এইচএসসির ফল প্রকাশ; প্রদর্শনের উছিলা
- আপলোড টাইম : ০৩:৪২:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
- / ৭৭ বার পড়া হয়েছে
বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় এখন খরাবস্থা। শিক্ষাকার্যক্রম ক্রমে বিকশিত হয়ে যুগোপযোগীর বদলে যেন পেছনে হাঁটছে। শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে রয়েছে বিতর্ক, পাঠ্যপুস্তকের আধেয় নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অভিযোগের শেষ নেই। বারেবারে অভিভাবকদের রাস্তায় নামতে দেখা যায়। রাজনৈতিক আন্দোলনের মতো তাদেরও দমানোর নীতি নিয়ে সরকার অগ্রসর হয়। বিতর্ক ও অভিযোগ নিয়ে খোলাসা করে কিছু বলা হয় না। মানুষের অস্বস্তির জায়গাগুলো নিরসনের উদ্যোগ দেখা যায় না। এ অবস্থায় এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল নিয়ে সরকারের ব্যাপক প্রচারণা- উচ্ছ্বাস দেখা যায় প্রতি বছর। পাসের হার বৃদ্ধিকে দেখানো হয় সফলতা হিসেবে। গুণগত মান ও নৈতিক শিক্ষা এড়িয়ে যাওয়া হয়। এবারো এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। আলোচনার মূল বিষয় জিপিএ ৫ ও পাসের হার। এবার জিপিএ ৫ অর্ধেকে নেমে এসেছে, পাসের হার খানিকটা নিচে নেমেছে। সার্বিকভাবে ফল আগের বছরের তুলনায় খারাপ। ৯টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২০২৩ সালে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১১ লাখ ১২ হাজার ৩৭২ জন। পাস করেছে আট লাখ ৪৪ হাজার ২৬৯ জন। পাসের হার ৭৫ দশমিক ৯০ শতাংশ। যা গত বছরের চেয়ে ৮ শতাংশ কম। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭৮ হাজার ৫২১ জন। গতবারের তুলনায় এবার ৮১ হাজার ২৩৪ জন জিপিএ ৫ কম পেয়েছে। মাদরাসা বোর্ডেও ফল খারাপ হয়েছে। জিপিএ ৫ পেয়েছে সাত হাজার ৯৭ জন।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা শিক্ষার্থীর ভিত্তি গড়ে দেয়। এ জন্য এর পাঠ্য ও পাঠপদ্ধতি এবং মূল্যায়ন হওয়া দরকার অত্যন্ত কার্যকর। বিগত কয়েক বছরের ফল বিশ্লেষণে দেখা যাবে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা সে ধরনের গুরুত্ব পায়নি। করোনাকালে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ বেড়ে যায় চারগুণ। অথচ ওই সময় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারেনি। করোনার আগের বছর ২০১৯ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৪১ হাজার ৮০৭ জন। পরের বছর করোনাকালে পায় এক লাখ ৫৩ হাজার ৬১৪ জন। পরের বছর আরো বেড়ে হয় এক লাখ ৭৮ হাজার ৫২২ জন। করোনার পরে এ বছরে তা অর্ধেকেরও কম হয়ে গেল। এই ফল আমরা যদি যথার্থ ধরে নিই; তাহলে বলতে হবে- ২০২০ সালে করোনাকালে আগের বছরের তুলনায় দেশের শিক্ষার্থীদের গুণগত মান চারগুণ বেড়েছে। তবে উচ্চশিক্ষায় গিয়ে ধরা পড়ল- ফল ভালো মানে শিক্ষার মান উন্নত হওয়া নয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে পাস করতেও পারছে না। তখন অনেকে ফলের এই উল্লম্ফনকে অন্তঃসারশূন্য বলে মন্তব্য করেন।
আমরা শিক্ষাকে উপযুক্ত গুরুত্বের সাথে নিতে পারিনি। স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে গেলেও একটি টেকসই শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। প্রতিনিয়ত যেভাবে শিক্ষাপদ্ধতি ও পাঠ্যপুস্তক পরিবর্তিত হচ্ছে; তাতে একে খুশিমতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলে মনে হওয়ার যথেষ্ট সঙ্গত কারণ রয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের আধেয় নিয়ে অভিভাবকরা অভিযোগ করে আসছেন। এ জন্য অনেকে রাস্তায় প্রতিবাদের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাদের মতামত আমলে নেয়া হচ্ছে না। এদিকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফল রাজনৈতিক ফায়দা নেয়ার উপাদান হিসেবে হাজির হয়েছে। ভালো রেজাল্টকে দেখানো হচ্ছে সরকারের সফলতা হিসেবে। বাস্তবে এ ফলের সাথে শিক্ষার গুণগত মান উন্নত হওয়ার কোনো সম্পর্ক দেখা যায় না।