ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

নিবর্তনমূলক শাসন অব্যাহত; নিষ্ফল মানবাধিকার দিবস

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৫৭:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ১১৫ বার পড়া হয়েছে

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচিতে পালিত হলো মানবাধিকার দিবস। এ উপলক্ষে গণমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে সরকার। কিন্তু তাতে দেশে বিরাজমান মানবাধিকার পরিস্থিতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি; বরং বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে বক্তব্য-বিবৃতিতে। সক্রিয় মানবাধিকারকর্মীদের সাথে সরকারের বৈরী আচরণ আমরা গত ১৫ বছর ধরে দেখেছি। দেখেছি গণমাধ্যমকর্মী ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে চরম অমানবিক আচরণের অসংখ্য নমুনা। সেই আচরণ সম্প্রতি কতটা খারাপ হয়েছে তা কারো অজানা নয়।
দেশে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গায়েবি মামলায় গণগ্রেপ্তার, বিনাবিচারে আটক ও সাজা দেয়া, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশি নির্যাতন, বিনা ওয়ারেন্টে মধ্যরাতে ঘর থেকে তুলে নেয়া, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ ও সরকারি পেটোয়া বাহিনীর হামলা, সামাজিকমাধ্যমে সমালোচনার দায়ে নিপীড়নের লাখো ঘটনা সারা দেশে রীতিমতো নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে আমরা এশিয়ান এনজিও নেটওয়ার্ক অন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশন্সের (এএনএনআই) মূল্যায়ন দেখেছি। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের সাফল্য দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সর্বনিন্মে। দেশে যখন লাগাতার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে তখন মানবাধিকার কমিশনের সাফল্যের খাতায় একটি বৃহৎ শূন্য ছাড়া কিছু নেই।
গুম, খুন, নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাককে গত শনিবার খোদ মানবাধিকার দিবসেও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালনে পর্যন্ত বাধা দেয় পুলিশ। পরে মায়ের ডাকের জমায়েতে ক্ষুব্ধ বক্তারা বলেন, মানবাধিকার দিবসেও যখন কথা বলতে দেন না, তখন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সনদ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করুন।
গত ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টার টেরোরিজম রিপোর্ট ২০২২-এ র‌্যাবের পর বাংলাদেশের ডিএমপির আরেকটি ইউনিট সোয়াটের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলো একের পর এক সতর্ক করেছে, আপত্তি জানিয়েছে, এমনকি অনেক সংস্থা একযোগে জাতিসঙ্ঘের কাছেও অভিযোগ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ২৬ নভেম্বর সংস্থাটির সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, তারা বাংলাদেশে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সহিংসতাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গণগ্রেপ্তার, গুম, নিপীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন। একই কথা অনেক আগে বলেছে, খোদ জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনও। কিন্তু কোনো কিছুতে পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি হয়নি।
বরং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে পরিস্থিতি রীতিমতো শ্বাসরুদ্ধকর করে তোলা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অভিযোগ, গত ২০ অক্টোবরের পর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত মাস দেড়েক সময়ে তাদের ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা দেশে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে শত শত নেতাকর্মীকে। নাগরিক সমাজের সদস্য এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি এমনকি মানবাধিকারকর্মীদের জন্যও ‘অস্তিত্বের সঙ্কট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রযন্ত্র মানবাধিকার-বিষয়ক তৎপরতা অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে সর্বস্তরের জনমনে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

নিবর্তনমূলক শাসন অব্যাহত; নিষ্ফল মানবাধিকার দিবস

আপলোড টাইম : ১১:৫৭:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচিতে পালিত হলো মানবাধিকার দিবস। এ উপলক্ষে গণমাধ্যমে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে সরকার। কিন্তু তাতে দেশে বিরাজমান মানবাধিকার পরিস্থিতির বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি; বরং বিপরীত চিত্র উঠে এসেছে বক্তব্য-বিবৃতিতে। সক্রিয় মানবাধিকারকর্মীদের সাথে সরকারের বৈরী আচরণ আমরা গত ১৫ বছর ধরে দেখেছি। দেখেছি গণমাধ্যমকর্মী ও বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের সাথে চরম অমানবিক আচরণের অসংখ্য নমুনা। সেই আচরণ সম্প্রতি কতটা খারাপ হয়েছে তা কারো অজানা নয়।
দেশে গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গায়েবি মামলায় গণগ্রেপ্তার, বিনাবিচারে আটক ও সাজা দেয়া, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পুলিশি নির্যাতন, বিনা ওয়ারেন্টে মধ্যরাতে ঘর থেকে তুলে নেয়া, শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশ ও সরকারি পেটোয়া বাহিনীর হামলা, সামাজিকমাধ্যমে সমালোচনার দায়ে নিপীড়নের লাখো ঘটনা সারা দেশে রীতিমতো নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
মাত্র সপ্তাহ দুয়েক আগে আমরা এশিয়ান এনজিও নেটওয়ার্ক অন ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ইনস্টিটিউশন্সের (এএনএনআই) মূল্যায়ন দেখেছি। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মানবাধিকার কমিশনের সাফল্য দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশের মধ্যে সর্বনিন্মে। দেশে যখন লাগাতার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে তখন মানবাধিকার কমিশনের সাফল্যের খাতায় একটি বৃহৎ শূন্য ছাড়া কিছু নেই।
গুম, খুন, নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাককে গত শনিবার খোদ মানবাধিকার দিবসেও শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালনে পর্যন্ত বাধা দেয় পুলিশ। পরে মায়ের ডাকের জমায়েতে ক্ষুব্ধ বক্তারা বলেন, মানবাধিকার দিবসেও যখন কথা বলতে দেন না, তখন জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার সনদ থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করুন।
গত ২ ডিসেম্বর প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টার টেরোরিজম রিপোর্ট ২০২২-এ র‌্যাবের পর বাংলাদেশের ডিএমপির আরেকটি ইউনিট সোয়াটের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে বিশ্বের শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থাগুলো একের পর এক সতর্ক করেছে, আপত্তি জানিয়েছে, এমনকি অনেক সংস্থা একযোগে জাতিসঙ্ঘের কাছেও অভিযোগ করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত ২৬ নভেম্বর সংস্থাটির সর্বশেষ রিপোর্টে বলেছে, তারা বাংলাদেশে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট সহিংসতাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, গণগ্রেপ্তার, গুম, নিপীড়ন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন। একই কথা অনেক আগে বলেছে, খোদ জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কমিশনও। কিন্তু কোনো কিছুতে পরিস্থিতির ন্যূনতম উন্নতি হয়নি।
বরং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফাভাবে অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে পরিস্থিতি রীতিমতো শ্বাসরুদ্ধকর করে তোলা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অভিযোগ, গত ২০ অক্টোবরের পর থেকে গত শনিবার পর্যন্ত মাস দেড়েক সময়ে তাদের ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সারা দেশে প্রতিদিন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে শত শত নেতাকর্মীকে। নাগরিক সমাজের সদস্য এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো বলছে, বর্তমান পরিস্থিতি এমনকি মানবাধিকারকর্মীদের জন্যও ‘অস্তিত্বের সঙ্কট’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের অভিযোগ, রাষ্ট্রযন্ত্র মানবাধিকার-বিষয়ক তৎপরতা অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে। এমন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই উদ্বেগ দেখা দিচ্ছে সর্বস্তরের জনমনে।