ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কগুলোতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বন্ধ করা হবে-জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ
- আপলোড টাইম : ০৫:০১:৫৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অগাস্ট ২০১৭
- / ৬৩৫ বার পড়া হয়েছে
চুয়াডাঙ্গা ফেরীঘাট রোডের শিশুস্বর্গ পার্কে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ
ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্কগুলোতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা বন্ধ করা হবে
নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিদিন পত্রিকার পাতা খুললেই কম বেশি দেখা যায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার বিভিন্ন সংবাদ। আর এসব ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পঁচা-বাসি খাবার, মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার, ইভটিজিং সহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজের সাজা প্রদান করে। কিন্তু এবার ঘটলো এক ব্যতিক্রম ঘটনা। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে চুয়াডাঙ্গা ফেরীঘাট রোডের বহুল আলোচিত শিশুস্বর্গ পার্কে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় চালানো হয় জনসচেতনতামূলক অভিযান।
গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ অভিযানে স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিয়ে স্কুল-কলেজ পড়–য়া অপ্রাপ্তবয়ষ্ক যুবক-যুবতী কিংবা অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত যুবক-যুবতীদের সাবধান ও সতর্ক করা হয়। আর এই অভিযানের নেতৃত্ব প্রদান করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ। এ সময় তিনি পুরো পার্কের আনাচে কানাচে ঘুরে এই অভিযান পরিচালনা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুচিত্র রঞ্জন দাস ও সিব্বির আহমেদ সহায়তা করেন।
জেলা প্রশাসক জিয়াউদ্দীন আহমেদ সময়ের সমীকরণকে বলেন,‘শিশু পার্কে ইতিমধ্যে অনেক অনৈতিক কর্মকান্ড হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে পার্কের সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আজ (গতকাল) আমরা অভিযান চালাই। স্কুল-কলেজে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে পার্ক গুলোতে শিক্ষার্থীদের আনাগোনা সম্পূর্ণ বন্ধ করতে এ অভিযান অব্যাহত থাকবে। প্রথম পর্যায়ে ছবি তুলে, পরিচয় লিপিবদ্ধ করে মৌখিক অঙ্গীকারের ভিত্তিতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যাদেরকে আটক করা হবে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
এ সময় কোন প্রেমিক জুুটিকে আটক কিংবা সাজা দেওয়া না হলেও পার্ক কতৃপক্ষকে দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ২৯৪ ধারায় প্রকাশ্য স্থানে অশ্লীল কার্যকালাপ সৃষ্টির দায়ে পার্ক কর্তৃপক্ষকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। সাথে সাথে সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত স্কুল-কলেজ চলাকালীন সময়ে কোন ছাত্র-ছাত্রীকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ও সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের নির্দেশ দেন এবং অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। পার্কে আমাদের এ অভিযান অব্যহত থাকবে।
