অর্থহীন নির্বাচনের পথে সরকার;বিচ্ছিন্নতা বিপদ ডেকে আনবে
- আপলোড টাইম : ০৮:৫৬:১৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
- / ৭১ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশ আবারো একটি অর্থহীন একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বন্ধুপ্রতিম দেশ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও নাগরিক সমাজ সংলাপের মাধ্যমে নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় পৌঁছার আহ্বান জানালেও সেই আহ্বান এভাবে প্রত্যাখ্যান করা আমাদের জন্য বিপদ ডেকে আনবে। এবার অংশগ্রহণহীন নির্বাচন হলে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিকভাবে সারা বিশ্ব থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবো। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আগে এমন শক্ত অবস্থান নেয়নি। আগের দুইবারের অন্যায্য অর্থহীন নির্বাচনের সাথে এই নির্বাচনের এটাই পার্থক্য। মানবাধিকার সংস্থা ও দেশী বিদেশী খবরে নিশ্চিত হয়ে উঠেছে, দেশে নির্বাচনের পরিবেশ নেই।
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গত রোববার বাংলাদেশের নির্বাচনী পরিবেশ নেই বলে এক প্রতিবেদনে তুলে ধরেছে। প্রতিষ্ঠানটির এশিয়াবিষয়ক সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার মন্তব্য করেছেন, যখন সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে গলা টিপে ধরে খেয়াল খুশিমতো গ্রেপ্তার, জোরপূর্বক গুম, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমিক বিরোধী দল, সমালোচক এবং অধিকারকর্মীদের অক্ষম করে দেয়, তখন একটি অবাধ নির্বাচন অসম্ভব। তার এই মন্তব্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের চিত্র দিবালোকের মতো স্পষ্ট। বিরোধীদের কোণঠাসা করার দীর্ঘ প্রক্রিয়া বাংলাদেশে অব্যাহত চলেছে। শীর্ষপর্যায়ের প্রায় সব বিরোধী নেতাকে আটক করা হয়েছে।
২৮ অক্টোবর পল্টন ক্রাকডাইনের পর সেটা এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। ১০ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে নতুন করে গ্রেপ্তার করেছে সরকার। দেশের ৬৮টি কারাগারে ৪২ হাজার ৭০০ ধারণক্ষমতার হলেও সেখানে এখন বন্দির সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ ৭৭ হাজার ২০০। এর মধ্যে বিএনপিসহ বিরোধী দলের ২৫ হাজার রাজবন্দী আছেন। এদের বিরুদ্ধে আদালতে তড়িঘড়ি করে বিভিন্ন মামলায় শাস্তি হয়ে যাচ্ছে। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বিএনপির কয়েক শ’ সাবেক এমপিসহ শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে রায় হয়ে গেছে। আসন্ন নির্বাচন সামনে রেখে বিরোধীদের নিশানা করে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে, এই মন্তব্য করেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ওই প্রতিবেদনে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে এই বলে যে, বিরোধীদের ওপর যখন এই সাঁড়াশি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে ঠিক একই সময় সরকার তার কূটনৈতিক অংশীদারদের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। সরকারের এই অসততা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে; কথা এবং কাজের মধ্যে মিল নেই। হিউম্যান রাইটস আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, এ ধরনের অন্যায্য একটি নির্বাচন সম্পন্ন হলে তা দেশের অর্থনৈতিক সহযোগিতা বিপন্ন করতে পারে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের বক্তব্যে একই আশঙ্কা প্রকাশ পেয়েছে। বিচারিক হাকিমদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ‘বাইরের থাবা এসেছে। দেশের অর্থনীতি ও ভবিষ্যৎ বাঁচাতে নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’ এই বক্তব্যে আউয়ালের নিজের সততার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আগের দুটি অর্থহীন নির্বাচনের পথে তিনিও হাঁটছিলেন। তিনি নিজে থেকে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সংকল্প রাখেন না। কেবল বন্ধুপ্রতিম প্রভাবশালী দেশগুলোর চাপের কারণে দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে এ ধরনের একটি নির্বাচন করার তাগিদ তিনি দিচ্ছেন। আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব কাদের হাতে রয়েছে আউয়ালের বক্তব্য থেকে আমরা বুঝে নিতে পারি। দেশের প্রায় সব সাংবাদিক প্রতিষ্ঠান ধসে পড়েছে। কট্টর দলকানা লোকেরা এগুলো পরিচালনা করছেন। এ অবস্থা থেকে উদ্ধারে একটি অবাধ স্বচ্ছ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
সরকারের ওপর একটি সাংবিধানিক অঙ্গীকার রয়েছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের। সরকার সেই অঙ্গীকার ভঙ্গ করে চলেছে। বিগত টার্মগুলোতে বেঁচে গেলেও একই অন্যায় করে এবার বাঁচা যাবে না। আমরা মনে করি, সরকার এই অবস্থায় তার নীতি বদলাবে। বিরোধীদের দাবি মেনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ করে দেবে।