ইপেপার । আজ মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

জনশক্তি রফতানি বাড়ছে’ বাড়ছে না রেমিট্যান্স

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৩:৪৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ১১৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বনির্ভর নয়, শক্তিশালীও নয়। অর্থনীতির প্রধান দু’টি খাত পোশাক ও জনশক্তি রফতানি। পোশাক রফতানি করে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ হলেও এর ভিত্তি নড়বড়ে। তুলা উৎপাদন, সুতা বুননসহ এর পেছনে যে দীর্ঘ চেইন রয়েছে এক্সেসরিজের তার সামান্য অংশ আমরা নিজেরা করি। যেকোনো সময় এতে ধস নামতে পারে। দ্বিতীয় প্রধান খাত জনশক্তি রফতানি। এটি কখনো একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট নয়। যার প্রমাণ আমরা নিজেরাই। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা জনশক্তি রফতানি করছি। কিন্তু গত ৫০ বছরেও স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরোতে পারিনি। জনশক্তি রফতানি করে কোনো দেশ শক্তিশালী অর্থনীতি গড়েছে এমন উদাহরণ নেই। তবে এ খাতকে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করা হলে যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। প্রতিবেশী দেশ ভারত এর প্রমাণ। ২০২৩ সালে জনশক্তি রফতানি থেকে তাদের আয় ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। মেক্সিকো, চীন ও পূর্ব এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশ ফিলিপাইন রয়েছে তাদের পরেই। এ দেশগুলো বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে মূলত দক্ষ শ্রমিক রফতানি করে। বাংলাদেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অদক্ষ শ্রমিক রফতানি করে। অদক্ষরা শুধু কম বেতন পান এমন নয়, সাথে জোটে অপমান, লাঞ্ছনা ও যখন তখন চাকরিচ্যুতি। প্রায়ই তাদের খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়। উল্টো নিজের জমিজমা ঘটিবাটি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার দায় শোধ করতে হয়। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি কখনো অনুসরণ করা হয়নি। নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণকেন্দ্র। যেগুলো আছে সেগুলোর উপযুক্ত ব্যবহারও নেই। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অবহেলা, অনিয়ম এবং জনশক্তি রফতানিকারকদের কারণে অনেকে প্রায়ই সর্বস্বান্ত হন। উপযুক্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে দেশ কতটা বঞ্চিত হচ্ছে, ফিলিপাইনের সাথে তুলনা করলে বোঝা যায়। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৯০ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিক ২০১৭ সালে দেশে পাঠিয়েছেন এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার। একই সময় ফিলিপাইনের ৬৫ লাখ শ্রমিক নিজ দেশে পাঠান তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার। সুতরাং দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে। সেই সাথে দরকষাকষি করে উপযুক্ত মজুরি আদায় করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। জনশক্তি রফতানি বিগত দুই বছরে বেশ বেড়েছে। গত বছর জনশক্তি রফতানি রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এ খাতে আয় সেই তুলনায় বাড়েনি। ২২০০ কোটি ডলারের নিচে থমকে আছে। অর্থাৎ প্রবাসী শ্রমিকরা উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারছেন না। বিদেশে সাধারণত সড়ক ও ভবন নির্মাণ, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, তৈরী পোশাক, রেস্তোরাঁ, গাড়ি চালনা, নার্স, গৃহকর্মী ও কৃষির মতো টেকনিক্যাল কাজে শ্রমিকের চাহিদা। এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা সম্ভব হলেও সেদিকে আমাদের মনোযোগ নেই। তাই আমরা বিপুল জনশক্তি বিদেশে পাঠিয়েও আয় করছি সামান্য। তৈরী পোশাকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আমরা কেবল নিম্ন শ্রেণীর পোশাক রফতানি করি। উচ্চমানের পোশাক তৈরি করি না।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

জনশক্তি রফতানি বাড়ছে’ বাড়ছে না রেমিট্যান্স

আপলোড টাইম : ০৩:৪৯:২২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৪

বাংলাদেশের অর্থনীতি স্বনির্ভর নয়, শক্তিশালীও নয়। অর্থনীতির প্রধান দু’টি খাত পোশাক ও জনশক্তি রফতানি। পোশাক রফতানি করে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ হলেও এর ভিত্তি নড়বড়ে। তুলা উৎপাদন, সুতা বুননসহ এর পেছনে যে দীর্ঘ চেইন রয়েছে এক্সেসরিজের তার সামান্য অংশ আমরা নিজেরা করি। যেকোনো সময় এতে ধস নামতে পারে। দ্বিতীয় প্রধান খাত জনশক্তি রফতানি। এটি কখনো একটি দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট নয়। যার প্রমাণ আমরা নিজেরাই। স্বাধীনতার পর থেকে আমরা জনশক্তি রফতানি করছি। কিন্তু গত ৫০ বছরেও স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরোতে পারিনি। জনশক্তি রফতানি করে কোনো দেশ শক্তিশালী অর্থনীতি গড়েছে এমন উদাহরণ নেই। তবে এ খাতকে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করা হলে যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। প্রতিবেশী দেশ ভারত এর প্রমাণ। ২০২৩ সালে জনশক্তি রফতানি থেকে তাদের আয় ১০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। মেক্সিকো, চীন ও পূর্ব এশিয়ার ক্ষুদ্র দেশ ফিলিপাইন রয়েছে তাদের পরেই। এ দেশগুলো বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে মূলত দক্ষ শ্রমিক রফতানি করে। বাংলাদেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অদক্ষ শ্রমিক রফতানি করে। অদক্ষরা শুধু কম বেতন পান এমন নয়, সাথে জোটে অপমান, লাঞ্ছনা ও যখন তখন চাকরিচ্যুতি। প্রায়ই তাদের খালি হাতে দেশে ফিরতে হয়। উল্টো নিজের জমিজমা ঘটিবাটি বিক্রি করে বিদেশ যাওয়ার দায় শোধ করতে হয়। বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি কখনো অনুসরণ করা হয়নি। নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণকেন্দ্র। যেগুলো আছে সেগুলোর উপযুক্ত ব্যবহারও নেই। সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অবহেলা, অনিয়ম এবং জনশক্তি রফতানিকারকদের কারণে অনেকে প্রায়ই সর্বস্বান্ত হন। উপযুক্ত বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে দেশ কতটা বঞ্চিত হচ্ছে, ফিলিপাইনের সাথে তুলনা করলে বোঝা যায়। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৯০ লাখের বেশি প্রবাসী শ্রমিক ২০১৭ সালে দেশে পাঠিয়েছেন এক হাজার ৪০০ কোটি ডলার। একই সময় ফিলিপাইনের ৬৫ লাখ শ্রমিক নিজ দেশে পাঠান তিন হাজার ৩০০ কোটি ডলার। সুতরাং দক্ষ শ্রমিক পাঠাতে হবে। সেই সাথে দরকষাকষি করে উপযুক্ত মজুরি আদায় করার ব্যবস্থাও থাকতে হবে। জনশক্তি রফতানি বিগত দুই বছরে বেশ বেড়েছে। গত বছর জনশক্তি রফতানি রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে ১৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু এ খাতে আয় সেই তুলনায় বাড়েনি। ২২০০ কোটি ডলারের নিচে থমকে আছে। অর্থাৎ প্রবাসী শ্রমিকরা উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ আয় করতে পারছেন না। বিদেশে সাধারণত সড়ক ও ভবন নির্মাণ, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, তৈরী পোশাক, রেস্তোরাঁ, গাড়ি চালনা, নার্স, গৃহকর্মী ও কৃষির মতো টেকনিক্যাল কাজে শ্রমিকের চাহিদা। এসব ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতি বছর লাখ লাখ দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা সম্ভব হলেও সেদিকে আমাদের মনোযোগ নেই। তাই আমরা বিপুল জনশক্তি বিদেশে পাঠিয়েও আয় করছি সামান্য। তৈরী পোশাকের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। আমরা কেবল নিম্ন শ্রেণীর পোশাক রফতানি করি। উচ্চমানের পোশাক তৈরি করি না।