ইপেপার । আজ শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

দেশেই জাতীয় পরিচয় পত্রের স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ভাবছে ইসি

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৫৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০১৭
  • / ৫২২ বার পড়া হয়েছে

ফ্রান্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা : স্মার্টকার্ড প্রকল্পে অবার্থুর সাথে চুক্তির মেয়াদ বাড়ছে না
দেশেই জাতীয় পরিচয় পত্রের স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ভাবছে ইসি
সমীকরণ ডেস্ক: স্মার্টকার্ড প্রকল্পে ফ্রান্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলোজিস (ওটি)-এর ব্যর্থতায় তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিকল্প হিসাবে দেশেই স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ভাবছে ইসি। গত ৩০ জুন পর্যন্ত ওটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ছিল। চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে কমিশন।
সূত্র জানায়, নানা টানাপোড়েনে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের স্মাটকার্ড প্রক্রিয়াকরণ (পারসোনালাইজেশন) কার্যক্রম গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ইসির নিজস্ব কর্মীদের দিয়ে খুবই সীমিত আকারে চালু রয়েছে এর পারসোনালাইজেশনের কাজ। সূত্র আরো জানায়, কোম্পানিটি চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে বারবার ডাটাবেজ ব্যবহার করার শর্ত আরোপ করে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ওই কোম্পানিকে ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু তারা (ওটি) চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি তাই তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে, রাষ্টীয় স্বার্থে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দেশীয় জনবল এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্মার্টকার্ড উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। এর জন্য আমরা প্রকল্প গ্রহণ করছি। তিনি আরও বলেন, এ জন্য কমিশন উপায় বের করার চেষ্টা করছে। সাড়ে ছয়কোটি ব্ল্যাঙ্ক কার্ড আমাদের হাতে আছে। এখন এগুলো নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশেই পারসোনালাইজেশন এবং বিতরণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশেই স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও পারসোনালাইজেশন করা এবং দেশের প্রযু্ক্িত এবং জনবলের মাধ্যমেই তা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, অচিরেই স্মার্টকার্ড উৎপাদন শুরু হবে নির্বাচন কমিশনের দক্ষ জনবলের মাধ্যমে।
সূত্র জানায়, অবার্থুর বাংলাদেশের জন্য যে ক্ষতি করেছে, সেই হিসাব যদি বুঝিয়ে না দেয়, তাহলে কমিশন বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যেভাবে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার, সেভাবে যদি না বুঝিয়ে দেয় তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যা করা দরকার তাই করবে ইসি। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে ইসি। ইসি সূত্র আরো জানায়, ফ্রান্সের কোম্পানি অবার্থুর টেকনোলোজিস চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা আউটপুট দেয়নি। বিভিন্নভাবে বারবার মনে করিয়ে দিলেও তারা সেভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই প্রকল্পটাকে তারা কোনোভাবে গুরুত্ব দেয়নি। তারা একদিকে বিভিন্নভাবে ব্যর্থ হয়েছে, অপরদিকে সার্ভারে এক্সেস চেয়েছে, ডেটা সেন্টারে এক্সেস চেয়েছে, যেটা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। কোম্পানিটির ব্যর্থতা এবং স্পর্শকাতর সার্ভারে নিষেধ করার পরও ক্রমাগত এক্সেস চাওয়ায় তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে না এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত।
সূত্র আরো জানায়, কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির এক সভায় শর্তসাপেক্ষে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তারা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন করেনি, উল্টো নির্বাচন কমিশনকে নানান শর্তারোপ করায় প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির অপর সভায় চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, চুক্তি অনুযায়ী ব্ল্যাঙ্ক কার্ড আমদানি করে বাংলাদেশে স্থাপিত মেশিনে তা প্রক্রিয়াকরণ (পারসোনালাইজেশন) করা হবে। এরপর তা থানা ও উপজেলা পর্যায়ে ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার কাজের পুরোটাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের করার কথা। এ সব শর্তে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ফ্রান্সের ওটি-র সঙ্গে ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮১৬ কোটি টাকার ) চুক্তি  করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি মানুষের হাতে এ কার্ড তুলে দেওয়ার কথা ছিল। পরে এই মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়।  চলতি বছরের ৩০ জুন সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে। চুক্তির পর থেকেই প্রতি ধাপে এ কোম্পানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। গত ৩ জুলাই ইসি সচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে আইডিইএ প্রকল্পের পরিচালক স্মার্টকার্ডের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন। এতে উল্লেখ করা হয়, এ পর্যন্ত ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ ৭০ হাজার (২.৫৭ মিলিয়ন) মানুষকে এ কার্ড দেয়া হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। থানা ও উপজেলা পর্যায়ে ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার (১০.৯৮ মিলিয়ন) কার্ড পৌঁছানো হয়েছে, কিন্ত বিতরণ করা হয়নি। কার্ড প্রক্রিয়াকরণ (পারসোনালাইজেশন) করা হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার (১২.৪১ মিলিয়ন), যা লক্ষ্যমাত্রার ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ফ্রান্স থেকে এ পর্যন্ত ব্ল্যাঙ্ক কার্ড এসেছে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার (৬৬.৩৬ মিলিয়ন), যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আরও ২.৯৫ মিলিয়ন কার্ড পাইপলাইনে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিল নিয়েছে এ কোম্পানিটি। আরও কমবেশি ৩০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। ওই টাকা পরিশোধ বন্ধ রয়েছে। বাকি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাজই করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
ইসি সূত্রে আরো জানা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি লংঘনের বিষয়ে সম্প্রতি কমিশনের সামনে একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন আইডিইএ প্রকল্পের কর্মকর্তারা। সেখানে জানানো হয়, চুক্তির পর থেকেই কার্ড আমদানিতে ধীরগতি ছিল। ২০১৫ সালে ২.১৮ মিলিয়ন, ২০১৬ সালে ৯.৫ মিলিয়ন ও ২০১৭ সালে ৪৫.৮২ মিলিয়ন সবমিলিয়ে ৫৭.৫০ মিলিয়ন কার্ড আমদানি  করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি অনুযায়ী ওয়ারেন্টির সময়ে সব ধরনের হার্ডওয়ার, রিপেয়ার, রিপ্লেসমেন্টসহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। কার্ড প্রক্রিয়াকরণের সব পর্যায়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করেনি ওটি। এছাড়া কার্ড প্রক্রিয়াকরণে মেশিনারিজের পারফরমেন্সও ভালো ছিল না- এমন তথ্য উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিদিন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬টি কার্ড প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে গড়ে ৪৫ হাজার কার্ড প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দেশেই জাতীয় পরিচয় পত্রের স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ভাবছে ইসি

আপলোড টাইম : ০৪:৫৮:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০১৭

ফ্রান্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা : স্মার্টকার্ড প্রকল্পে অবার্থুর সাথে চুক্তির মেয়াদ বাড়ছে না
দেশেই জাতীয় পরিচয় পত্রের স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ভাবছে ইসি
সমীকরণ ডেস্ক: স্মার্টকার্ড প্রকল্পে ফ্রান্সের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অবার্থুর টেকনোলোজিস (ওটি)-এর ব্যর্থতায় তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ আর বাড়াচ্ছে না নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বিকল্প হিসাবে দেশেই স্মার্টকার্ড তৈরির কথা ভাবছে ইসি। গত ৩০ জুন পর্যন্ত ওটির সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ ছিল। চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে আন্তর্জাতিক আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে কমিশন।
সূত্র জানায়, নানা টানাপোড়েনে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর ইনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) প্রকল্পের স্মাটকার্ড প্রক্রিয়াকরণ (পারসোনালাইজেশন) কার্যক্রম গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। ইসির নিজস্ব কর্মীদের দিয়ে খুবই সীমিত আকারে চালু রয়েছে এর পারসোনালাইজেশনের কাজ। সূত্র আরো জানায়, কোম্পানিটি চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করে বারবার ডাটাবেজ ব্যবহার করার শর্ত আরোপ করে। রাষ্ট্রীয় স্বার্থে ওই কোম্পানিকে ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, যেহেতু তারা (ওটি) চুক্তি অনুযায়ী কাজ করেনি তাই তাদের সাথে চুক্তির মেয়াদ আর না বাড়ানো সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে, রাষ্টীয় স্বার্থে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। দেশীয় জনবল এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে স্মার্টকার্ড উৎপাদন অব্যাহত থাকবে। এর জন্য আমরা প্রকল্প গ্রহণ করছি। তিনি আরও বলেন, এ জন্য কমিশন উপায় বের করার চেষ্টা করছে। সাড়ে ছয়কোটি ব্ল্যাঙ্ক কার্ড আমাদের হাতে আছে। এখন এগুলো নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশেই পারসোনালাইজেশন এবং বিতরণের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। ভবিষ্যতে দেশেই স্মার্টকার্ড উৎপাদন ও পারসোনালাইজেশন করা এবং দেশের প্রযু্ক্িত এবং জনবলের মাধ্যমেই তা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি জানান, অচিরেই স্মার্টকার্ড উৎপাদন শুরু হবে নির্বাচন কমিশনের দক্ষ জনবলের মাধ্যমে।
সূত্র জানায়, অবার্থুর বাংলাদেশের জন্য যে ক্ষতি করেছে, সেই হিসাব যদি বুঝিয়ে না দেয়, তাহলে কমিশন বিন্দুমাত্র ছাড় দেবে না। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কমিশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত। চুক্তির শর্ত অনুযায়ী যেভাবে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার, সেভাবে যদি না বুঝিয়ে দেয় তাহলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য যা করা দরকার তাই করবে ইসি। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে ইসি। ইসি সূত্র আরো জানায়, ফ্রান্সের কোম্পানি অবার্থুর টেকনোলোজিস চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা আউটপুট দেয়নি। বিভিন্নভাবে বারবার মনে করিয়ে দিলেও তারা সেভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। এই প্রকল্পটাকে তারা কোনোভাবে গুরুত্ব দেয়নি। তারা একদিকে বিভিন্নভাবে ব্যর্থ হয়েছে, অপরদিকে সার্ভারে এক্সেস চেয়েছে, ডেটা সেন্টারে এক্সেস চেয়েছে, যেটা রাষ্ট্রের জন্য হুমকিস্বরূপ। কোম্পানিটির ব্যর্থতা এবং স্পর্শকাতর সার্ভারে নিষেধ করার পরও ক্রমাগত এক্সেস চাওয়ায় তাদের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে না এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত।
