ইপেপার । আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াডাঙ্গায় দিলীপ কুমার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ

এলাকায় থমথমে অবস্থা, অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৩২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গার সদরের মোমিনপুর, কবিখালি ও আলমডাঙ্গার ডাউকিতে পৃথক স্থানে এ হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসময় ৯ নেতা-কর্মীর বাড়ি, অফিস ও প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর খবর পাওয়া গেছে। হামলার শিকার নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে তারা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরই হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে, এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে র‌্যাবের টহল।

জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষক লীগ নেতা গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এসময় হামলাকারীরা বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ে এবং কয়েকটি চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। ঘটনার সময় গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার বাড়িতে ছিলেন না। এসময় তার স্ত্রী নাজু বেগম ও গৃহকর্মী আকাশ হোসেন বাড়িতে ছিলেন।

গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার অভিযোগ করে বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা-সদর একাংশ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে আমি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলাম। এ জন্য আমার বাড়ি ও অফিসে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা অনেক চেয়ার ভাঙচুর করেছে। বাড়িতে কোপটোপ মেরেছে। নব্য আওয়ামী লীগের লোকজন এই হামলা করেছে।’

এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কবিখালী গ্রামের হুমায়নের বাড়িতেও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলযোগে তার বাড়ির সামনে গিয়ে ইট-পাটকেল ছোড়ে। চেয়ার ভাঙচুর করে এবং টিনে কোপ দেয়। হুমায়ন মোমিনপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি। তিনিও দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সমর্থক।

এছাড়া সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মহসিনের ফার্মেসির দোকান, আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু, ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জয়, একই ইউনিয়নের যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদ ও বাইতুল, সিরাজুল ইসলাম, একই উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহাদাৎ হোসেনের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু বলেন, ‘আমি একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে কাজ করায় আমিসহ আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েজনের বাড়ি ও বাড়ির মেইন গেটে ভাঙচুর করে কয়েকজন যুবক।’

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ায় সন্ধ্যার পর আমরা আনন্দ মিছিল করে চলে এসেছি। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা জানি না। তারা নিজেরাই এসব ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করছে। এমন নোংরা রাজনীতি আমরা করি না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২ আসনের নৌকার মাঝিদের জন্য অভিনন্দন ও শুভ কামনা রইলো। আমি সব সময় বলে এসেছি, নৌকা যার, আমরা তার। আমাদের নেতা-কর্মীরাও নৌকার ভোট করবে। চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন এটা আমি জানি। তাই তাদের ভালোবাসার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান। আমি আমার নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।

তিনি আরও বলেন, তবে দুঃখজনক বিষয় কোনো কারণ ছাড়াই আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানোসহ বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে আমার বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন।’ এদিকে, এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান জানান, কয়েকজনের বাড়ির সামনে গিয়ে গালিগালাজ ও ইটপাটকেল ছোড়ার খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এখন এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

চুয়াডাঙ্গায় দিলীপ কুমার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ

এলাকায় থমথমে অবস্থা, অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন

আপলোড টাইম : ০৮:০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

চুয়াডাঙ্গায় দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সমর্থকদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল রোববার রাতে চুয়াডাঙ্গার সদরের মোমিনপুর, কবিখালি ও আলমডাঙ্গার ডাউকিতে পৃথক স্থানে এ হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এসময় ৯ নেতা-কর্মীর বাড়ি, অফিস ও প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর খবর পাওয়া গেছে। হামলার শিকার নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে তারা প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পরই হামলার ঘটনা ঘটে। এদিকে, এ ঘটনার পর এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। রয়েছে র‌্যাবের টহল।

জানা গেছে, গতকাল সন্ধ্যায় সদর উপজেলার মোমিনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কৃষক লীগ নেতা গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের বাড়িতে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এসময় হামলাকারীরা বাড়িতে ইট-পাটকেল ছোড়ে এবং কয়েকটি চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে। ঘটনার সময় গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার বাড়িতে ছিলেন না। এসময় তার স্ত্রী নাজু বেগম ও গৃহকর্মী আকাশ হোসেন বাড়িতে ছিলেন।

গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দার অভিযোগ করে বলেন, ‘চুয়াডাঙ্গা-১ (আলমডাঙ্গা-সদর একাংশ) আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে আমি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলাম। এ জন্য আমার বাড়ি ও অফিসে হামলা করা হয়। হামলাকারীরা অনেক চেয়ার ভাঙচুর করেছে। বাড়িতে কোপটোপ মেরেছে। নব্য আওয়ামী লীগের লোকজন এই হামলা করেছে।’

এদিকে সন্ধ্যা ৭টার দিকে কবিখালী গ্রামের হুমায়নের বাড়িতেও হামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলযোগে তার বাড়ির সামনে গিয়ে ইট-পাটকেল ছোড়ে। চেয়ার ভাঙচুর করে এবং টিনে কোপ দেয়। হুমায়ন মোমিনপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি। তিনিও দিলীপ কুমার আগরওয়ালার সমর্থক।

এছাড়া সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মহসিনের ফার্মেসির দোকান, আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু, ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জয়, একই ইউনিয়নের যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদ ও বাইতুল, সিরাজুল ইসলাম, একই উপজেলার বেলগাছি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহাদাৎ হোসেনের বাড়িতে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে।

ডাউকি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম দিপু বলেন, ‘আমি একজন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা। মনোনয়ন প্রত্যাশী দিলীপ কুমার আগরওয়ালার পক্ষে কাজ করায় আমিসহ আমার ইউনিয়নে বেশ কয়েজনের বাড়ি ও বাড়ির মেইন গেটে ভাঙচুর করে কয়েকজন যুবক।’

এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোমিনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়ায় সন্ধ্যার পর আমরা আনন্দ মিছিল করে চলে এসেছি। কে বা কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে, আমরা জানি না। তারা নিজেরাই এসব ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষারোপ করছে। এমন নোংরা রাজনীতি আমরা করি না।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য দিলীপ কুমার আগরওয়ালা বলেন, ‘আমি চুয়াডাঙ্গা-১ আসনে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সুচিন্তিত সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাই। চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২ আসনের নৌকার মাঝিদের জন্য অভিনন্দন ও শুভ কামনা রইলো। আমি সব সময় বলে এসেছি, নৌকা যার, আমরা তার। আমাদের নেতা-কর্মীরাও নৌকার ভোট করবে। চুয়াডাঙ্গা ও আলমডাঙ্গার তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আমাকে ভালোবাসেন এটা আমি জানি। তাই তাদের ভালোবাসার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান। আমি আমার নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি এবং থাকবো।

তিনি আরও বলেন, তবে দুঃখজনক বিষয় কোনো কারণ ছাড়াই আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানোসহ বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করা হয়েছে। এতে আমার বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। এরমধ্যে জেলা কৃষক লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা রয়েছেন।’ এদিকে, এ ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাব্বুর রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা। তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান জানান, কয়েকজনের বাড়ির সামনে গিয়ে গালিগালাজ ও ইটপাটকেল ছোড়ার খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করা হচ্ছে। ভুক্তভোগীদের আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এখন এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে।