সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে অবৈধ অস্ত্র; জননিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার শঙ্কা
- আপলোড টাইম : ০৬:৪২:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৩
- / ১০৭ বার পড়া হয়েছে
রাজনৈতিক বিভেদের মধ্যে গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ওই দিন জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং তার মিত্ররা ঘোষিত তফসিলকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্য দিকে, মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করেছে। এ নিয়ে প্রধান দুই দল পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। রাজনৈতিক এ বিরোধ মূলত নির্বাচন পরিচালনা কিভাবে হবে তা নিয়ে। দলীয় না তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে; এ নিয়ে দলগুলোর মধ্যে তীব্র মতবিরোধ রয়েছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ চায় দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন। অন্য দিকে, প্রতিপক্ষ বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো কোনো অবস্থাতে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না। বিএনপিসহ তার রাজনৈতিক জোট সঙ্গীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে দীর্ঘ দিন ধরে রাজপথে আন্দোলন করে আসছে। এ কথা সত্যি যে, আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো নজির নেই। এমন পেক্ষাপটে ইসির তরফ থেকে তফসিল ঘোষণা করায় রাজনৈতিক বিরোধ এখন সঙ্ঘাতময় হয়ে উঠবে, এটি সহজে অনুমেয়। আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্ত দিয়ে চোরাই পথে দেশে ঢুকছে অবৈধ অস্ত্র। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, সীমান্ত পাহারা জোরদার করা হয়েছে, কিন্তু তারপরও অস্ত্র চোরাচালান বন্ধ করা যাচ্ছে না। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ আসছে। বিজিবির বরাতে একটি সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, কমিশনের বিনিময়ে সীমান্তের ওপার থেকে অস্ত্র এনে এপারের অস্ত্র কারবারিদের হাতে তুলে দেয়। অস্ত্র কারবারিদের হাত ঘুরে সেসব অস্ত্র পৌঁছে যায় অসাধু রাজনৈতিক নেতা, সন্ত্রাসী, ডাকাত, ভূমিদস্যুসহ অপরাধীদের হাতে। সীমান্তে ও সীমান্ত এলাকায় মাঝেমধ্যে কিছু অস্ত্রের চালান ধরা পড়লেও বেশির ভাগ চালান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে দেশে ঢোকে। বিজিবি, পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের অন্তত ১৭টি পথ দিয়ে দেশে অবৈধ অস্ত্র ঢুকছে। বিজিবি সূত্র জানায়, ভারতের সাথে বাংলাদেশের চার হাজার ৪২৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। সীমান্ত থেকে অস্ত্র ঢোকার সময় তা উদ্ধার করার মূল দায়িত্ব বিজিবির। আর দেশের অভ্যন্তরে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি দেখাশোনা করে পুলিশ-র্যাব। বিজিবি সদর দফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত, ১০ মাসে বিজিবি সারা দেশের সীমান্তে অভিযান চালিয়ে ৮৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৫৯৭টি গুলি উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে ৩৪টি পিস্তল ও একটি রিভলবার, রাইফেল, বন্দুকসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে আরো ৪৮টি। আর পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, ২০২২ সালে পুলিশ সারা দেশে অভিযান চালিয়ে তিন হাজার ১৫২টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। এর আগের বছর ২০২১ সালে দুই হাজার ৩১০টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। সবার জানা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার বড় একটি উপকরণ হলো, সীমান্তে দিয়ে দেশে অস্ত্র ঢোকা। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে এই যে অস্ত্র চোরাকারবার বেড়েছে, এতে জননিরাপত্তা হুমকিতে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সঙ্গত কারণে কোনোভাবে যাতে অবৈধ অস্ত্র দেশে ঢুকতে না পারে সেজন্য অভিযান পরিচালনা করা এবং টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি আরো বাড়ানো উচিত। তা না হলে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে বৈকি। এতে জননিরাপত্তা বিঘ্ন হওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না।