ইপেপার । আজ রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫

মির্জা ফখরুলের কান্নায় ব্যাকফুটে বিএনপি!

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৮:২৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০১৬
  • / ৫৯৮ বার পড়া হয়েছে

image_1648_252952সমীকরণ ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্না নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় বইলে প্রতিপক্ষ একে ইস্যু বানিয়ে প্রকাশ্যেই বিএনপির বিগত সময়ের নেতিবাচক কর্মকা-কে সামনে এনে বক্তব্য রাখছেন। আর বিএনপিতে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ। অন্যদিকে এ নিয়ে সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও আছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। সব মিলিয়ে চলমান দুঃসময়ে দলের অন্যতম কা-ারির এই আচরণে বিএনপিকে কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব)-র উদ্যোগে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ ও নেতাকর্মীদের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপরই এই কান্নাকে ইস্যু করে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি- তো কান্নার দল নয়। তারা হত্যাকারীর দল উল্লেখ করে তিনি বিএনপির ক্ষমতা থাকাকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরেন। একই বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের আরো কাঁদতে হবে। তাদের কান্না শেষ হবে না।’ আর বিএনপির নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ডাকাতদের জন্য মায়াকান্না জুড়ে দিয়েছে এমন মন্তব্য করেন এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের কৌশল অনুযায়ী যেকোনো ইস্যু তৈরি করতে পারে তা স্বাভাবিক। কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের কান্নার ইস্যুতে বসে থাকেননি সাধারণ মানুষও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ মির্জা ফখরুলের বিগত সময়ে কর্মকাণ্ড নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। অনেকে বলেন, ‘যারা বোরখা পরে আদালতে হাজির হন, আন্দোলনের সময়ে আত্মগোপনে চলে যান তাদের কাছ থেকে কান্না ছাড়া আর কী আশা করা যায়?’
এছাড়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বিএনপি মহাসচিবের কান্না বিষয়ে নানাভাবে সমালোচনা করেছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলের তারকাদের হতাশার কান্নার সঙ্গে তুলনা করে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। বলা হয়েছে, দুই বছর আগে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে ব্রাজিলের অধিনায়ক থিয়েগো সিলভা খেলা শুরুর আগে জাতীয় সংগীত বাজার সময় কেঁদেছিলেন। তারপর তার দল যখন জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নেয়, তখন বলা হয়েছিল, যে অধিনায়ক খেলা শুরুর আগেই কাঁদেন, তার দলের ছেলেরা কীভাবে খেলায় জিতবেন। মির্জা ফখরুলের এই কান্নাও কি সেই রকমের বার্তা দেয় যে বিএনপির আর কোনো আশা নেই?
এদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রকাশ্যে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেও রোষানলে পড়ার ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বলে গোপনে মহাসচিবের সমালোচনা করছেন। এই কান্নার ইস্যু তৈরি হওয়ায় বিএনপির লাভ-ক্ষতির বিষয়গুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানায়, মহাসচিবের এ কান্নায় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হওয়ার পরিবর্তে দুর্বল হবে। আর চলমান যে জাতীয় ইস্যুগুলো আছে সেই ইস্যুকে চাপা দেয়ার একটি সুযোগ করে দেয়া হলো ক্ষমতাসীনদের।
দলের প্রভাবশালী এক নেতা জানান, একদিকে রামপাল ইস্যুতে আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলে কী ধরনের কর্মসূচি নেয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে, আর সাংগঠনিক পুনর্গঠন নিয়ে দলের মধ্যে আছে ভয়াবহ অস্থিরতা। এর মধ্যে দলের মহাসচিব নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার পরিবর্তে যদি দুর্বল করার থেরাপি দেন, তাহলে দল তো ব্যাকফুটে যাবেই।
এই নেতা আরো বলেন, দুই বার আন্দোলন নিষ্ফল হওয়ায় বিএনপির হাতে সময় একদম কম। আর অনেক সময় নিয়েও সাংগঠন গোছানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে এমন কোনো ইস্যু তৈরি করা উচিত নয় যাতে শুধু শুধু সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু মহাসচিবের এই আচরণের ফলে রাজনীতির বিষয়টি আরেক দিকে গেল। এই সময় ক্ষেপণটা বিএনপির জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি। এছাড়া মহাসচিবের এই কান্না সময়োপযোগী ছিল না। ফলে দলের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিএনপি অতীতের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকা-কে সামনে আনার সুযোগ করে দিয়েছে। রাজনীতিবিদ যদি আবেগআপ্লুত হয়ে তার বহিঃপ্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. অব. মাহবুবুর রহমান বলেন, নিজের কোনো কথা বলতে চান না। শুধু বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক অ্যারিস্টটলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলতে চান, ‘মনের শিক্ষাটা বড়। তবে হৃদয়ের শিক্ষাটা সবচেয়ে বড় এবং শ্রেষ্ঠ।’ মহাসচিব সেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষাটার কথাই বলেছেন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

মির্জা ফখরুলের কান্নায় ব্যাকফুটে বিএনপি!

