ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

খাদ্যপণ্যের বাজারদর উচ্চমূল্যে স্থির; খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বাড়বে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০২:১৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৮৮ বার পড়া হয়েছে

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। মাথাপিছু গড় ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। ঋণগ্রস্ত পরিবার হিসেবে এ অঙ্ক আরো অনেক বেশি। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষকে বেশি ঋণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। একই সরকারি সংস্থার তথ্য, ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে ২১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যক্তি মাঝারি বা মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। ২০২৩ সালে এ অবস্থার নিশ্চয় আরো অবনতি হয়েছে, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। দীর্ঘ দিন ধরে খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি এখন দুই অঙ্কের ঘরে থাকায় সব ধরনের খাবার অত্যন্ত চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রায় সব উপার্জন খরচ করতে হচ্ছে খাবার কিনতে। খাদ্যপণ্যের বাজারের অবস্থা কেমন তা বোঝা যাবে আলুর দরকে নমুনা হিসেবে নিলে। ঢাকার বাজারে এখন চালের চেয়ে আলু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে আলুর দাম। অন্যদিকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও চিনি আগের উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে শীতকালীন সবজি ও ব্রয়লার মুরগির দাম আরো বেড়েছে। আটা-ময়দা, ডাল, তেলের মতো পণ্য আগে উঁচু দামে বিক্রি হচ্ছিল। এসব পণ্যের দামও কমেনি।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাজারে প্রতি কেজি নতুন ও পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উভয় ধরনের আলুর দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। সাধারণত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে নতুন আলু আসে। এরপর এর দাম কমতে শুরু করে। মৌসুম শুরু হওয়ার পর বাজারে নতুন আলু এসেছে। কিছু পুরোনো আলুও এখনো বাজারে আছে। তবু খাদ্যপণ্যটির দাম কমছে না। গত বছরের এ সময়ে আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ১৬-২২ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। টিসিবির বাজারদর অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল এখন ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি চাল পাওয়া যায় ৫০-৫৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি সরু চালের দাম পড়ছে ৬০-৭৫ টাকার মধ্যে। ফলে সব ধরনের মোটা ও মাঝারি চালের চেয়ে আলুর দাম এখন বেশি পড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে আলুর দাম সরু চালকেও ছাড়িয়ে গেছে। আলুর মতো পেঁয়াজের বাজার এখনো চড়া। প্রতি কেজি নতুন দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। পুরোনো দেশী পেঁয়াজের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা। এদিকে শীতের শুরুতে বেশির ভাগ সবজির দাম কমতে শুরু করলেও এর বাজার আবার চড়ে গেছে। অথচ এই সময় শীতের সবজির দাম কেন বাড়বে, তার কোনো জবাব কারো কাছে নেই। আমরা মনে করি, খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে না পারলে দেশে সাধারণ মানুষের জীবনমান আরো তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। আরো বেশি সংখ্যক মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। তাই তাদের জীবন সহজ করতে সরকারকে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

খাদ্যপণ্যের বাজারদর উচ্চমূল্যে স্থির; খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা বাড়বে

আপলোড টাইম : ০২:১৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩

উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের প্রায় ৩৭ শতাংশ মানুষ ঋণ করে সংসার চালাচ্ছেন। বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে একটি পরিবারের গড় ঋণ ৭৩ হাজার ৯৮০ টাকা। মাথাপিছু গড় ঋণ ১৭ হাজার ৩৬৬ টাকা। ঋণগ্রস্ত পরিবার হিসেবে এ অঙ্ক আরো অনেক বেশি। বিশেষ করে শহরাঞ্চলের মানুষকে বেশি ঋণ করতে হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) খানা আয়-ব্যয় জরিপ-২০২২-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। একই সরকারি সংস্থার তথ্য, ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে ২১ দশমিক ১১ শতাংশ ব্যক্তি মাঝারি বা মারাত্মক খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ছিলেন। ২০২৩ সালে এ অবস্থার নিশ্চয় আরো অবনতি হয়েছে, এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। দীর্ঘ দিন ধরে খাদ্যদ্রব্যের উচ্চমূল্যের জাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছেন দেশের সাধারণ মানুষ। খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি এখন দুই অঙ্কের ঘরে থাকায় সব ধরনের খাবার অত্যন্ত চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে স্বল্প ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রায় সব উপার্জন খরচ করতে হচ্ছে খাবার কিনতে। খাদ্যপণ্যের বাজারের অবস্থা কেমন তা বোঝা যাবে আলুর দরকে নমুনা হিসেবে নিলে। ঢাকার বাজারে এখন চালের চেয়ে আলু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ফলে দরিদ্র মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে আলুর দাম। অন্যদিকে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও চিনি আগের উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে শীতকালীন সবজি ও ব্রয়লার মুরগির দাম আরো বেড়েছে। আটা-ময়দা, ডাল, তেলের মতো পণ্য আগে উঁচু দামে বিক্রি হচ্ছিল। এসব পণ্যের দামও কমেনি।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বাজারে প্রতি কেজি নতুন ও পুরোনো আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে উভয় ধরনের আলুর দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়েছে। সাধারণত ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাজারে নতুন আলু আসে। এরপর এর দাম কমতে শুরু করে। মৌসুম শুরু হওয়ার পর বাজারে নতুন আলু এসেছে। কিছু পুরোনো আলুও এখনো বাজারে আছে। তবু খাদ্যপণ্যটির দাম কমছে না। গত বছরের এ সময়ে আলুর দাম ছিল প্রতি কেজি ১৬-২২ টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত এক বছরে আলুর দাম বেড়েছে ২২৯ শতাংশ। টিসিবির বাজারদর অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল এখন ৪৮-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাঝারি চাল পাওয়া যায় ৫০-৫৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি সরু চালের দাম পড়ছে ৬০-৭৫ টাকার মধ্যে। ফলে সব ধরনের মোটা ও মাঝারি চালের চেয়ে আলুর দাম এখন বেশি পড়ছে। কিছু ক্ষেত্রে আলুর দাম সরু চালকেও ছাড়িয়ে গেছে। আলুর মতো পেঁয়াজের বাজার এখনো চড়া। প্রতি কেজি নতুন দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকায়। পুরোনো দেশী পেঁয়াজের দাম পড়ছে প্রতি কেজি ১৫০-১৬০ টাকা। এদিকে শীতের শুরুতে বেশির ভাগ সবজির দাম কমতে শুরু করলেও এর বাজার আবার চড়ে গেছে। অথচ এই সময় শীতের সবজির দাম কেন বাড়বে, তার কোনো জবাব কারো কাছে নেই। আমরা মনে করি, খাদ্যপণ্যের উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে না পারলে দেশে সাধারণ মানুষের জীবনমান আরো তলানিতে গিয়ে ঠেকবে। আরো বেশি সংখ্যক মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। তাই তাদের জীবন সহজ করতে সরকারকে খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় করতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।