ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

রফতানির ১২ বিলিয়ন ডলার ফেরেনি,মুদ্রা পাচার আশকারা পাচ্ছে

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:১৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ১২৮ বার পড়া হয়েছে

মুদ্রা পাচারে বাংলাদেশ বিশ্বের একেবারে শীর্ষস্থানীয় দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অবস্থান ভারতের পরেই যদিও মাথাপিছু মুদ্রা পাচারে আমরা ভারতের চেয়ে বহু এগিয়ে। মূলত এই সরকারের অর্থনৈতিক অনিয়মের মধ্যে একটা শ্রেণি বিপুল মুদ্রা পাচার করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর তথ্যপ্রমাণ হাজির করে গেলেও সরকার এর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারের কাছে মুদ্রা পাচারকারী চক্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচয় গোপন থাকার কথা নয়। এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, সমাপ্ত অর্থবছরে পণ্য রফতানির ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে ফেরেনি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পরিবেশিত তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এর মধ্যে চার হাজার ৩৫৭ কোটি ডলারের আয় দেশে ফিরে এসেছে। রফতানির বাকি এক হাজার ১৯৯ কোটি ডলার দেশে আসেনি। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ২৫ পয়সা ধরে হিসাব করলে মোট এক লাখ ৩২ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। ইপিবির হিসাবে গত অর্থবছরে চার হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের তৈরী পোশাক রফতানি হয়। পোশাক রফতানি থেকে এসেছে তিন হাজার ৬৯৫ কোটি ডলার। বাকি এক হাজার চার কোটি ডলার ফেরেনি। বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ৮৪ শতাংশ তৈরী পোশাক থেকে আসে। একইভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং বিভিন্ন সেবা রফতানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে ফেরেনি। পণ্য রফতানির পুরো টাকা অর্থবছরের মধ্যে ফেরত আসবে এমন নয়, কিছু ক্ষেত্রে সেটি পরেও আসে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে রফতানি পণ্যের বিপরীতে আয় কম আসছে।
অর্থাৎ, ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এখানে একটি ঘাপলা থেকে যাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। ১২০ দিনের মধ্যে রফতানি আয় দেশে ফেরানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ দেশে না এলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে। সেটি করার বদলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও প্রকাশ করছে না। দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে অব্যাহত লুটপাটের ঘটনায়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পালন না করতে পারার চিত্র আমরা অব্যাহত দেখছি। কিছু ব্যাংকে প্রকাশ্য দিবালোকে অনিয়ম করা হচ্ছে অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
অর্থপাচার নিয়ে কাজ করা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়। এ অর্থের বেশির ভাগ বৈদেশিক বাণিজ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দেশটির মোট বাণিজ্যিক লেনদেনের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের শুরুতে জিএফআই এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। তাদের হিসাবে তখন পর্যন্ত ১০ বছরে গড়ে ৫৫ হাজার কোটি টাকা করে পাচার হয়েছে। এর পরের হিসাবে এই অঙ্কটা আরো বড় হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
চারটি প্রক্রিয়ায় মুদ্রা পাচার হচ্ছে- আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে, রফতানি মূল্য কম দেখিয়ে, হুন্ডি ও ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে। সরকার চাইলে পাচারকারীদের শনাক্ত করা কঠিন কিছু নয়। বিগত প্রায় এক দশক ধরে দেশ থেকে আশঙ্কাজনক হারে মুদ্রা পাচার হয়ে যাওয়ার খবর আসছে। তার বিপরীতে সরকারকে একবারে উদাসীন দেখা যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারের কোনো আয়োজন সরকার করেনি। এমনকি দেশের ভেতরে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোরদার করেনি। বলা যায়, এই মন্দ কাজকে এক প্রকারের প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। এভাবে চলতে পারে না। আমরা মনে করি, অচিরেই জাতির শত্রু মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

রফতানির ১২ বিলিয়ন ডলার ফেরেনি,মুদ্রা পাচার আশকারা পাচ্ছে

আপলোড টাইম : ১০:১৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩

মুদ্রা পাচারে বাংলাদেশ বিশ্বের একেবারে শীর্ষস্থানীয় দেশ। দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের অবস্থান ভারতের পরেই যদিও মাথাপিছু মুদ্রা পাচারে আমরা ভারতের চেয়ে বহু এগিয়ে। মূলত এই সরকারের অর্থনৈতিক অনিয়মের মধ্যে একটা শ্রেণি বিপুল মুদ্রা পাচার করে যাচ্ছে। বৈশ্বিক নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি বছর তথ্যপ্রমাণ হাজির করে গেলেও সরকার এর বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। সরকারের কাছে মুদ্রা পাচারকারী চক্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচয় গোপন থাকার কথা নয়। এ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ এক প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, সমাপ্ত অর্থবছরে পণ্য রফতানির ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে ফেরেনি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) পরিবেশিত তথ্যানুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পাঁচ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এর মধ্যে চার হাজার ৩৫৭ কোটি ডলারের আয় দেশে ফিরে এসেছে। রফতানির বাকি এক হাজার ১৯৯ কোটি ডলার দেশে আসেনি। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা ২৫ পয়সা ধরে হিসাব করলে মোট এক লাখ ৩২ হাজার ১৮৯ কোটি টাকা। ইপিবির হিসাবে গত অর্থবছরে চার হাজার ৬৯৯ কোটি ডলারের তৈরী পোশাক রফতানি হয়। পোশাক রফতানি থেকে এসেছে তিন হাজার ৬৯৫ কোটি ডলার। বাকি এক হাজার চার কোটি ডলার ফেরেনি। বাংলাদেশের পণ্য রফতানির ৮৪ শতাংশ তৈরী পোশাক থেকে আসে। একইভাবে পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং বিভিন্ন সেবা রফতানির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দেশে ফেরেনি। পণ্য রফতানির পুরো টাকা অর্থবছরের মধ্যে ফেরত আসবে এমন নয়, কিছু ক্ষেত্রে সেটি পরেও আসে। বাস্তবতা হচ্ছে, বিগত বছরগুলোতে ধারাবাহিকভাবে রফতানি পণ্যের বিপরীতে আয় কম আসছে।
অর্থাৎ, ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। এখানে একটি ঘাপলা থেকে যাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। ১২০ দিনের মধ্যে রফতানি আয় দেশে ফেরানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অর্থ দেশে না এলে বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে। সেটি করার বদলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামও প্রকাশ করছে না। দেশের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে অব্যাহত লুটপাটের ঘটনায়ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব পালন না করতে পারার চিত্র আমরা অব্যাহত দেখছি। কিছু ব্যাংকে প্রকাশ্য দিবালোকে অনিয়ম করা হচ্ছে অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে তারা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না।
অর্থপাচার নিয়ে কাজ করা সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়। এ অর্থের বেশির ভাগ বৈদেশিক বাণিজ্যে জালিয়াতির মাধ্যমে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দেশটির মোট বাণিজ্যিক লেনদেনের ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ কোনো না কোনোভাবে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের শুরুতে জিএফআই এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। তাদের হিসাবে তখন পর্যন্ত ১০ বছরে গড়ে ৫৫ হাজার কোটি টাকা করে পাচার হয়েছে। এর পরের হিসাবে এই অঙ্কটা আরো বড় হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
চারটি প্রক্রিয়ায় মুদ্রা পাচার হচ্ছে- আমদানি মূল্য বেশি দেখিয়ে, রফতানি মূল্য কম দেখিয়ে, হুন্ডি ও ভিওআইপি ব্যবসার মাধ্যমে। সরকার চাইলে পাচারকারীদের শনাক্ত করা কঠিন কিছু নয়। বিগত প্রায় এক দশক ধরে দেশ থেকে আশঙ্কাজনক হারে মুদ্রা পাচার হয়ে যাওয়ার খবর আসছে। তার বিপরীতে সরকারকে একবারে উদাসীন দেখা যাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারের কোনো আয়োজন সরকার করেনি। এমনকি দেশের ভেতরে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ও নজরদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে জোরদার করেনি। বলা যায়, এই মন্দ কাজকে এক প্রকারের প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। এভাবে চলতে পারে না। আমরা মনে করি, অচিরেই জাতির শত্রু মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।