আপলোড টাইম : ০৮:২৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৯ অগাস্ট ২০১৬

image_1648_252952সমীকরণ ডেস্ক: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কান্না নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় বইলে প্রতিপক্ষ একে ইস্যু বানিয়ে প্রকাশ্যেই বিএনপির বিগত সময়ের নেতিবাচক কর্মকা-কে সামনে এনে বক্তব্য রাখছেন। আর বিএনপিতে আছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও চাপা ক্ষোভ। অন্যদিকে এ নিয়ে সুশীল সমাজ ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও আছে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া। সব মিলিয়ে চলমান দুঃসময়ে দলের অন্যতম কা-ারির এই আচরণে বিএনপিকে কিছুটা ব্যাকফুটে ঠেলে দিয়েছে বলেই মনে করছেন অনেকে। গত মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে রিপোর্টার্স ইউনিটিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব)-র উদ্যোগে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ ও নেতাকর্মীদের দুরবস্থার কথা উল্লেখ করে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এরপরই এই কান্নাকে ইস্যু করে একের পর এক আক্রমণ শানিয়ে যাচ্ছে তাদের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘বিএনপি- তো কান্নার দল নয়। তারা হত্যাকারীর দল উল্লেখ করে তিনি বিএনপির ক্ষমতা থাকাকালীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের তথ্য তুলে ধরেন। একই বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের আরো কাঁদতে হবে। তাদের কান্না শেষ হবে না।’ আর বিএনপির নেতাকর্মীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে ডাকাতদের জন্য মায়াকান্না জুড়ে দিয়েছে এমন মন্তব্য করেন এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের কৌশল অনুযায়ী যেকোনো ইস্যু তৈরি করতে পারে তা স্বাভাবিক। কিন্তু বিএনপি মহাসচিবের কান্নার ইস্যুতে বসে থাকেননি সাধারণ মানুষও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষ মির্জা ফখরুলের বিগত সময়ে কর্মকাণ্ড নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। অনেকে বলেন, ‘যারা বোরখা পরে আদালতে হাজির হন, আন্দোলনের সময়ে আত্মগোপনে চলে যান তাদের কাছ থেকে কান্না ছাড়া আর কী আশা করা যায়?’
এছাড়া রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বিএনপি মহাসচিবের কান্না বিষয়ে নানাভাবে সমালোচনা করেছেন। আন্তর্জাতিক ফুটবলের তারকাদের হতাশার কান্নার সঙ্গে তুলনা করে গবেষণাধর্মী প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছে গণমাধ্যমে। বলা হয়েছে, দুই বছর আগে বিশ্বকাপ ফুটবলের আসরে ব্রাজিলের অধিনায়ক থিয়েগো সিলভা খেলা শুরুর আগে জাতীয় সংগীত বাজার সময় কেঁদেছিলেন। তারপর তার দল যখন জার্মানির কাছে হেরে বিদায় নেয়, তখন বলা হয়েছিল, যে অধিনায়ক খেলা শুরুর আগেই কাঁদেন, তার দলের ছেলেরা কীভাবে খেলায় জিতবেন। মির্জা ফখরুলের এই কান্নাও কি সেই রকমের বার্তা দেয় যে বিএনপির আর কোনো আশা নেই?
এদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা প্রকাশ্যে তাদের মতামত ব্যক্ত করলেও রোষানলে পড়ার ভয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কিছু না বলে গোপনে মহাসচিবের সমালোচনা করছেন। এই কান্নার ইস্যু তৈরি হওয়ায় বিএনপির লাভ-ক্ষতির বিষয়গুলো অনুসন্ধান করতে গিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানায়, মহাসচিবের এ কান্নায় নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা হওয়ার পরিবর্তে দুর্বল হবে। আর চলমান যে জাতীয় ইস্যুগুলো আছে সেই ইস্যুকে চাপা দেয়ার একটি সুযোগ করে দেয়া হলো ক্ষমতাসীনদের।
দলের প্রভাবশালী এক নেতা জানান, একদিকে রামপাল ইস্যুতে আন্দোলনে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, গ্যাসের দাম বৃদ্ধি হলে কী ধরনের কর্মসূচি নেয়া যায় তা নিয়েও আলোচনা চলছে, আর সাংগঠনিক পুনর্গঠন নিয়ে দলের মধ্যে আছে ভয়াবহ অস্থিরতা। এর মধ্যে দলের মহাসচিব নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করার পরিবর্তে যদি দুর্বল করার থেরাপি দেন, তাহলে দল তো ব্যাকফুটে যাবেই।
এই নেতা আরো বলেন, দুই বার আন্দোলন নিষ্ফল হওয়ায় বিএনপির হাতে সময় একদম কম। আর অনেক সময় নিয়েও সাংগঠন গোছানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে এমন কোনো ইস্যু তৈরি করা উচিত নয় যাতে শুধু শুধু সময়ক্ষেপণ হয়। কিন্তু মহাসচিবের এই আচরণের ফলে রাজনীতির বিষয়টি আরেক দিকে গেল। এই সময় ক্ষেপণটা বিএনপির জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতি। এছাড়া মহাসচিবের এই কান্না সময়োপযোগী ছিল না। ফলে দলের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে বিএনপি অতীতের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকা-কে সামনে আনার সুযোগ করে দিয়েছে। রাজনীতিবিদ যদি আবেগআপ্লুত হয়ে তার বহিঃপ্রকাশকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন তবে তার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. অব. মাহবুবুর রহমান বলেন, নিজের কোনো কথা বলতে চান না। শুধু বিশ্ববিখ্যাত গ্রিক বিজ্ঞানী ও দার্শনিক অ্যারিস্টটলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলতে চান, ‘মনের শিক্ষাটা বড়। তবে হৃদয়ের শিক্ষাটা সবচেয়ে বড় এবং শ্রেষ্ঠ।’ মহাসচিব সেই শ্রেষ্ঠ শিক্ষাটার কথাই বলেছেন।