গৃহকর্মী ধর্ষণে দূতাবাস কর্মকর্তা অভিযুক্ত; উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে
- আপলোড টাইম : ০১:৫৬:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৮ জুলাই ২০২৩
- / ৮২ বার পড়া হয়েছে
রাষ্ট্র পরিচালনায় অবক্ষয়ের সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেশের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি দফতরে কোনো কাজ ঘুষ ছাড়া হবে, এটি এখন অপ্রত্যাশিত। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বড় একটি অংশ চাকরিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতিতে গা ভাসিয়ে দিচ্ছে। এমনকি অনেকে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। আমরা দেখলাম, একজন ডিসি তার অধস্তন এক নারীকর্মীর সাথে অবৈধ যৌনাচারে লিপ্ত হয়েছেন। বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোতেও কিছু সদস্যের মধ্যে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও যৌন-অপরাধ করে তারা প্রবাসে দেশের সুনামহানি করছেন। একটি অংশ দূতাবাসে নিজ দেশের প্রবাসীদের প্রতি কর্তব্য পালন দূরে থাক, অবলীলায় দুর্ব্যবহার-হয়রানি করে। কাউকে প্রাপ্য সেবা দেয় না। সৌদি আরবের বাংলাদেশী এক কূটনীতিক ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত হয়েছেন। রিয়াদ মিশনে দূতাবাসের হেফাজতে থাকা সেফ হোমে নারীদের ওপর অত্যাচার করেছেন তিনি। গৃহকর্মীদের একান্তে ডেকে নিতেন উপসচিব পদমর্যাদার কূটনীতিক মেহেদী হাসান। সাক্ষাৎকারের নামে অশ্লীল প্রশ্ন করতেন। বিভাগীয় তদন্তে প্রমাণ মিলেছে; সেখানে থাকা কয়েক নারীকে ধর্ষণ করেছেন মেহেদী। লক্ষণীয়, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী কর্মকর্তাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে বেড়েছে। একজন কর্মকর্তা কোনো একটি গুরুতর অপরাধ চাকরিতে যোগ দেয়ার শুরুতেই করছেন এমন নয়। এর একটি অতীত রয়েছে। প্রথমে তারা যখন ছোট ছোট অপরাধ করেন, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে নতুন করে অন্যায় করার দুঃসাহস তারা দেখাতেন না। কিন্তু বিদেশী মিশনগুলোতে এ ধরনের ঘটনা কাঠমান্ডু, কলকাতা ও জাকার্তায় বেশ দৃষ্টিকটুভাবে ঘটেছে। অথচ দেশের মর্যাদাহানিকর কর্মকাণ্ডের উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে গাফিলতি দেখা যায়। জাকার্তায় বাংলাদেশী এক নারী কূটনীতিকের মারিজুয়ানা কেলেঙ্কারি সবার দৃষ্টি কাড়ে। জাকার্তার বাসায় নিষিদ্ধ মাদক রাখার দায়ে দেশটির সরকার তাকে আটক করে। ওই নারী কূটনীতিক নাইজেরীয় বন্ধুর সাথে একই বাসায় থাকতেন। কর্তৃপক্ষ সেই বাসায় অভিযান চালিয়ে অবৈধ মাদক উদ্ধার করে বন্ধুসহ তাকে আটক করে। একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাকে ইন্দোনেশিয়া ছাড়তে হয়। এটি এমন একসময় ঘটেছে, যখন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সে দেশ সফরে যাচ্ছিলেন। তার বিরুদ্ধে নাইজেরীয় যুবকের সাথে লিভটুগেদারের অভিযোগ ছিল। এই নারীর কেলেঙ্কারি এটিই প্রথম নয়। যুক্তরাষ্ট্রের লসএঞ্জেলেস থেকে এর আগে তাকে ফেরত আনতে হয়েছিল গৃহকর্মী নিখোঁজের ঘটনায়। নাইজেরীয়র সাথে তার সম্পর্কের সূত্রপাতও সেখানে। বিদেশী দূতাবাস একটি স্পর্শকাতর জায়গা। একজন নীতিবান আদর্শবান দক্ষ মানুষ এ কাজে নিযুক্তি পায়। কূটনীতিকদের জন্য বিদেশী বন্ধু গ্রহণ ও বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে। কিন্তু এই নারী কূটনীতিক যখন সন্দেহজনক কাজ করছিলেন; তার বিরুদ্ধে কার্যকর তদন্ত হয়নি। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে কিছু দিন পরে তিনি ইন্দোনেশীয় দূতাবাসে নিয়োগ পান। পরিণামে তিনি দেশের জন্য আরো দুর্নাম বয়ে আনেন।
দূতাবাসের কর্মকর্তাদের অন্যান্য অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। কাতারে দীর্ঘদিন ধরে এক বাংলাদেশী ব্যবসায়ী মানবেতর জীবনযাপন করেন। দেশটিতে তিনি দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সুনামের সাথে ব্যবসায় করেছেন। দূতাবাসের কিছু কর্মকর্তার সাথে একদল প্রতারক মিলে তার ব্যবসায় ক্ষতি করে। এমনকি পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। তিনি ঢাকার আদালতে মামলা করলে কাতার দূতাবাসকে তার পাসপোর্ট ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেন। সেই আদেশ অমান্য করে পাসপোর্ট ফেরত দেয়া হয়নি। ফলে তিনি সেখানে মানবেতর জীবনযাপন করেন। এমন অভিযোগ বর্তমান সরকারের আমলে বহু উঠেছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা প্রতিকার পাননি। বাংলাদেশের শ্রমিকরা যেসব দেশে কাজ করতে যান; সেখানে দূতাবাসের সহযোগিতার বদলে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য ও দুর্ব্যবহারের শিকার হন তারা। বাংলাদেশী কূটনীতিক মিশনগুলোতে দুর্নীতিবাজ ও অনৈতিক কর্মকর্তাদের একটি চক্র গড়ে উঠেছে। ফলে দোষীর বিচারের বদলে পদোন্নতি, ভালো নিয়োগ পাচ্ছেন। যে কারণে অপরাধী ফের একই অপরাধ করছেন। এ অবস্থার পরিবর্তন দরকার। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা হলেই মিশনে নিযুক্ত অপরাধ কর্মকাণ্ডের হোতারা খামোশ হবে