ইপেপার । আজ বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

এমপিদের বিপুল সম্পদ বৃদ্ধি; ক্ষমতার সুফল ভোগের নমুনা!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১০:৫৭:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৮৪ বার পড়া হয়েছে

দীর্ঘ দিন ধরে নানা মহলে জোরালো আলোচনা রয়েছে, রাষ্ট্র অর্পিত দায়িত্ব কাজে লাগিয়ে দেশের মুষ্টিমেয় কিছু লোক বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং হচ্ছেন। ক্ষমতার সরাসরি এবং সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা। তবে সর্বোচ্চ সুফলভোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এমপি বা সংসদ সদস্যরা। দেখা যাচ্ছে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া এমপি হিসেবে যিনিই একবার নির্বাচিত হচ্ছেন; তিনিই নাম লেখাচ্ছেন কোটিপতির খাতায়। এমপির এখতিয়ার কাজে লাগিয়ে নানা ব্যবসায়-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হয়ে তারা এ বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হচ্ছেন। এমন প্রবণতা অবশ্য বেশি দেখা যাচ্ছে গত দুই তিনটি সংসদের মেয়াদকালে। সহজে বিপুল সম্পদ ও ক্ষমতা পাওয়ার মোক্ষম উপায় হিসেবে বিবেচনায় বহু মানুষ এখন এমপি হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। সম্পদশালীরাও এমপি হতে আগ্রহী, কোনো ক্ষেত্রে মরিয়া। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হতে বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাসহ বেশ কিছু পেশাজীবীকে এবার দলীয় মনোনয়ন পেতে তুমুল প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এ কথা আরো সত্যি।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বর্তমান সংসদ সদস্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের দুই-একজন বাদ দিয়ে সবার আয় ও একই সাথে সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। প্রায় সবাই কোটিপতি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া তাদের যে সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, সেই সম্পদ ও আয়ের তুলনামূলক পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা যায়। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বর্তমান সংসদ সদস্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের হলফনামার ভিত্তিতে গত কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যম এসব খবর ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে। তবে এর মধ্যেও কথা থেকে যায়। কারণ, হলফনামায় যা প্রদর্শন করা হয়েছে; এর চেয়ে যে কারো বেশি সম্পদ নেই; সে কথা হলফ করে কে বলতে পারে! বর্তমান এমপিদের অনেকেরই রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে দাখিল করা হলফনামায় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের সম্পদের পরিমাণ যা ছিল, তার চেয়ে শুধু তাদের সম্পদই বাড়েনি। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাদের স্ত্রীদের সম্পদও।

একাদশ সংসদের এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যে যারা বর্তমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় উল্লিখিত সম্পদের পরিমাণ বলে দেয়, তারা এই পাঁচ বছরে কত বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। সাথে সাথে তাদের সন্তান-সন্ততি এবং স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের ভাগ্য কিভাবে ফিরেছে। প্রকৃতপক্ষে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির দুর্বলতা এবং সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছায়ায় এক শ্রেণীর মানুষের মনে সম্পদশালী হয়ে ওঠার তীব্র বাসনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্বল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্র ও সমাজে জেঁকে বসেছে জবাবদিহিহীন পরিস্থিতি। ফলে যে যেভাবে পারছেন সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলতে পারে। আর এর জন্য প্রয়োজন দেশে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

এমপিদের বিপুল সম্পদ বৃদ্ধি; ক্ষমতার সুফল ভোগের নমুনা!

আপলোড টাইম : ১০:৫৭:৪৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

দীর্ঘ দিন ধরে নানা মহলে জোরালো আলোচনা রয়েছে, রাষ্ট্র অর্পিত দায়িত্ব কাজে লাগিয়ে দেশের মুষ্টিমেয় কিছু লোক বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হয়েছেন এবং হচ্ছেন। ক্ষমতার সরাসরি এবং সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী বিভিন্ন স্তরের জনপ্রতিনিধিরা। তবে সর্বোচ্চ সুফলভোগী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন এমপি বা সংসদ সদস্যরা। দেখা যাচ্ছে, বিরল ব্যতিক্রম ছাড়া এমপি হিসেবে যিনিই একবার নির্বাচিত হচ্ছেন; তিনিই নাম লেখাচ্ছেন কোটিপতির খাতায়। এমপির এখতিয়ার কাজে লাগিয়ে নানা ব্যবসায়-বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হয়ে তারা এ বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হচ্ছেন। এমন প্রবণতা অবশ্য বেশি দেখা যাচ্ছে গত দুই তিনটি সংসদের মেয়াদকালে। সহজে বিপুল সম্পদ ও ক্ষমতা পাওয়ার মোক্ষম উপায় হিসেবে বিবেচনায় বহু মানুষ এখন এমপি হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলের সাথে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলছেন। সম্পদশালীরাও এমপি হতে আগ্রহী, কোনো ক্ষেত্রে মরিয়া। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হতে বিপুলসংখ্যক দলীয় নেতাসহ বেশ কিছু পেশাজীবীকে এবার দলীয় মনোনয়ন পেতে তুমুল প্রতিযোগিতায় নামতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে এ কথা আরো সত্যি।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বর্তমান সংসদ সদস্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের দুই-একজন বাদ দিয়ে সবার আয় ও একই সাথে সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। প্রায় সবাই কোটিপতি। ২০১৮ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া তাদের যে সম্পদের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল, সেই সম্পদ ও আয়ের তুলনামূলক পর্যালোচনায় এ তথ্য জানা যায়। আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বর্তমান সংসদ সদস্য যারা প্রার্থী হয়েছেন তাদের হলফনামার ভিত্তিতে গত কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যম এসব খবর ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে। তবে এর মধ্যেও কথা থেকে যায়। কারণ, হলফনামায় যা প্রদর্শন করা হয়েছে; এর চেয়ে যে কারো বেশি সম্পদ নেই; সে কথা হলফ করে কে বলতে পারে! বর্তমান এমপিদের অনেকেরই রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি। ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনের আগে দাখিল করা হলফনামায় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের সম্পদের পরিমাণ যা ছিল, তার চেয়ে শুধু তাদের সম্পদই বাড়েনি। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাদের স্ত্রীদের সম্পদও।

একাদশ সংসদের এমপি-মন্ত্রীদের মধ্যে যারা বর্তমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের হলফনামায় উল্লিখিত সম্পদের পরিমাণ বলে দেয়, তারা এই পাঁচ বছরে কত বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক হয়েছেন। সাথে সাথে তাদের সন্তান-সন্ততি এবং স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের ভাগ্য কিভাবে ফিরেছে। প্রকৃতপক্ষে দেশে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির দুর্বলতা এবং সব রাজনৈতিক দলের সমান সুযোগ না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছায়ায় এক শ্রেণীর মানুষের মনে সম্পদশালী হয়ে ওঠার তীব্র বাসনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্বল গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি এবং সুশাসনের অভাবে রাষ্ট্র ও সমাজে জেঁকে বসেছে জবাবদিহিহীন পরিস্থিতি। ফলে যে যেভাবে পারছেন সম্পদ আহরণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি মিলতে পারে। আর এর জন্য প্রয়োজন দেশে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন।