খাদ্যে স্বনির্ভরতার প্রচারণা, বাস্তবতা কী তাই
- আপলোড টাইম : ১০:৩৬:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৭৯ বার পড়া হয়েছে
সরকারি বয়ানে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কিন্তু বাস্তবতা হলো- বিশ্বের খাদ্য আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে আমাদের দেশ ৯ কোটি ৩৩ লাখ টনের মতো কৃষিপণ্য উৎপাদন করেছে। একই বছর বিশ্ববাজার থেকে প্রায় সোয়া কোটি টন খাদ্যপণ্য আমদানি করা হয়। এখনো খাদ্য আমদানি ব্যয়ের সবচেয়ে বড় অংশ খরচ হয় গম, ভোজ্যতেল ও গুঁড়া দুধে। বিশ্ব খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক বার্ষিক পরিসংখ্যান পুস্তিকা-২০২৩-এ এসব তথ্য জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এফএও’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্ববাজার থেকে খাদ্য আমদানির ওপরে বাংলাদেশের নির্ভরশীলতা বাড়ছে। ২০১০ সালে যেখানে বাংলাদেশের মোট খাদ্য চাহিদার ৯ দশমিক ৩ শতাংশ আমদানি করেছে, ২০২২ সালে বেড়ে ১১ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে চাল, গম ও ভোজ্যতেলের আমদানি বাড়ছে। তবে ডলার-সঙ্কটে গত বছরের তুলনায় এ বছর চাল আমদানি হয়নি বললে চলে। গমের আমদানিও স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। যদিও ২২টি কৃষিপণ্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় স্থান পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে চাল, মসুর ডাল, আলু, পেঁয়াজ, চায়ের মতো পণ্য যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফল। এর পরও বিশ্বের প্রধান ছয়টি খাদ্যপণ্যের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু চাল উৎপাদনে তৃতীয় অবস্থানে। বাকি প্রধান কৃষিপণ্যগুলোর মধ্যে গম, ভুট্টা, চিনি, ভোজ্যতেল ও আলু উৎপাদনে বাংলাদেশের নাম শীর্ষ পাঁচ দেশের মধ্যে নেই। এফএও’র প্রতিবেদন মতে, বাংলাদেশে আমদানিনির্ভর খাদ্যপণ্যের দাম বেশি। ভোজ্যতেল, গোশত ও দুধের মতো পুষ্টিকর খাদ্যগুলোর মাথাপিছু ভোগ সবচেয়ে কম। অবশ্য দেশে উৎপাদিত খাদ্যপণ্য যেমন চাল, সবজি, মাছ ও ফলের মাথাপিছু ভোগের দিক থেকে দেশের মানুষ ভালো অবস্থানে আছে। বিশ্বে প্রত্যেক মানুষ গড়ে দিনে ২ হাজার ৯৭৮ ক্যালরি বা খাদ্যশক্তি গ্রহণ করে। এশিয়ায় তা গড়ে ২ হাজার ৯৩১ ক্যালরি। বাংলাদেশে মাথাপিছু ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ ২ হাজার ৬১৪ ক্যালরি। বাংলাদেশের মোট খাদ্যশক্তির মধ্যে ১ হাজার ২৮৮ ক্যালরি আসে চাল ও গম বা দানাদার খাদ্য থেকে। এর পর ভোজ্যতেল ২০৩, চিনি ৮৩, ফল ৯৪ ও আলু থেকে ১৭৫ ক্যালরি আসে। মাত্র ২০ ক্যালরি গোশত, ৫৫ ক্যালরি দুধ ও ডিম থেকে, কোমল পানীয় থেকে ৪০ ক্যালরি এবং মাছ থেকে ৫২ ক্যালরি খাদ্যশক্তি নেয় বাংলাদেশের মানুষ। লক্ষণীয় যে, সরকার শুধু চাল উৎপাদনের ভিত্তিতেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা বোঝাতে চায়। কিন্তু একজন মানুষের জীবন ধারণের জন্য কেবল সর্করা জাতীয় খাবার নয় আরো অনেক কিছু দরকার। চাই খাদ্যমানে ভরপুর খাবার। এটি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনে আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। সঙ্গত কারণে আমাদের পুষ্টিকর খাবারের উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি এ ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। দেশে উৎপাদিত খাদ্য থেকে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া সম্ভব। আমদানিনির্ভর পুষ্টিকর খাবারের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশী সবজি ও মাছ খাওয়া বাড়াতে হবে। তা হলেই আগামী প্রজন্ম সুস্থ স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারবে।