ইপেপার । আজ বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

প্রতারিত হয়ে শূন্য হাতে ফিরছেন প্রবাসীরা;অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কই

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:১৬:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৯৩ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত তৈরী পোশাক রফতানি হুমকিতে পড়েছে। মূলত গণতান্ত্রিক বিশ্বের আকাঙ্খার বিপরীতে সরকারের একরোখা অবস্থানে এই শঙ্কার মধ্যে পড়েছে দেশ। অচিরে পোশাক রফতানির প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে ক্রয়াদেশ বড় রকমে ধাক্কা খেতে পারে। এমন এক সময় রফতানিতে ধস নামছে যখন অন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত প্রবাসী আয়ও ক্রমে নেতিবাচক ধারায় প্রবাহিত। গত শতাব্দীর আশির দশকে জনশক্তি রফতানি শুরু হলেও এ খাতটি টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। তবে দেশ থেকে কোটি কোটি মানুষ প্রবাসে গেছেন। এ সময় আমরা দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে বেশি আয়ের পথ রচনা করার বদলে আদম পাচারের ফাঁক খুঁজেছি। ফলে আমরা এ খাত থেকে সর্বোচ্চ সুযোগ আদায় করার বদলে এক শ্রেণীর মানুষকে শোষিত ও প্রতারিত করার পথ করেছি।
সহযোগী একটি দৈনিকের খবর, শূন্য হাতে ফিরছেন লাখো প্রবাসী। প্রবাসে যাওয়া কর্মীদের একটি অংশ আদমপাচার চক্রের জালিয়াতির শিকার হন। এ চক্র বিদেশে লোভনীয় আয়ের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নিম্নবিত্তদের একটি অংশকে আকৃষ্ট করে। তাদের কাছ থেকে অর্থকড়ি হাতিয়ে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে চাকরির নিশ্চয়তা ছাড়া পাঠিয়ে দেয়। প্রবাসে গিয়ে তারা দেখতে পান; তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি সত্য নয়। যে কাজের নাম করে পাঠানো হয়েছে তা সত্যিকার অর্থে নেই। এ অবস্থায় তারা প্রতিকার পেতে কোনো কর্তৃপক্ষ পান না। চাকরি পাওয়া দূরে থাক, সেখানে আয় রোজগারের বিকল্প কোনো সুযোগ পান না। দালাল চক্রের স্থানীয় প্রতিনিধিরাও উধাও হয়ে যায়। এদিকে তারা উপযুক্ত কাগজপত্র না দেখাতে পেরে খেয়ে না খেয়ে বিদেশে অনিশ্চিত জীবনযাপন করেন। একপর্যায়ে পুলিশের হাতে আটক হন। শূন্য হাতে দেশে ফেরেন। সরল অসচেতন লোকেরা খপ্পরে পড়ে অনেক সময় শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দালালের হাতে তুলে দেন একটু ভালো রোজগার করে জীবন বদলানোর প্রত্যাশায়।
শূন্য হাতে ফেরা লোকদের সেবা দিতে বিমানবন্দরে একাধিক সংস্থা কাজ করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ প্রবাসী খালি হাতে দেশে ফিরছেন। বিমানবন্দরে তাদের উ™£ান্তের মতো পাওয়া যাচ্ছে। অভিবাসনসংক্রান্ত সংস্থার প্রাপ্ত তথ্যে অনুমান করা যাচ্ছে, বছরের প্রথম ১১ মাসে শূন্য হাতে ফেরা কর্মীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৩২৮ জন।
এভাবে নিঃস্ব হয়ে বিদেশ থেকে ফেরা লোকের সংখ্যা বছরে এক লাখের বেশি হবে। এসব লোককে সংশ্লিষ্ট দেশে আটক হয়ে জেলেও যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া আদম ব্যাপারীরা শুধু একটি নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ পেতে লোকজনকে বিদেশে পাঠায়। সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কাগজপত্র ঠিক নেই, শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নন। এসব মানুষ ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরছেন। অনেকে বিমানের টিকিটের টাকা বাড়ি ফিরে পরিশোধের পর পাসপোর্ট ফেরত নিচ্ছেন।
জনশক্তি রফতানিও আমাদের দেশে অনিয়ম দুর্নীতির একটি খাত। এটিকে অসাধু চক্র অপকৌশলে নিজেদের আয়ের মাধ্যম বানিয়েছে। এমন ঘটছে দশকের পর দশক ধরে। অথচ দেশে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বেশ কিছু গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। আমরা মনে করি, অসাধু চক্র উৎপাটন করা গেলে লোকজন প্রতারিত হবেন না। কাজটি করা কঠিন কিছু নয়। প্রত্যাশা, প্রতারিত প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে সরকার দাঁড়াবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

প্রতারিত হয়ে শূন্য হাতে ফিরছেন প্রবাসীরা;অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা কই

আপলোড টাইম : ১১:১৬:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩

বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান খাত তৈরী পোশাক রফতানি হুমকিতে পড়েছে। মূলত গণতান্ত্রিক বিশ্বের আকাঙ্খার বিপরীতে সরকারের একরোখা অবস্থানে এই শঙ্কার মধ্যে পড়েছে দেশ। অচিরে পোশাক রফতানির প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে ক্রয়াদেশ বড় রকমে ধাক্কা খেতে পারে। এমন এক সময় রফতানিতে ধস নামছে যখন অন্য প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত প্রবাসী আয়ও ক্রমে নেতিবাচক ধারায় প্রবাহিত। গত শতাব্দীর আশির দশকে জনশক্তি রফতানি শুরু হলেও এ খাতটি টেকসই ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়নি। তবে দেশ থেকে কোটি কোটি মানুষ প্রবাসে গেছেন। এ সময় আমরা দক্ষ জনবল বিদেশে পাঠানোর মাধ্যমে বেশি আয়ের পথ রচনা করার বদলে আদম পাচারের ফাঁক খুঁজেছি। ফলে আমরা এ খাত থেকে সর্বোচ্চ সুযোগ আদায় করার বদলে এক শ্রেণীর মানুষকে শোষিত ও প্রতারিত করার পথ করেছি।
সহযোগী একটি দৈনিকের খবর, শূন্য হাতে ফিরছেন লাখো প্রবাসী। প্রবাসে যাওয়া কর্মীদের একটি অংশ আদমপাচার চক্রের জালিয়াতির শিকার হন। এ চক্র বিদেশে লোভনীয় আয়ের চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে নিম্নবিত্তদের একটি অংশকে আকৃষ্ট করে। তাদের কাছ থেকে অর্থকড়ি হাতিয়ে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে চাকরির নিশ্চয়তা ছাড়া পাঠিয়ে দেয়। প্রবাসে গিয়ে তারা দেখতে পান; তাদের দেয়া প্রতিশ্রুতি সত্য নয়। যে কাজের নাম করে পাঠানো হয়েছে তা সত্যিকার অর্থে নেই। এ অবস্থায় তারা প্রতিকার পেতে কোনো কর্তৃপক্ষ পান না। চাকরি পাওয়া দূরে থাক, সেখানে আয় রোজগারের বিকল্প কোনো সুযোগ পান না। দালাল চক্রের স্থানীয় প্রতিনিধিরাও উধাও হয়ে যায়। এদিকে তারা উপযুক্ত কাগজপত্র না দেখাতে পেরে খেয়ে না খেয়ে বিদেশে অনিশ্চিত জীবনযাপন করেন। একপর্যায়ে পুলিশের হাতে আটক হন। শূন্য হাতে দেশে ফেরেন। সরল অসচেতন লোকেরা খপ্পরে পড়ে অনেক সময় শেষ সম্বলটুকু বিক্রি করে দালালের হাতে তুলে দেন একটু ভালো রোজগার করে জীবন বদলানোর প্রত্যাশায়।
শূন্য হাতে ফেরা লোকদের সেবা দিতে বিমানবন্দরে একাধিক সংস্থা কাজ করে। তাদের দেয়া তথ্যমতে, কয়েক মাস ধরে প্রতিদিন ২৫০-৩০০ প্রবাসী খালি হাতে দেশে ফিরছেন। বিমানবন্দরে তাদের উ™£ান্তের মতো পাওয়া যাচ্ছে। অভিবাসনসংক্রান্ত সংস্থার প্রাপ্ত তথ্যে অনুমান করা যাচ্ছে, বছরের প্রথম ১১ মাসে শূন্য হাতে ফেরা কর্মীর সংখ্যা ৭৮ হাজার ৩২৮ জন।
এভাবে নিঃস্ব হয়ে বিদেশ থেকে ফেরা লোকের সংখ্যা বছরে এক লাখের বেশি হবে। এসব লোককে সংশ্লিষ্ট দেশে আটক হয়ে জেলেও যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া আদম ব্যাপারীরা শুধু একটি নির্ধারিত অঙ্কের অর্থ পেতে লোকজনকে বিদেশে পাঠায়। সংশ্লিষ্ট দেশে গিয়ে দেখা যায়, তাদের কাগজপত্র ঠিক নেই, শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ নন। এসব মানুষ ব্যর্থ হয়ে দেশে ফিরছেন। অনেকে বিমানের টিকিটের টাকা বাড়ি ফিরে পরিশোধের পর পাসপোর্ট ফেরত নিচ্ছেন।
জনশক্তি রফতানিও আমাদের দেশে অনিয়ম দুর্নীতির একটি খাত। এটিকে অসাধু চক্র অপকৌশলে নিজেদের আয়ের মাধ্যম বানিয়েছে। এমন ঘটছে দশকের পর দশক ধরে। অথচ দেশে প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় রয়েছে। দেশের অভ্যন্তরে বেশ কিছু গোয়েন্দা সংস্থা রয়েছে। আমরা মনে করি, অসাধু চক্র উৎপাটন করা গেলে লোকজন প্রতারিত হবেন না। কাজটি করা কঠিন কিছু নয়। প্রত্যাশা, প্রতারিত প্রত্যেক ব্যক্তির পক্ষে সরকার দাঁড়াবে।