বিজয় দিবসে দেশবাসীর প্রত্যাশা; ভাঙুক বিভেদের দেয়াল
- আপলোড টাইম : ১০:৫৯:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৯৯ বার পড়া হয়েছে
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। দিনটি আমাদের আত্মপরিচয় লাভের দিন। বিপুল রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের মহান স্বাধীনতা। এর মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ। ৫২তম বিজয়ের পূর্তির এই ক্ষণে লাল সূর্য নতুন ‘আলোর ঝর্ণাধারা’ বয়ে আনবে জাতির জীবনে- এটিই কাম্য।কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচারের কথা বলা হয়েছে তা আজো বাস্তবায়ন হয়নি। স্বাধীনতার ৫২ বছরে আমাদের অর্জন যেমন ঈর্ষণীয়, তেমনি ব্যর্থতাও কম নয়। অনুন্নত থেকে বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটতে যাচ্ছে। কিন্তু আর্থ-সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠা এখনো অনেক দূরে। বিশেষ করে ধনী ও দরিদ্রের ব্যবধান আকাশচুম্বী। স্বাধীনতার সুফল আমরা প্রতিটি মানুষের ঘরে পৌঁছে দিতে পেরেছি এমন নয়; বরং মুষ্টিমেয় মানুষের ঘরে যেন সব সুবিধা পুঞ্জীভূত হচ্ছে। আমাদের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা মুখ থুবড়ে পড়েছে। চেপে বসা কর্তৃত্ববাদী শাসনে নাগরিকের মৌলিক ও মানবাধিকারের আকুতি শূন্যে মিলিয়ে যাচ্ছে। জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে রাষ্ট্রের মালিকানা থেকে জনগণকে উচ্ছেদ করার কারণে। এ অবস্থা স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে কোনোভাবে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিজয় দিবস উদযাপনের সাথে সাথে এসব বিষয় নিয়ে ভেবে দেখার প্রকৃষ্ট সময় এখন। মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল দারিদ্র্যমুক্ত-শোষণমুক্ত স্বদেশ, যে বাংলাদেশ হবে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমুন্নত। জনগণ পাবেন সর্বজনীন মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও স্বাধীনভাবে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার স্বাধীনতা। নাগরিকরা পাবেন নিজের অবস্থান উত্তরণের সুযোগ। স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তিতে দীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়, সে মূল্যায়ন জরুরি।
পাঁচ দশকের বেশি সময়ে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কিছু সূচক বৈশ্বিক প্রশংসা কুড়িয়েছে। দেশবাসীর জীবনমানে বিপুল পরিবর্তন এসেছে। গ্রাম-শহরে উন্নয়ন দেখার মতো। গড়ে উঠেছে আকাশচুম্বী অট্টালিকা। কিন্তু গ্রাম-শহরে জীবনযাত্রার ফারাকও অনস্বীকার্য। ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য আকাশছোঁয়া। এ ব্যবধান ঘোচানোর রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়। এখনো দারিদ্র্যসীমায় বাস করে দেশের পাঁচ কোটি মানুষ। দুর্নীতি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। সুশাসনের অনুপস্থিতি এবং দুর্বল গণতন্ত্র এ জন্য দায়ী। তবে বৈষম্য দূর করে সাম্যভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র অর্জনে এখনো সক্ষম হইনি, এটিই বাস্তবতা। রাজনীতি ও প্রশাসনে গণতন্ত্র চর্চায় অনেক পিছিয়ে রয়েছি আমরা। সব মত-পথের মানুষের জন্য সমান ব্যবস্থা করা যায়নি। রাজনৈতিক বিভাজন পাহাড়সম। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারছে না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ হয়নি; বরং ক্ষেত্রবিশেষে উল্টোটাই ঘটেছে। ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতা, অন্যের অধিকার অস্বীকারের স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতার বিস্তার ঘটেছে। আমরা দেখছি, প্রায় একই সময় স্বাধীনতা লাভ করে অনেক দেশ উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে। নির্মাণ করেছে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। আমরা কেন পারিনি বা পারছি না সেটি ভেবে দেখা দরকার। স্বাধীনতাকামী মানুষ যে চেতনা নিয়ে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, সেই চেতনার যথাযথ মূল্যায়ন হওয়া দরকার। এ জন্য দরকার বিভেদের সব দেয়াল ভেঙে সুদৃঢ় জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠা। দরকার জাতীয় সমঝোতা, সম্প্রীতি ও ঐক্যের মহাসড়কে এগিয়ে চলা।