অসচেতনতা ও বাছবিচারহীন প্রয়োগে; অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকারিতা হারাচ্ছে
- আপলোড টাইম : ১১:০৭:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৮৮ বার পড়া হয়েছে
রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধের প্রয়োজন রয়েছে। আবার একই ওষুধ হতে পারে আরোগ্য ঘটানোর পরিবর্তে স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ। ওষুধের ভুল ও মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগে আমরা প্রায়ই ভুগি। কিছু ক্ষেত্রে মানুষের প্রাণও যাচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন রোগীরা। অ্যান্টিবায়োটিকের আবিষ্কার বড় বড় রোগের প্রতিরোধে এক যুগান্তকারী অগ্রগতি নিয়ে আসে। বিগত ১০০ বছরে প্রাণঘাতী রোগের মোকাবেলায় এর কার্যকর প্রয়োগ হয়েছে। কিন্তু বিগত এক দশকে এন্টিবায়োটিক মানুষের জীবনে বিপদের কারণ হয়ে উঠছে। এর ভুল ও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে রোগের জীবাণু এই ওষুধের প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। সোজা কথায়, অ্যান্টিবায়োটিকে আর আগের মতো কাজ করছে না। কিছু ক্ষেত্রে উল্টো ঘাতক রোগের কারণ হয়ে উঠছে। অ্যান্টিবায়োটিক রোগ সারায়। কিন্তু কুইনাইনের গল্পের মতো, অ্যান্টিবায়োটিক সারাবে কে? এটি মূলত ঘটেছে দায়িত্বজ্ঞানহীন ব্যবহারের কারণে। ডাক্তাররা ত্বরিত ফল পাওয়ার জন্য এর বাছবিচারহীন প্রয়োগ করেছেন। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হচ্ছে, পাড়ামহল্লায় ফার্মেসির লোকেরাও কোনো রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া রোগীদের এটি সরবরাহ করছে। সাধারণ মানুষও অবলীলায় রোগমুক্তির আশায় এটি সেবন করছেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অপব্যবহার অপরাধের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতাবিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনোলজি বিভাগ। এ উপলক্ষে চিকিৎসক ও গবেষকরা আলোচনায় অংশ নেন। তারা জানান, ওষুধের যথেচ্ছ ও অযৌক্তিক ব্যবহার হচ্ছে। সে কারণে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও ছত্রাক ওষুধ-প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। তাই এসব জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত মানুষ ওষুধে সুস্থ হয়ে উঠছে না। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ২০১৯ সালে বিশ্বে এ কারণে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। বাংলাদেশে এ সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। উপস্থাপিত প্রতিবেদনে ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বিএসএমএমইউ পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা হয়। গবেষণায় ৭২ হাজার ৬৭০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা গেছে, কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে কোনো কোনো জীবাণু ৭৫ থেকে ৯০ শতাংশ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। গবেষকরা বলছেন, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক সংরক্ষিত হিসেবে বিবেচিত। একান্ত বিপদে না পড়লে তা ব্যবহার করা উচিত নয়। খুব সামান্য কারণে এগুলো ডাক্তাররা ব্যবস্থাপত্রে লিখছেন। গবেষণায় এ ধরনের একটি সংরিক্ষত অ্যান্টিবায়োটিক কলিস্টিনের নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেল, ২ দশমিক ৮ শতাংশ ক্ষেত্রে তা কাজ করছে না। চিকিৎসা একটি উচ্চ নৈতিকতাবোধসম্পন্ন পেশা। শুধু রোগ নিরাময়ের কৌশল জানলে হয় না। মানব প্রজাতির স্বার্থকেও তাকে বিবেচনায় রাখতে হয়। চিকিৎসকরা অনেক ক্ষেত্রে সেটা রাখতে পারছেন না। অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ে ডাক্তারদের একাংশের মধ্যে নৈতিকতা বজায় রাখার তাগিদ দেখা যাচ্ছে না।
আমাদের দেশে নিবন্ধনকৃত চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করা নিষেধ। এই আইন বাস্তবায়নে প্রশাসন কখনো উদ্যোগী হয়েছে বলে দেখা যায় না। একইভাবে, চিকিৎসকদেরও পর্যবেক্ষণের আওতায় আনার কোনো তাগিদ জনস্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে দেখা যায় না। রাষ্ট্রপ্রণীত আইন অনুসরণ করলে কিছুটা উপকার পাওয়া যেতে পারে। রোগ শোক থেকে নিস্তার পেতে হলে কিংবা কিছুটা স্বস্তি পেতে হলে মানবপ্রজাতিকে কিছু নৈতিক দায়িত্বও পালন করতে হবে। সেজন্য ডাক্তার রোগী, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ সবার দায়িত্ব রয়েছে। সবার অবস্থান থেকে সতর্কতা অবলম্বন করলে অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা রক্ষায় তা কাজে আসতে পারে।