ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

পানি সরবরাহের নির্দিষ্ট সময়ে থাকছে না বিদ্যুত : ক্ষুব্ধ পৌরবাসী : চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত বিপর্যয়ে পানি সঙ্কট চরমে! : রিজার্ভ ট্যাংকে থাকছে পানি সারাদিন জরুরি প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:২৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭
  • / ৭১২ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিবেদক: সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে পৌরসভার পানি সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি, অন্যদিকে পৌরসভার অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ- এ যেনো পৌরবাসীর দৈনন্দিন জীবনে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুতের সাথে পানি সরবরাহ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ফলে বিদ্যুতের টানা লোডশেডিংয়ে পানি সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় জনজীবন হয়ে পড়েছে অতিষ্ঠ। পানি সরবরাহের নির্ধারিত সময়েও পানি পাচ্ছেন না অনেকে। তবে কোথাও কোথাও ধীর গতিতে পাওয়া গেলেও ওইসময় বিদ্যুত না পেয়ে ট্যাংকিতে পানি সংরক্ষণ করতে পারছেন না গ্রাহকরা। যে কারণে সারাদিনই গৃহস্থালিসহ পানির জরুরি প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা সরবরাহকৃত পানি নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকদের মাঝে সরবরাহ করে থাকে। তার মধ্যে দুপুরের সময়ে পানির চাহিদা থাকে সবচে’ বেশি। সপ্তাহখানেক ধরে দুপুরসহ পরবর্তি সময়েও পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এ সমস্যার কারণে গ্রাহকদের সুবিধার্থে রাত ৯টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করছে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা। ওই সময়েও বিদ্যুত না থাকায় রিজার্ভ ট্যাংক এবং তা থেকে উপরের ট্যাংকে পানি তুলতে পারছেন না গ্রাহকরা। এদিকে, বিদ্যুত সমস্যার জন্য পানি সংকটের বিষয়টি বিদ্যুত বিভাগে জানানো হলে, তা দ্রুত সমাধানের কথা জানিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হলেই পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা যাবে, কোন সংকট থাকবে না বলে পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় ৯০ কিলোমিটার পানির পাইপ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পানির ট্যাংক ও নয়টি পাম্প রয়েছে। প্রতিদিন নির্ধারিত তিন সময়ে সাড়ে ৫ ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি বিদ্যুত সমস্যার কারণে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের হাজরাহাটি, বড়বাজার, কলেজ, হাসপাতাল ও বিডিআর নামের ফিডার আছে। পানির ৯টি পাম্পের একেকটি আলাদা আলাদা বৈদ্যুতিক ফিডারের অন্তর্ভূক্ত। পানি সরবরাহের সময় সবকটি পাম্প চালানো হয়, ফলে পানির চাপ বেশি থাকে। কিন্তু সম্প্রতি সময়মতো বিদ্যুত না পাওয়ায় সবকটি পাম্প চালানো সম্ভব হচ্ছে না। হাজরাহাটি ফিডার বন্ধ থাকলে ইসলামপাড়াসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সবকটি পাম্প বন্ধ থাকে। ফলে বড়বাজারসহ আশপাশ এলাকায় পানির চাপ থাকে এবং পুরো লাইনেই পানির চাপ কমে যায়। বৈদ্যুতিক ফিডার বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৯টি পাম্পের স্থলে ৫/৬টি পাম্প চালানো সম্ভব হচ্ছে। ফলে ৫/৬টি পাম্পের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ৯০ কি.মি. লাইনে। যার কারনে সব যায়গাতেই পানির চাপ কম থাকছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী (পানি) এএইচএম সাহীদুর রশীদ জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ৯টি পানির পাম্প রয়েছে। এছাড়া তিনটি পানির ট্যাংক রয়েছে। একেকটি ট্যাংক পূর্ণ হতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। আর সোয়া এক ঘন্টার মধ্যে খালি হয়ে যায়। ফলে পানি সরবরাহের নির্ধারিত সময়সহ বাড়তি ৩ ঘন্টা পাম্প চালিয়ে ট্যাংক গুলো পূর্ণ করে রাখা হয়। প্রতিদিন ৯টি পাম্পের প্রত্যেকটি পাম্প পানি সরবরাহের সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময়ই চালানো হয়। আর ট্যাংকিগুলোর পাম্প চালানো হয় প্রতিদিন সাড়ে ১১ ঘন্টা। বিভিন্ন এলাকার ৯টি পানির পাম্প বিদ্যুত বিভাগের আলাদা আলাদা ফিডারের অন্তর্ভূক্ত। সম্প্রতি গ্রিডে সমস্যার কারণে চুয়াডাঙ্গায় ব্যপক আকারে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তারা একসাথে পাঁচটি ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ৯টি পাম্প একসাথে চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে পানির চাপ অনেকটা কমে গেছে।
এএইচএম সাহীদুর রশীদ আরও বলেন, বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ের কারণে পানি সমস্যার বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা বিদ্যুত বিভাগে জানানো হয়েছে। বৈদ্যুতিক গ্রিডে সমস্যা হওয়ার কারণে লোডশেডিং শুরু হয়েছে, আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান হবে বলে জানিয়েছে তারা।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, বিদ্যুত সমস্যার কারণে পানি সংকটের বিষয়টি বিদ্যুত বিভাগে জানানো হয়েছে। পৌর এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য অন্তত বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শহরের সবকটি ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করার জন্য বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় তারা একসাথে ৫টি ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারছে না। এছাড়া, খুব শিঘ্রই পৌর এলাকায় আরও কয়েকটি পানির পাম্প স্থাপন করা হবে। এগুলো হয়ে গেলে আর বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হলেই পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ সম্ভব হবে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

পানি সরবরাহের নির্দিষ্ট সময়ে থাকছে না বিদ্যুত : ক্ষুব্ধ পৌরবাসী : চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত বিপর্যয়ে পানি সঙ্কট চরমে! : রিজার্ভ ট্যাংকে থাকছে পানি সারাদিন জরুরি প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম

আপলোড টাইম : ০৬:২৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭

বিশেষ প্রতিবেদক: সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গায় বিদ্যুত বিভ্রাটের কারণে পৌরসভার পানি সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। একদিকে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি, অন্যদিকে পৌরসভার অপর্যাপ্ত পানি সরবরাহ- এ যেনো পৌরবাসীর দৈনন্দিন জীবনে ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুতের সাথে পানি সরবরাহ অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ফলে বিদ্যুতের টানা লোডশেডিংয়ে পানি সরবরাহ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় জনজীবন হয়ে পড়েছে অতিষ্ঠ। পানি সরবরাহের নির্ধারিত সময়েও পানি পাচ্ছেন না অনেকে। তবে কোথাও কোথাও ধীর গতিতে পাওয়া গেলেও ওইসময় বিদ্যুত না পেয়ে ট্যাংকিতে পানি সংরক্ষণ করতে পারছেন না গ্রাহকরা। যে কারণে সারাদিনই গৃহস্থালিসহ পানির জরুরি প্রয়োজন মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পৌরবাসীকে। চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা সরবরাহকৃত পানি নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকদের মাঝে সরবরাহ করে থাকে। তার মধ্যে দুপুরের সময়ে পানির চাহিদা থাকে সবচে’ বেশি। সপ্তাহখানেক ধরে দুপুরসহ পরবর্তি সময়েও পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠেছে। এ সমস্যার কারণে গ্রাহকদের সুবিধার্থে রাত ৯টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত পানি সরবরাহ করছে চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা। ওই সময়েও বিদ্যুত না থাকায় রিজার্ভ ট্যাংক এবং তা থেকে উপরের ট্যাংকে পানি তুলতে পারছেন না গ্রাহকরা। এদিকে, বিদ্যুত সমস্যার জন্য পানি সংকটের বিষয়টি বিদ্যুত বিভাগে জানানো হলে, তা দ্রুত সমাধানের কথা জানিয়েছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হলেই পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করা যাবে, কোন সংকট থাকবে না বলে পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে।
জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় ৯০ কিলোমিটার পানির পাইপ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি পানির ট্যাংক ও নয়টি পাম্প রয়েছে। প্রতিদিন নির্ধারিত তিন সময়ে সাড়ে ৫ ঘন্টা পানি সরবরাহ করা হয়। সম্প্রতি বিদ্যুত সমস্যার কারণে পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি সংকট দেখা দিয়েছে। বিদ্যুত বিভাগের হাজরাহাটি, বড়বাজার, কলেজ, হাসপাতাল ও বিডিআর নামের ফিডার আছে। পানির ৯টি পাম্পের একেকটি আলাদা আলাদা বৈদ্যুতিক ফিডারের অন্তর্ভূক্ত। পানি সরবরাহের সময় সবকটি পাম্প চালানো হয়, ফলে পানির চাপ বেশি থাকে। কিন্তু সম্প্রতি সময়মতো বিদ্যুত না পাওয়ায় সবকটি পাম্প চালানো সম্ভব হচ্ছে না। হাজরাহাটি ফিডার বন্ধ থাকলে ইসলামপাড়াসহ সংশ্লিষ্ট এলাকার সবকটি পাম্প বন্ধ থাকে। ফলে বড়বাজারসহ আশপাশ এলাকায় পানির চাপ থাকে এবং পুরো লাইনেই পানির চাপ কমে যায়। বৈদ্যুতিক ফিডার বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৯টি পাম্পের স্থলে ৫/৬টি পাম্প চালানো সম্ভব হচ্ছে। ফলে ৫/৬টি পাম্পের পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ৯০ কি.মি. লাইনে। যার কারনে সব যায়গাতেই পানির চাপ কম থাকছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সহকারি প্রকৌশলী (পানি) এএইচএম সাহীদুর রশীদ জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে ৯টি পানির পাম্প রয়েছে। এছাড়া তিনটি পানির ট্যাংক রয়েছে। একেকটি ট্যাংক পূর্ণ হতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। আর সোয়া এক ঘন্টার মধ্যে খালি হয়ে যায়। ফলে পানি সরবরাহের নির্ধারিত সময়সহ বাড়তি ৩ ঘন্টা পাম্প চালিয়ে ট্যাংক গুলো পূর্ণ করে রাখা হয়। প্রতিদিন ৯টি পাম্পের প্রত্যেকটি পাম্প পানি সরবরাহের সাড়ে পাঁচ ঘন্টা সময়ই চালানো হয়। আর ট্যাংকিগুলোর পাম্প চালানো হয় প্রতিদিন সাড়ে ১১ ঘন্টা। বিভিন্ন এলাকার ৯টি পানির পাম্প বিদ্যুত বিভাগের আলাদা আলাদা ফিডারের অন্তর্ভূক্ত। সম্প্রতি গ্রিডে সমস্যার কারণে চুয়াডাঙ্গায় ব্যপক আকারে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। তারা একসাথে পাঁচটি ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে ৯টি পাম্প একসাথে চালানো সম্ভব হচ্ছে না। যার কারণে পানির চাপ অনেকটা কমে গেছে।
এএইচএম সাহীদুর রশীদ আরও বলেন, বৈদ্যুতিক লোডশেডিংয়ের কারণে পানি সমস্যার বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা বিদ্যুত বিভাগে জানানো হয়েছে। বৈদ্যুতিক গ্রিডে সমস্যা হওয়ার কারণে লোডশেডিং শুরু হয়েছে, আগামী সপ্তাহখানেকের মধ্যে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান হবে বলে জানিয়েছে তারা।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র ওবায়দুর রহমান চৌধুরী জিপু বলেন, বিদ্যুত সমস্যার কারণে পানি সংকটের বিষয়টি বিদ্যুত বিভাগে জানানো হয়েছে। পৌর এলাকায় পানি সরবরাহের জন্য অন্তত বেলা সাড়ে ১২টা থেকে শহরের সবকটি ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করার জন্য বলা হয়েছে। বিদ্যুৎ ঘাটতি থাকায় তারা একসাথে ৫টি ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ করতে পারছে না। এছাড়া, খুব শিঘ্রই পৌর এলাকায় আরও কয়েকটি পানির পাম্প স্থাপন করা হবে। এগুলো হয়ে গেলে আর বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হলেই পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ সম্ভব হবে।