ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মুখবুজে থাকছেন যৌনপীড়নের শিকার ছাত্রীরা; প্রচলিত ব্যবস্থা অনুকূলে নয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৩০:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৯৩ বার পড়া হয়েছে

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্ঞানের আলো বিতরণ করে এবং নীতি-নৈতিকতা শিখায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন-খারাবির চর্চা হচ্ছে। ছাত্ররা জড়িয়ে পড়ছেন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। আরেকটি সমস্যা উচ্চ শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে গভীরে ক্ষয় করে দিচ্ছে। তা হলো ছাত্রীদের ওপর যৌননিপীড়ন। ছাত্রীরা যেসব শিক্ষকের কাছে আশ্রয় পাবেন; সেসব শিক্ষকের একটি অংশ এ অপরাধ করছেন। তারা জোট পাকিয়ে অপরাধের বিচারে বাধা দিচ্ছেন। মানসম্মান রক্ষা ও কোনোরকমে শিক্ষাজীবন শেষের তাগিদে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা নিপীড়িত হয়েও মুখবুজে সহ্য করে যান। একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌননিপীড়নের শিকার ৯০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেন না। যৌননিপীড়ন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা চালায়। এতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ২০০ ছাত্রী অংশ নেন। লক্ষণীয়, ৫৬ শতাংশ নিপীড়ক তাদের সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাদের ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসা এবং ৯ শতাংশ খোদ তাদের শিক্ষক। নিপীড়নের শিকার হয়ে ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেন। তাদের মধ্যে ৫ শতাংশ শিক্ষকের কাছে এবং ৫ শতাংশ যৌননিপীড়ন প্রতিরোধে গঠিত সেলের কাছে। নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য ও ৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানির। ছাত্রীরা জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী, শিক্ষকরা তেমন সাহায্য করেন না এবং তাদের মনোভাবও ততটা সহযোগিতাপূর্ণ নয়। এ অবস্থায় নিপীড়িত ছাত্রীরা অসহায় বোধ করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে করা গবেষণায় যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তার বাস্তবতা দেশের সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সেটি ক্ষমতাসীনদের আসকারায় মাত্রা ছাড়িয়েছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ ছাত্র এক ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। তাদের মধ্যে দু’জন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এমন জঘন্য কাণ্ড করার সাহস তারা পেয়েছিলেন কারণ আগে যৌননিপীড়নের আরো কয়েকটি ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটেছিল বলে। ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ওইসব দোষী পার পেয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌননিপীড়ন একটি সাধারণ প্রবণতা। নারী শিক্ষকরাও সহকর্মীদের দ্বারা যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার মেলে না। অন্যদিকে, নিপীড়নকারী শিক্ষকরা যদি হন প্রভাবশালী তাহলে বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। ক্ষেত্রবিশেষে পীড়নের শিকার নারী শিক্ষকদের ফের লাঞ্ছিত হওয়া ঘটনা ঘটেছে। যদিও কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বন্ধে আইন রয়েছে। আইনের বিধান মতে, প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর প্রতিরোধে সেল গঠন করার কথা থাকলেও সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা গঠিত হয়নি। যেখানে সেল রয়েছে, সেখানেও পীড়নের শিকার নারীদের জন্য প্রতিকার মিলছে না। দেশে আইনের শাসন দুর্বল হওয়ায় যৌননিপীড়নের শিকার হয়ে নারীরা উল্টো চাপে পড়ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য পাচ্ছেন না। এদিকে আমাদের বিচারব্যবস্থা পুরোপুরি কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। পুলিশের কাছে গেলে যেমন সহযোগিতা না পাওয়ার ঝুঁকি থাকে, পাশাপাশি রয়েছে চরিত্রহননের শঙ্কা। এতে করে ভুক্তভোগীরা একঘরে হয়ে দুর্বিষহ জীবনের মধ্যে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নারী কোনো উপায় না পেয়ে আত্মহত্যা করে রাষ্ট্র্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিশোধ নেয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন। বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নারীদের জন্য একটি নিরাপদ অঙ্গন কল্পনা সত্যি খুব কঠিন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

মুখবুজে থাকছেন যৌনপীড়নের শিকার ছাত্রীরা; প্রচলিত ব্যবস্থা অনুকূলে নয়

আপলোড টাইম : ১১:৩০:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জ্ঞানের আলো বিতরণ করে এবং নীতি-নৈতিকতা শিখায়। আমরা দেখতে পাচ্ছি, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন-খারাবির চর্চা হচ্ছে। ছাত্ররা জড়িয়ে পড়ছেন চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে। আরেকটি সমস্যা উচ্চ শিক্ষপ্রতিষ্ঠানে গভীরে ক্ষয় করে দিচ্ছে। তা হলো ছাত্রীদের ওপর যৌননিপীড়ন। ছাত্রীরা যেসব শিক্ষকের কাছে আশ্রয় পাবেন; সেসব শিক্ষকের একটি অংশ এ অপরাধ করছেন। তারা জোট পাকিয়ে অপরাধের বিচারে বাধা দিচ্ছেন। মানসম্মান রক্ষা ও কোনোরকমে শিক্ষাজীবন শেষের তাগিদে ভুক্তভোগী ছাত্রীরা নিপীড়িত হয়েও মুখবুজে সহ্য করে যান। একটি জরিপে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌননিপীড়নের শিকার ৯০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেন না। যৌননিপীড়ন নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণা চালায়। এতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ২০০ ছাত্রী অংশ নেন। লক্ষণীয়, ৫৬ শতাংশ নিপীড়ক তাদের সহপাঠী। ২৪ শতাংশ তাদের ছোট বা বড়। ১১ শতাংশ ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে আসা এবং ৯ শতাংশ খোদ তাদের শিক্ষক। নিপীড়নের শিকার হয়ে ১০ শতাংশ ছাত্রী অভিযোগ করেন। তাদের মধ্যে ৫ শতাংশ শিক্ষকের কাছে এবং ৫ শতাংশ যৌননিপীড়ন প্রতিরোধে গঠিত সেলের কাছে। নির্যাতনের ৩০ শতাংশ বাজে মন্তব্য ও ৬০ শতাংশ সাইবার হয়রানির। ছাত্রীরা জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী, শিক্ষকরা তেমন সাহায্য করেন না এবং তাদের মনোভাবও ততটা সহযোগিতাপূর্ণ নয়। এ অবস্থায় নিপীড়িত ছাত্রীরা অসহায় বোধ করেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে করা গবেষণায় যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তার বাস্তবতা দেশের সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিপীড়নের মাত্রা বেড়েছে। কিছু ক্ষেত্রে সেটি ক্ষমতাসীনদের আসকারায় মাত্রা ছাড়িয়েছে। ২০২২ সালের জুলাইয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ ছাত্র এক ছাত্রীকে বেঁধে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ করেন। তাদের মধ্যে দু’জন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। এমন জঘন্য কাণ্ড করার সাহস তারা পেয়েছিলেন কারণ আগে যৌননিপীড়নের আরো কয়েকটি ঘটনা ক্যাম্পাসে ঘটেছিল বলে। ক্ষমতার সাথে সম্পৃক্ত থাকায় ওইসব দোষী পার পেয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌননিপীড়ন একটি সাধারণ প্রবণতা। নারী শিক্ষকরাও সহকর্মীদের দ্বারা যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এসব ক্ষেত্রে প্রতিকার মেলে না। অন্যদিকে, নিপীড়নকারী শিক্ষকরা যদি হন প্রভাবশালী তাহলে বিচার পাওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। ক্ষেত্রবিশেষে পীড়নের শিকার নারী শিক্ষকদের ফের লাঞ্ছিত হওয়া ঘটনা ঘটেছে। যদিও কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি বন্ধে আইন রয়েছে। আইনের বিধান মতে, প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এর প্রতিরোধে সেল গঠন করার কথা থাকলেও সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তা গঠিত হয়নি। যেখানে সেল রয়েছে, সেখানেও পীড়নের শিকার নারীদের জন্য প্রতিকার মিলছে না। দেশে আইনের শাসন দুর্বল হওয়ায় যৌননিপীড়নের শিকার হয়ে নারীরা উল্টো চাপে পড়ছেন। প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্য পাচ্ছেন না। এদিকে আমাদের বিচারব্যবস্থা পুরোপুরি কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে। পুলিশের কাছে গেলে যেমন সহযোগিতা না পাওয়ার ঝুঁকি থাকে, পাশাপাশি রয়েছে চরিত্রহননের শঙ্কা। এতে করে ভুক্তভোগীরা একঘরে হয়ে দুর্বিষহ জীবনের মধ্যে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে নারী কোনো উপায় না পেয়ে আত্মহত্যা করে রাষ্ট্র্রের বিরুদ্ধে এক ধরনের প্রতিশোধ নেয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন। বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় নারীদের জন্য একটি নিরাপদ অঙ্গন কল্পনা সত্যি খুব কঠিন।