জেলা প্রশাসকের এই অভিযানের খবরে চুয়াডাঙ্গা শহরের বিভিন্ন মহলের ব্যক্তিবর্গরা সাধুবাদ জানান। চুয়াডাঙ্গা কোর্ট পাড়ার নাজমুল হক স্বপন, তিনি একজন সচেতন অভিভাবক। এ বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, আজ (গতকাল) জেলা প্রশাসন শিশু পার্কে যে অভিযান চালিয়েছেন তা সত্যি প্রশংসনীয়। কারন শিশু পার্কে যে সকল অনৈতিক কর্মকান্ড হতো তার জন্য শিশু পার্কে পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে যাওয়া যেতো না।’
উল্লেখ্য, চুয়াডাঙ্গা পৌর শহরের ফেরীঘাট রোডের অন্যতম শিশু বিনোদন কেন্দ্র শিশুস্বর্গ শিশু পার্কে পূর্বে স্কুল/কলেজের শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে অনেক অনৈতিক কর্মকান্ড ঘটে আসছিলো। যার সংবাদ ইতিপূর্বে জেলা প্রশাসক পেয়েছেন।
সূত্রে জানা গেছে, পার্কটিতে বেশ কয়েক বছর যাবত যুবক-যুবতীদের নিরাপদ মিলন স্থলে পরিনত হয়েছে। প্রেম ভালোবাসার নামে এখানে লঙ্ঘন হচ্ছে অবাধ মেলামেশা ও অশ্লীলতার চরমসীমা। প্রেমের নামে নির্লজ্জহীন তরুন, তরুনী, কিশোর কিশোরীরা আবেগঘন মুহুর্ত পার করছে। পার্কের মধ্যে ঘুরে দেখা গেছে, হরেক রং বেরঙের মনমাতানো পোশাক, স্কুল-কলেজের নির্ধারিত পোশাক, বোরকা পরে প্রেমিকদের সাথে আদান প্রদান চালাচ্ছে প্রেমিকারা। ভালোবাসার নামে প্রকাশ্যেই তারা একে অপরকে জড়িয়ে চুমুসহ নানা আপত্তিকর কার্যকলাপে লিপ্ত হচ্ছে। প্রেমের নামে সাময়িক সুখ পেতে জলাঞ্জলি দিচ্ছে নিজেদের আত্মসম্মান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পার্কে ঘুরতে আসা আশপাশের লোকজনকেও তোয়াক্কা করছে না বেহায়পনা সেই সকল তরুন তরুনীরা। নিষিদ্ধ আকাঙ্খা মিটানোর সময় ঠিক থাকে না তাদের পোশাক-পরিচ্ছদ। পার্কের ঘাস ও গাছের নিচের ঝুপড়ি জায়গাগুলো তাদের বিছানায় রূপ নেয়। পার্কে ঢুকেই দু’পাশে দেখা গেছে, সারি সারি প্রমিক যুগল বসে আছে। এদের মধ্যে স্কুলের ইউনিফর্ম পরা জুটিও রয়েছে। বেশির ভাগই স্কুল-কলেজ ফাঁকি দিচ্ছে তারা। শিশু পার্কের প্রবেশ ফি ২০ টাকা হওয়ায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা টিকিট কেটে ঘন্টার পর ঘন্টা পার্কে বসে আড্ডায় মেতে উঠে। আর এতে সরাসরি সহযোগীতা করে পার্কের দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ নিরাপত্তা রক্ষীরা। কেননা এখানে পুলিশি-বা সাধারন মানুষের ভয় না থাকায় তারা হরহামেশায় চালাচ্ছে এসকল নির্লজ্জ কর্মকান্ড। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পার্ক পরিচালনাকারী একজনের দাবী, এখানে যৌন চাহিদা মেটানোর মত কোন সুযোগ নেই। কিন্তু মুচকি হেসে বলে- বুঝেনই তো ছেলে- মেয়েরা যাবে কোথায়? নিরিবিলি পরিবেশে দু-চারটা কথা বলার মত নিরাপদ স্থান এ শহরে কোথায় আছে বলুন? কোন ছেলে মেয়ে যদি ভাল উদ্দেশ্যে একটি শান্ত-বা নিরিবীলি পরিবেশে বসে কথা বলে তাহলে দেখবেন কেউ আবার তাদের বাজে মন্তব্য ছড়াচ্ছে। তাইতো তারা নিরাপত্তার কথা ভেবেই শিশু পার্কে আসেন। এসময় পার্কের মধ্যে অশ্লীলতার কথা জানতে চাইলে তিনি আরও জানান, পার্কে ঘুরতে আসা বেশির ভাগ ছেলে মেয়েই ১৩ থেকে ২৫ বছর বয়সী। এই বয়সটায় একটু উথাল পাথাল থাকবেই। কিন্তু সেই বলে যে এখানে এসে তারা অশ্লীল কিছু করবে সেটা আমরা প্রশ্রয় দিবো না।