ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হৃদরোগীর চিকিৎসা;বন্দীর মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ১১:৪৮:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৭৮ বার পড়া হয়েছে


বাংলাদেশে গত ১৫ বছর ধরে বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মানবাধিকার কেমন, তার সর্বশেষ উৎকট নমুনা দেখা গেল যশোরে। যুবদল নেতা আমিনুর রহমানকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার একজন কলেজশিক্ষকের সাথে দাগী আসামির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এটি ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’। তবে কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, কারাবিধি অনুযায়ী ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু এখানে নেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমিনুরের ডাণ্ডাবেড়ি পরা একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে। এর আগে গত বছর গাজীপুরে বিএনপির এক রাজনীতিকের ডাণ্ডাবেড়ি পরে মায়ের জানাজা পরানোর ছবি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনাটিকে ‘অমানবিকই শুধু নয়, মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী’ বলেছিল। শরীয়তপুরেও একই রকম ঘটনা ঘটে। স্মরণযোগ্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার প্রামাণিক অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে বিশ্বসভায়। এর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দেয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। যশোরের আমিনুরের পরিবার ও কারা সূত্রের বরাতে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পর আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি মামলা করে পুলিশ। ২ নভেম্বর সদর উপজেলার আমদাবাদ কলেজ থেকে তাকে গ্রেফতার করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এ সময়ও তার পায়ের ডাণ্ডাবেড়ি খোলা হয়নি। এমনকি খাওয়ার সময়ও হাতকড়া খুলে দেয়নি পুলিশ। রোগীর সাথে ঠিকমতো দেখা করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্বজনদের। যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি অসুস্থ আমিনুরকে হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় চিকিৎসা দেয়ার ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনলে উচ্চ আদালত মন্তব্য করেন, সাধারণত জঘন্য অপরাধে আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। গত ২৯ নভেম্বর এই মন্তব্য করেন উচ্চ আদালত। আমাদের জানা মতে, আপিল বিভাগেরও একটি নির্দেশনা ছিল, খুনের আসামি বা ভয়ঙ্কর জঙ্গি ধরনের আসামিদের ক্ষেত্রে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু আমিনুর একজন কলেজশিক্ষক। তার সামাজিক মর্যাদার দিকে না তাকিয়ে শুধু বিএনপি করায় দাগি আসামির মতো আচরণ করেছে পুলিশ। আমরা মনে করি, আমিনুরের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা দেশের সংবিধান, আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী। এতে স্পষ্টতই তার মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যেকোনো আসামি বা অভিযুক্ত, এমনকি দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির সাথেও এমন আচরণ করার কোনো সুযোগ নেই। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে কোনো রোগীর চিকিৎসা দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত রূপ। আমিনুরের স্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত কোনো রোগী কি দৌড়ে পালাতে পারেন? অথচ তার ডাণ্ডাবেড়ি খুলে দেয়নি। এই প্রশ্নের কী কোনো উত্তর সরকার কিংবা পুলিশের কাছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হৃদরোগীর চিকিৎসা;বন্দীর মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত

আপলোড টাইম : ১১:৪৮:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৩


বাংলাদেশে গত ১৫ বছর ধরে বিরোধী মতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের মানবাধিকার কেমন, তার সর্বশেষ উৎকট নমুনা দেখা গেল যশোরে। যুবদল নেতা আমিনুর রহমানকে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার একজন কলেজশিক্ষকের সাথে দাগী আসামির মতো ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, এটি ‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’। তবে কারা কর্তৃপক্ষের দাবি, কারাবিধি অনুযায়ী ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু এখানে নেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আমিনুরের ডাণ্ডাবেড়ি পরা একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপর থেকে সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে। এর আগে গত বছর গাজীপুরে বিএনপির এক রাজনীতিকের ডাণ্ডাবেড়ি পরে মায়ের জানাজা পরানোর ছবি ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। মানবাধিকার সংগঠনগুলো ঘটনাটিকে ‘অমানবিকই শুধু নয়, মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী’ বলেছিল। শরীয়তপুরেও একই রকম ঘটনা ঘটে। স্মরণযোগ্য যে, বর্তমান সরকারের আমলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশে মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত হওয়ার প্রামাণিক অভিযোগ উত্থাপিত হচ্ছে বিশ্বসভায়। এর মধ্যে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা দেয়ার ঘটনা উল্লেখযোগ্য। যশোরের আমিনুরের পরিবার ও কারা সূত্রের বরাতে জানা যায়, গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের পর আমিনুর রহমানের বিরুদ্ধে যশোর কোতোয়ালি থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে চারটি মামলা করে পুলিশ। ২ নভেম্বর সদর উপজেলার আমদাবাদ কলেজ থেকে তাকে গ্রেফতার করে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে প্রথমে যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে এবং পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকার জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। সেখানে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এ সময়ও তার পায়ের ডাণ্ডাবেড়ি খোলা হয়নি। এমনকি খাওয়ার সময়ও হাতকড়া খুলে দেয়নি পুলিশ। রোগীর সাথে ঠিকমতো দেখা করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্বজনদের। যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি অসুস্থ আমিনুরকে হাতকড়া ও ডাণ্ডাবেড়ি পরা অবস্থায় চিকিৎসা দেয়ার ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনলে উচ্চ আদালত মন্তব্য করেন, সাধারণত জঘন্য অপরাধে আসামিদের ডাণ্ডাবেড়ি পরানো হয়। গত ২৯ নভেম্বর এই মন্তব্য করেন উচ্চ আদালত। আমাদের জানা মতে, আপিল বিভাগেরও একটি নির্দেশনা ছিল, খুনের আসামি বা ভয়ঙ্কর জঙ্গি ধরনের আসামিদের ক্ষেত্রে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখতে হবে। কিন্তু আমিনুর একজন কলেজশিক্ষক। তার সামাজিক মর্যাদার দিকে না তাকিয়ে শুধু বিএনপি করায় দাগি আসামির মতো আচরণ করেছে পুলিশ। আমরা মনে করি, আমিনুরের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা দেশের সংবিধান, আইন ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরিপন্থী। এতে স্পষ্টতই তার মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। আইন অনুযায়ী, যেকোনো আসামি বা অভিযুক্ত, এমনকি দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির সাথেও এমন আচরণ করার কোনো সুযোগ নেই। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে হাসপাতালে কোনো রোগীর চিকিৎসা দেয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের চূড়ান্ত রূপ। আমিনুরের স্ত্রী প্রশ্ন তুলেছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত কোনো রোগী কি দৌড়ে পালাতে পারেন? অথচ তার ডাণ্ডাবেড়ি খুলে দেয়নি। এই প্রশ্নের কী কোনো উত্তর সরকার কিংবা পুলিশের কাছে।