সূত্র আরো জানায়, কোম্পানির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির এক সভায় শর্তসাপেক্ষে মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু তারা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা বাস্তবায়ন করেনি, উল্টো নির্বাচন কমিশনকে নানান শর্তারোপ করায় প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির অপর সভায় চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, চুক্তি অনুযায়ী ব্ল্যাঙ্ক কার্ড আমদানি করে বাংলাদেশে স্থাপিত মেশিনে তা প্রক্রিয়াকরণ (পারসোনালাইজেশন) করা হবে। এরপর তা থানা ও উপজেলা পর্যায়ে ভোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার কাজের পুরোটাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের করার কথা। এ সব শর্তে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ফ্রান্সের ওটি-র সঙ্গে ১০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (৮১৬ কোটি টাকার ) চুক্তি  করে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে ৯ কোটি মানুষের হাতে এ কার্ড তুলে দেওয়ার কথা ছিল। পরে এই মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়।  চলতি বছরের ৩০ জুন সেই মেয়াদ শেষ হয়েছে। চুক্তির পর থেকেই প্রতি ধাপে এ কোম্পানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। গত ৩ জুলাই ইসি সচিবকে দেওয়া এক চিঠিতে আইডিইএ প্রকল্পের পরিচালক স্মার্টকার্ডের অগ্রগতি সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন। এতে উল্লেখ করা হয়, এ পর্যন্ত ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে মাত্র ২৫ লাখ ৭০ হাজার (২.৫৭ মিলিয়ন) মানুষকে এ কার্ড দেয়া হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ। থানা ও উপজেলা পর্যায়ে ১ কোটি ৯ লাখ ৮০ হাজার (১০.৯৮ মিলিয়ন) কার্ড পৌঁছানো হয়েছে, কিন্ত বিতরণ করা হয়নি। কার্ড প্রক্রিয়াকরণ (পারসোনালাইজেশন) করা হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ১০ হাজার (১২.৪১ মিলিয়ন), যা লক্ষ্যমাত্রার ১৩ দশমিক ৭৯ শতাংশ। ফ্রান্স থেকে এ পর্যন্ত ব্ল্যাঙ্ক কার্ড এসেছে ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার (৬৬.৩৬ মিলিয়ন), যা লক্ষ্যমাত্রার ৭৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আরও ২.৯৫ মিলিয়ন কার্ড পাইপলাইনে রয়েছে। এ পর্যন্ত ৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিল নিয়েছে এ কোম্পানিটি। আরও কমবেশি ৩০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে। ওই টাকা পরিশোধ বন্ধ রয়েছে। বাকি ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের কাজই করেনি প্রতিষ্ঠানটি।
ইসি সূত্রে আরো জানা যায়, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের চুক্তি লংঘনের বিষয়ে সম্প্রতি কমিশনের সামনে একটি প্রেজেন্টেশন তুলে ধরেন আইডিইএ প্রকল্পের কর্মকর্তারা। সেখানে জানানো হয়, চুক্তির পর থেকেই কার্ড আমদানিতে ধীরগতি ছিল। ২০১৫ সালে ২.১৮ মিলিয়ন, ২০১৬ সালে ৯.৫ মিলিয়ন ও ২০১৭ সালে ৪৫.৮২ মিলিয়ন সবমিলিয়ে ৫৭.৫০ মিলিয়ন কার্ড আমদানি  করেছে প্রতিষ্ঠানটি। চুক্তি অনুযায়ী ওয়ারেন্টির সময়ে সব ধরনের হার্ডওয়ার, রিপেয়ার, রিপ্লেসমেন্টসহ অন্যান্য বিষয় নিশ্চিত করার কথা থাকলেও তা মানা হয়নি। কার্ড প্রক্রিয়াকরণের সব পর্যায়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনও বাস্তবায়ন করেনি ওটি। এছাড়া কার্ড প্রক্রিয়াকরণে মেশিনারিজের পারফরমেন্সও ভালো ছিল না- এমন তথ্য উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে প্রতিদিন ১ লাখ ৬৬ হাজার ৬৬৬টি কার্ড প্রক্রিয়াকরণ করতে হবে। কিন্তু বাস্তবে গড়ে ৪৫ হাজার কার্ড প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছে।