ট্রেনে আগুনে পুড়ে ৪ জনের মৃত্যু; স্বাধীন তদন্ত করুন
- আপলোড টাইম : ০৯:২২:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৭৩ বার পড়া হয়েছে
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যে বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনাদের ডাকা গত মঙ্গলবারের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের দিন ভোরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনে রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডে এক শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে কমলাপুর রেলওয়ে থানায় রেলওয়ের ট্রেন পরিচালক বাদি হয়ে একটি মামলা করেছেন। তবে মামলায় কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাত দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন ও দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় ওই মামলা করা হয়।
অগ্নিকাণ্ডের শিকার মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী নূরুল হক আগুন লাগার পর নাখালপাড়ায় নামতে গিয়ে আহত হন। ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বলেন, ভোরে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। এরপর বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ট্রেনটি রওনা করে। মহাখালী আসার আগে রেলের পোশাক পরিহিত দুই ব্যক্তি হাতে ফায়ার এস্টিংগুইসার নিয়ে বগির মধ্যে ঘোরাফেরা করছিলেন। তার ধারণা, ওই দুই ব্যক্তি আগুন লাগিয়ে পাশের বগি দিয়ে পালিয়ে যান।
তেজগাঁওয়ে ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার ও বিরোধী দল পরস্পরকে দোষারোপ করছে। ফলে মর্মান্তিক এ ঘটনার প্রকৃত সত্য আদৌ উদঘাটন হবে কি-না তা নিয়ে জনমনে সংশয় দেখা দিয়েছে। এমন আশঙ্কার সঙ্গত কারণ হলো- ইতোমধ্যে এ ঘটনার দায় চাপাতে সরকারের সুরে কথা বলছে পুলিশপ্রশাসন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বলেছেন, এর সাথে সরকারবিরোধী আন্দোলনকারীদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তিনি বলেন, একই ট্রেনে কয়েক দিন আগে স্লিপার খুলে ফেলা হয়েছিল। এর সাথে রাষ্ট্রক্ষমতার নিশ্চিত সম্পর্ক আছে।
এখন সবার জিজ্ঞাসা- তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় আন্দোলনকারীদের সম্পৃক্ততা আছে, এ কথা কিসের আলোকে এবং কোন তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বললেন; তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। কারণ, তদন্ত শুরুর আগে তদন্তকারী সংস্থা এমন কথা বললে সন্দেহের অবকাশ থাকে বৈকি। পুলিশ প্রশাসনের এর উত্তর সততার সাথে দেয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে সব উচিত কাজ যথাসময়ে হয়েছে এমন নজির খুব একটা নেই। তার ওপর গত দেড় দশক ধরে দেশে বাছাই করা ঘটনার প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। আসলে সরকার যে ঘটনার সুরাহা করতে চায়, তার শুধু সমাধান হয়েছে। বাকি ঘটনা রহস্যাবৃত থেকে যাচ্ছে। যেমন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম সংসদ নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনো দেখা গেছে, বাসে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। সে সবের দায় ঢালাওভাবে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর চাপিয়েছে বর্তমান সরকার। কৌতূহলোদ্দীপক হলো- এত দিনেও ওইসব সহিংসতার রহস্য উন্মোচন পুলিশপ্রশাসন করতে পারেনি।
এসব কারণে আশঙ্কা, অতীতের মতো সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত ট্রেনে নাশকতার ঘটনাগুলোর সঠিক তদন্ত পুলিশপ্রশাসন গুরুত্বের সাথে নেবে বলে মনে হয় না। সংস্থাটি রাষ্ট্র কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে সরকারের সুবিধা হবে এমন কাজ করতে বেশি আগ্রহী। ফলে এ বাহিনী দিয়ে কোনো ঘটনার সঠিক তদন্তের আশা করা বাতুলতা মাত্র। তাই ট্রেনে আগুন দেয়ার মতো নাশকতাসহ সব সহিংসতার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। তা হলে আশা করা যায়, প্রকৃত অপরাধীরা শনাক্ত হবে। সেই আলোকে তাদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।