অবরোধে অর্থনীতি স্থবির হয়ে এসেছে; ক্ষতি আরো বৃদ্ধির আগে সাড়া দিন
- আপলোড টাইম : ০৩:৩৫:২৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৮৯ বার পড়া হয়েছে
বিরোধীদের ডাকা হরতাল অবারোধে জনজীবন ও অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। এই আন্দোলনের কর্মসূচিতে একটি নতুন চিত্র পাওয়া যাচ্ছে। এবারে কোনো ধরনের সহিংসতা দেখা যাচ্ছে না। বিরোধীদের আন্দোলনের কঠিন কর্মসূচির সাথে জ্বালাও-পোড়াও একটি সাধারণ চিত্র ছিল এ দেশে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ভয়াবহ সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা দেখা গেছে। গানপাউডার ও পেট্রল ঢেলে যানবাহনের সাথে মানুষ পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটেছে। ওইসব পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত হয়নি। এবার পিকেটিং ছাড়া অনেকটাই স্বতঃস্ফূর্ত এই কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। সরকারের উচিত অর্থনীতি বাঁচিয়ে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে বিরোধীদের দাবি-দাওয়ার প্রতি সাড়া দেয়া। সরকারের কাছে থাকা বিভিন্ন তথ্য উপাত্তে দেখা যাচ্ছে, টানা অবরোধে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ২৯ অক্টোবর থেকে বিএনপি ও জামায়াতসহ সমমনারা সপ্তাহে চার দিন করে অবরোধ পালন করছে। এর মধ্যে তারা চার দিন হরতালও করেছে। সেতু কর্তৃপক্ষের রক্ষিত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, হরতাল-অবরোধের ২০ দিনে পদ্মা সেতুতে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে প্রায় ৩৪ শতাংশ যান কম চলেছে। যমুনার বঙ্গবন্ধু সেতুতে প্রায় ৩১ শতাংশ ও ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে যান চলাচল প্রায় ৩৫ শতাংশ কম হয়েছে।
একটি সহযোগী দৈনিক স্বাভাবিক সময়ের সাথে অবরোধকালীন যান চলাচলের চিত্র তুলনা করে দেখিয়েছে। পদ্মা সেতুতে দিনে গড়ে ১৯ হাজার ২৮টি গাড়ি চলে। অবরোধের সময় দিনে চলেছে ১২ হাজার ৫৮০টি গাড়ি। হরতাল-অবরোধের ২০ দিনে পদ্মা সেতু ব্যবহার করা যান থেকে টোল আদায় হয়েছে ৩০ কোটি ৯৫ লাখ এক হাজার ১৫ টাকা। গড়ে প্রতিদিন টোল পাওয়া গেছে এক কোটি ৫৪ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭ টাকা। অবরোধের আগে ২০ দিনে টোল আদায় হয়েছে ৪৭ কোটি ১৮ লাখ ৯৪ হাজার ৫০ টাকা। দৈনিক গড়ে দুই কোটি ৩৫ লাখ ৯৪ হাজার ৭০২ টাকা। টোল আদায়ের পরিসংখ্যান থেকে যান চলাচলের আসল চিত্রটি ভালো করে বোঝা যাচ্ছে। সামগ্রিক চিত্রে এক-তৃতীয়াংশ যান কম চললেও টোল আদায় তার চেয়ে অনেক কম। এতে বোঝা যায়, বাস ট্রাকসহ ভারী যানবাহন চলাচল মূলত অর্ধেকের মতো কমে গেছে। মোটরসাইকেলের মতো ক্ষুদ্র যান বেশি চলায় মোট যান এক-তৃতীয়াংশ কমেছে এমন দেখা গেছে। বাস্তবে যাত্রী চলাচল ও মালামাল পরিবহন ব্যাপক কমে গেছে তা টোল আদায় থেকে অনুমিত। দূরপাল্লার প্রতিটি রুটে যাত্রী ও মালামাল পরিবহনের এই চিত্রই দেখা গেছে। অবরোধে অনেক সময় দূরপাল্লøার যানবাহন চলাচল একেবারে শূন্য হয়ে যায়। কিছু গাড়ি রাস্তায় থাকলেও যাত্রী পাওয়া যায় না। সেতু বিভাগের পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, অবরোধে দেশের বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে। বিরোধী দল অব্যাহতভাবে পীড়নের শিকার হচ্ছে। কোনো ধরনের নাগরিক অধিকার তারা পাচ্ছে না। তার ওপর তাদের নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন হুমকির মধ্যে পড়ছে। ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশ ভণ্ডুল করে দেয়ার পর স্বাভাবিক রাজনীতি চর্চার জন্য তাদের হাতে আর কোনো সুযোগ ছিল না। বাধ্য হয়ে এই সরকারের সময় প্রথমবারের মতো এই কঠোর কর্মসূচি দিতে হয়েছে। একটি অবাধ-সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিতে তাদের এই আন্দোলন। এই আন্দোলনের প্রতি দেশের মানুষের সাড়া রয়েছে, তাই জ্বালাও-পোড়াও ছাড়া স্বতঃস্ফূর্ত কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। এ অবস্থায় পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের উচিত এই ন্যায্য দাবির প্রতি সাড়া দেয়া।