ইপেপার । আজ শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

দর্শনা চেকপোস্টে দিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশ-ভারতগামী : যাত্রী চলাচল বৃদ্ধির সকল রেকর্ড অতিক্রম

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৫:০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭
  • / ৪৬৬ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কাষ্টমস্ চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত চলতি বছর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮৬ সালে দর্শনার জয়নগরে কাষ্টমস্ ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থানান্তরের পর বিগত ৩০ বছরের মধ্যে যাত্রী চলাচলের সকল রেকর্ড চলতি বছরের ৭ মাসে অতিক্রম করেছে।
জানা যায় ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবারও চালু হয়। এ সময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেটে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা যাতায়াত করতে থাকেন। তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হতো দর্শনা ষ্টেশনের উপর ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস্ চেকপোস্ট স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু হয়। তখনও রেল লাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছাতে হতো। এরপর রেল লাইনের পাশ ঘেষে নির্মিত হয় পাকা সড়ক এবং এর দু’ধারে বিজিবির উদ্যোগে তৈরী হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান। তা যেন আগতদের সর্বদা অভিবাদন জানাচ্ছে। অপরদিকে ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। তাছাড়া বাংলাদেশের যে কোন সীমান্ত রুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সাথে ঢাকার দুরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়ক পথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই রুটে যাত্রীদের চলাচল দিনদিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীত বছরগুলোতে যেখানে সারা বছরে ২/৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন সেখানে ২০১৬ সালে এই রুটে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৭ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৯৮১ জন ভারতীয় এবং ৪৭ জন অন্যান্য দেশীয় নাগরিক। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৬ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৪৩৮ জন ভারতীয় এবং ৫৫ অন্যান্য দেশীয় নাগরিক। অপর দিকে শুধুমাত্র ২০১৭ সালে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৮ জন বাংলাদেশী, ৭ হাজার ৩৯৫ জন ভারতীয় এবং ৩০ জন অন্যান্য দেশীয় নাগরিক। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৯৯ হাজার ৬৪৪ জন বাংলাদেশী, ৭ হাজার ৮৪ জন ভারতীয় এবং ৩৪ জন অন্যান্যদেশীয় নাগরিক।
বাংলাদেশী যাত্রীদের হঠাৎ ভারতমুখী হবার পিছনে যে সমস্ত কারনগুলো জানা গেছে, তার মধ্যে রয়েছে-ভারত কতৃক ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ, দেশের তুলনায় ভারতের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ঐতিহাসিক, দর্শনীয় স্থান পরিভ্রমন প্রবনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
তবে দর্শনা রুটে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চেকপোস্টের সঙ্গে দর্শনার সংযোগ সড়কগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভ্রমণ কর পরিশোধের সুবিধার্থে চেকপোস্টে সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ খোলা প্রয়োজন। কারন কোন যাত্রী ভুলক্রমে ট্রাভেল ট্যাক্স প্রদান করে না আসলে তাকে আবার ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দর্শনায় গিয়ে ভ্রমন কর পরিশোধ করতে হয়। একই সাথে ঢাকা-খুলনা গামী ডাউন আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের দর্শনা হল্ট স্টেশনে স্টপেজ দিলে ঢাকা থেকে আগত যাত্রীদের জন্য এই পথে যাতায়াত আরও সহজতর হবে।
দর্শনা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা শেখ মাহাবুবুর রহমান জানান সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমান নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন ভবন চালু হলে যাত্রী সেবা আরো বৃদ্ধি পাবে।
তবে, যাত্রী যাতায়াত বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় দালাল চক্রের দৌরাত্ম। দালালচক্র ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস ও এক শ্রেণীর ধান্দাবাজ সাংবাদিকের নামে প্রকাশ্যে যাত্রীদের নিয়ে প্রতিনিয়ত টানাটানি করে থাকে। এসব দৃশ্য প্রতিদিন দেখা গেলেও উপস্থিত আইনশৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা থাকে প্রশ্নবিদ্ধ, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপক্ষের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দর্শনা চেকপোস্টে দিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশ-ভারতগামী : যাত্রী চলাচল বৃদ্ধির সকল রেকর্ড অতিক্রম

আপলোড টাইম : ০৫:০৮:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অগাস্ট ২০১৭

নিজস্ব প্রতিবেদক: চুয়াডাঙ্গার দর্শনা কাষ্টমস্ চেকপোস্ট দিয়ে সড়ক পথে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত চলতি বছর ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৮৬ সালে দর্শনার জয়নগরে কাষ্টমস্ ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থানান্তরের পর বিগত ৩০ বছরের মধ্যে যাত্রী চলাচলের সকল রেকর্ড চলতি বছরের ৭ মাসে অতিক্রম করেছে।
জানা যায় ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর ১৯৬২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনা দিয়ে ভারতের গেদে রেলরুটে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধকালে তা বন্ধ হয়ে গেলেও দেশ স্বাধীনের পর আবারও চালু হয়। এ সময় সীমিত আকারে হলেও রেলপথ ধরে পায়ে হেটে পাসপোর্টধারী যাত্রীরা যাতায়াত করতে থাকেন। তখন ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হতো দর্শনা ষ্টেশনের উপর ছোট্ট একটা কক্ষে। পরবর্তীতে যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে ১৯৮৬ সালে দর্শনার সীমান্ত সংলগ্ন জয়নগরে কাস্টমস্ চেকপোস্ট স্থানান্তর করে কার্যক্রম শুরু হয়। তখনও রেল লাইন ধরে যাত্রীদের পায়ে হেটে ভারতের গেদে স্টেশনে পৌঁছাতে হতো। এরপর রেল লাইনের পাশ ঘেষে নির্মিত হয় পাকা সড়ক এবং এর দু’ধারে বিজিবির উদ্যোগে তৈরী হয়েছে মনোমুগ্ধকর ফুলের বাগান। তা যেন আগতদের সর্বদা অভিবাদন জানাচ্ছে। অপরদিকে ভারতের অংশেও নির্মাণ করা হয়েছে পাকা সড়ক। ফলে যাত্রীরা ভ্যানযোগে সহজেই উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত করতে পারছেন। তাছাড়া বাংলাদেশের যে কোন সীমান্ত রুটের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার সাথে ঢাকার দুরত্ব দর্শনা দিয়ে সড়ক পথে কম এবং রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই রুটে যাত্রীদের চলাচল দিনদিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতীত বছরগুলোতে যেখানে সারা বছরে ২/৩ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন সেখানে ২০১৬ সালে এই রুটে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৭ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৯৮১ জন ভারতীয় এবং ৪৭ জন অন্যান্য দেশীয় নাগরিক। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৯৮৬ জন বাংলাদেশী, ১৩ হাজার ৪৩৮ জন ভারতীয় এবং ৫৫ অন্যান্য দেশীয় নাগরিক। অপর দিকে শুধুমাত্র ২০১৭ সালে ১ জানুয়ারী থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৭ মাসেই বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছে ১ লাখ ২ হাজার ৫৫৮ জন বাংলাদেশী, ৭ হাজার ৩৯৫ জন ভারতীয় এবং ৩০ জন অন্যান্য দেশীয় নাগরিক। একই সময় ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে ৯৯ হাজার ৬৪৪ জন বাংলাদেশী, ৭ হাজার ৮৪ জন ভারতীয় এবং ৩৪ জন অন্যান্যদেশীয় নাগরিক।
বাংলাদেশী যাত্রীদের হঠাৎ ভারতমুখী হবার পিছনে যে সমস্ত কারনগুলো জানা গেছে, তার মধ্যে রয়েছে-ভারত কতৃক ভিসা ব্যবস্থা সহজীকরণ, দেশের তুলনায় ভারতের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ঐতিহাসিক, দর্শনীয় স্থান পরিভ্রমন প্রবনতা বৃদ্ধি ইত্যাদি।
তবে দর্শনা রুটে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য চেকপোস্টের সঙ্গে দর্শনার সংযোগ সড়কগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মেরামত করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভ্রমণ কর পরিশোধের সুবিধার্থে চেকপোস্টে সোনালী ব্যাংকের একটি বুথ খোলা প্রয়োজন। কারন কোন যাত্রী ভুলক্রমে ট্রাভেল ট্যাক্স প্রদান করে না আসলে তাকে আবার ৪ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে দর্শনায় গিয়ে ভ্রমন কর পরিশোধ করতে হয়। একই সাথে ঢাকা-খুলনা গামী ডাউন আন্তঃনগর চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের দর্শনা হল্ট স্টেশনে স্টপেজ দিলে ঢাকা থেকে আগত যাত্রীদের জন্য এই পথে যাতায়াত আরও সহজতর হবে।
দর্শনা ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা শেখ মাহাবুবুর রহমান জানান সীমিত সামর্থ্যরে মধ্যেও আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বর্তমান নির্মাণাধীন ইমিগ্রেশন ভবন চালু হলে যাত্রী সেবা আরো বৃদ্ধি পাবে।
তবে, যাত্রী যাতায়াত বৃদ্ধির সাথে সাথে বেড়েছে চেকপোস্ট সংলগ্ন এলাকায় দালাল চক্রের দৌরাত্ম। দালালচক্র ইমিগ্রেশন পুলিশ, কাস্টমস ও এক শ্রেণীর ধান্দাবাজ সাংবাদিকের নামে প্রকাশ্যে যাত্রীদের নিয়ে প্রতিনিয়ত টানাটানি করে থাকে। এসব দৃশ্য প্রতিদিন দেখা গেলেও উপস্থিত আইনশৃংখলা বাহিনীর ভূমিকা থাকে প্রশ্নবিদ্ধ, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কতৃপক্ষের খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।