসেছিলেন তিনি। তখন তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন প্রতারণার কাহিনী ফাঁস হয়। দাগি এই অপরাধীকে যাবজ্জীবন সাজার পর আবার খালাসের চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য খাতের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্তরাসহ তাদের আশপাশের লোকজন নিয়ে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাদের কেউ কেউ বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে চলে গেছেন। দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্নীতি মহামারী ধারণ করেছে। এর প্রধান কারণ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া। লোকদেখানো তদন্তের আয়োজনও করা হয় না। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক আছে নামমাত্র। এটি কখনো সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্তে আগ্রহী হয় না। স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে দেশে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।

এবার সহযোগী একটি দৈনিক এ খাতে বিজ্ঞাপন প্রচারেও দুর্নীতি হয়েছে, খবর দিয়েছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজ বেসরকারি টেলিভিশনকে দরপত্র ছাড়া দেয়া হয়। সরকারের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একটি গান প্রচারে দুটি টেলিভিশনকে ৪৫ লাখ ৬২ হাজার ২৮০ টাকা দেয়া হয়। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সাথে করা চুক্তিতে দিনে কখন প্রচার হবে, কতবার প্রচার করা হবে, এমন কোনো শর্ত ছিল না। অথচ বিজ্ঞাপন প্রচারে সময় গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য। সাধারণত দিনের বিশেষ সময়ে কিংবা খবরের আগে দর্শক শ্রোতা বেশি থাকেন। বিজ্ঞাপন প্রচারের কার্যকর সময় এটি। এ সময় প্রতি সেকেন্ড বিজ্ঞাপন প্রচারের মূল্য কয়েকগুণ বেশি থাকে। চ্যানেলগুলো সাধারণ সময়ে এটি প্রচার করে সরকারি অর্থ আয় করেছে। বাড়তি আয় করে নিলেও সরকারি প্রচারণার উদ্দেশ্য ম্যালেরিয়াসংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি সেভাবে কাজে আসেনি। যাই হোক, স্বাস্থ্য খাতে যে হারে দুর্নীতি হচ্ছে এটি সে তুলনায় খুব ক্ষুদ্র। তার পরও অন্যান্য দুর্নীতির মতো এটির সম্ভবত তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনা হবে বলে মনে হয় না। সবার জানা, একটি সমৃদ্ধ জাতিগঠনে দুর্নীতির বিলুপ্তি অত্যাবশ্যক। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধ হওয়া সবার আগে প্রয়োজন। জাতি আশা করে এ খাত দুর্নীতিমুক্ত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

বিজ্ঞাপন প্রচারেও দুর্নীতি; স্বাস্থ্য খাত রক্ষা করুন

আপলোড টাইম : ১২:১২:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৪

বাংলাদেশে সরকারি কাজে দুর্নীতি নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে। এসব অপকর্মকে কোনোকালে কেউ ছাড়িয়ে যেতে পারবে বলে মনে হয় না। চেয়ার, চামচ, বালিশ, পর্দা এমন তুচ্ছ জিনিস কিনতে দুষ্টুচক্র কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। দুর্নীতির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাত সবার নজর কেড়েছে। দেশে দেশে স্বাস্থ্য খাতে দায়িত্বে থাকেন সংবেদনশীল ব্যক্তিবর্গ। নাগরিকদের স্বাস্থ্য রক্ষায় তারা থাকেন নিবেদিত। আমাদের দেশ এর উল্টো। এর দায়িত্বে যেসব ব্যক্তি রয়েছেন, তারা মানুষের অসুস্থতা পুঁজি করে বিপুল অর্থ লোপাট করেছেন।

এ বিভাগের অনিয়ম নিয়ে কানাঘুষা থাকলেও করোনাকালে এ খাতের দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসে। মহামারীকালে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটার ধুমধাম পড়েছিল। পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত সুচের বাজারমূল্য ২৫০ টাকা হলেও এর ক্রয়মূল্য দেখানো হয় ২৫ হাজার টাকা, যা রীতিমতো ১০০ গুণ বেশি। অস্ত্রোপচারে ব্যবহার টিস্যু পেপারের দাম ছিল ৩০০-৪০০ টাকা। এর ক্রয় দেখানো হয় ২০ হাজার টাকা। প্রস্রাব রাখার ব্যাগের বাজার দাম ছিল ৬০ টাকা। কেনা হয় এক হাজার ৩০০ টাকায়।

করোনাকালে মহাপ্রতারক সাহেদ-সাবরিনার দেখা মেলে। পরীক্ষা না করে করোনাসনদ বিতরণ করে প্রতারণায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেন তারা। সরকারের উচ্চপর্যায়ের সাথে সাহেদের দহরম মহরম ছিল। এমনকি সুশীলসমাজের সদস্য সেজে বসেছিলেন তিনি। তখন তার বিরুদ্ধে কয়েক ডজন প্রতারণার কাহিনী ফাঁস হয়। দাগি এই অপরাধীকে যাবজ্জীবন সাজার পর আবার খালাসের চেষ্টা চলছে। স্বাস্থ্য খাতের তৎকালীন দায়িত্বপ্রাপ্তরাসহ তাদের আশপাশের লোকজন নিয়ে বড় বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তাদের কেউ কেউ বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে চলে গেছেন। দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্নীতি মহামারী ধারণ করেছে। এর প্রধান কারণ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া। লোকদেখানো তদন্তের আয়োজনও করা হয় না। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক আছে নামমাত্র। এটি কখনো সরকারের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্তে আগ্রহী হয় না। স্বাধীন প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে দেশে দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।

এবার সহযোগী একটি দৈনিক এ খাতে বিজ্ঞাপন প্রচারেও দুর্নীতি হয়েছে, খবর দিয়েছে। ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে বিজ্ঞাপন প্রচারের কাজ বেসরকারি টেলিভিশনকে দরপত্র ছাড়া দেয়া হয়। সরকারের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, একটি গান প্রচারে দুটি টেলিভিশনকে ৪৫ লাখ ৬২ হাজার ২৮০ টাকা দেয়া হয়। টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের সাথে করা চুক্তিতে দিনে কখন প্রচার হবে, কতবার প্রচার করা হবে, এমন কোনো শর্ত ছিল না। অথচ বিজ্ঞাপন প্রচারে সময় গুরুত্বপূর্ণ বিচার্য। সাধারণত দিনের বিশেষ সময়ে কিংবা খবরের আগে দর্শক শ্রোতা বেশি থাকেন। বিজ্ঞাপন প্রচারের কার্যকর সময় এটি। এ সময় প্রতি সেকেন্ড বিজ্ঞাপন প্রচারের মূল্য কয়েকগুণ বেশি থাকে। চ্যানেলগুলো সাধারণ সময়ে এটি প্রচার করে সরকারি অর্থ আয় করেছে। বাড়তি আয় করে নিলেও সরকারি প্রচারণার উদ্দেশ্য ম্যালেরিয়াসংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি সেভাবে কাজে আসেনি। যাই হোক, স্বাস্থ্য খাতে যে হারে দুর্নীতি হচ্ছে এটি সে তুলনায় খুব ক্ষুদ্র। তার পরও অন্যান্য দুর্নীতির মতো এটির সম্ভবত তদন্ত ও বিচারের আওতায় আনা হবে বলে মনে হয় না। সবার জানা, একটি সমৃদ্ধ জাতিগঠনে দুর্নীতির বিলুপ্তি অত্যাবশ্যক। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি বন্ধ হওয়া সবার আগে প্রয়োজন। জাতি আশা করে এ খাত দুর্নীতিমুক্ত করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।