ইপেপার । আজ রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫

দর্শনায় ইয়াবাসহ গ্রেফতার রিজভী ও সাকিব’র দেয়া মিথ্যা পরিচয়ের ভিত্তিতে দামুড়হুদা থানায় মামলা : অনুসন্ধানে মিললো আসল পরিচয়

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৪:৫৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০১৭
  • / ১৩৬০ বার পড়া হয়েছে

Police Newsনিজস্ব প্রতিবেদক: দর্শনায় ইয়াবাসহ গ্রেফতার রিজভী ও সাকিব পুলিশের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছে। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য বিশ্বাস করে এর ভিত্তিতে দামুড়হুদা থানায় মামলা নং-০১, তারিখ -০১/০৮/১৭ইং, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ এর ৯ (ক) ধারায় মামলা রুজু করে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দর্শনা বাসস্টান্ড যাত্রী ছাউনি থেকে তাদেরকে ২০পিস ইয়াবাসহ আটক করে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম খান। এরপর তিনি বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় এদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে গ্রেফতারকৃত জুবায়ের হোসেন রিজভীর পিতার নাম ও ঠিকানা পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার আ: রশিদ টিটু ও একই পাড়ার ফেরদৌস মুন্সির ছেলে সাকিব হাসান উল্লেখ করা হয়। এ সংক্রান্ত সংবাদ গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক সময়ের সমীকরণ এ প্রকাশিত হলে পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার আ: রশিদ টিটুসহ অনেকেই সমীকরণ অফিসে ফোন করে এই সংবাদে যে পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে তা মোটেও সঠিক নয় বলে জানান। এরপরই অনুসন্ধানে নামে সময়ের সমীকরণ’র টিম।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ২০পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক জুবায়ের হোসেন রিজভীর পিতা পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার আ: রশিদ টিটু নন। তার পিতা পৌর শহরের জ্বিনতলা পাড়া নিবাসী ও পুরাতন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী লাল মিয়া ও সাকিব হাসান ওরফে রিশানের পিতা একই পাড়ার ফেরদৌস মুন্সি নন। সে জ্বিনতলা পাড়ার বাসিন্দা ফেরীঘাট রোডের মুদি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনের ছেলে। অথচ এই দুইজনই পুলিশের কাছে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানা ভুল দেয়। আসামীদের দেওয়া তথ্য বিশ্বাস করে সত্যতা যাচাই ছাড়াই পুলিশ এর ভিত্তিতে এজাহার দায়ের করলে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, লাল মিয়ার ছেলে জুবায়ের হোসেন ওরফে রিজভী পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার আ: রশিদ টিটুর ছেলে জুবায়ের রশিদের মামাতো ভগ্নিপতি। এই সূত্রে জুবায়ের রশিদের ব্যবহৃত যমুনা’র তৈরী কালো রঙের  রেজিস্ট্রেশন বিহীন পেগাসাস মোটরসাইকেল নিয়ে রিজভী তার সহযোগী রিশানকে সাথে নিয়ে দর্শনায় যায়। দর্শনা থেকে মাদকসেবন শেষে ফেরার পথে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হলে তাদের ব্যবহৃত ওই মোটরসাইকেলটিও আটক করে পুলিশ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা বলেন, রিজভী ও রিশানকে প্রায়ই এ গলিতে (পুরাতন হাসপাতাল পাড়া) জুবায়ের রশিদের সাথে দেখা যায় এবং গ্রেফতারকৃত রিজভী মাদকব্যবসার সাথে জড়িত বলেও অনেকে নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, আসামীদ্বয়কে ২০পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়। পরে আসামীর মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতেই এজাহার দায়ের করে দামুড়হুদা থানায় হস্তান্তর করি।
আসামীর দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাই করেছেন কী না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামীর দেওয়া তথ্য সঠিক। কেউ তো আর নিজের বাবার নাম মিথ্যা বলে না। তাছাড়া ওদের নাম ঠিকানা দিয়ে পিসি-পিআর যাচাই করা হয়েছে, ওখানে ওই নাম ঠিকানায় আসছে। এরপরও যদি তারা মিথ্যা তথ্য দেয় তবে তাদের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হবে।
বিস্তারিত জানতে চাইলে এসআই জাহাঙ্গীর উক্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দামুড়হুদা থানার এসআই তপন’র সাথে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে এসআই তপন বলেন, ‘আমি আসামী দু’জনকে পাইছি, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, পরে কোর্টে চালান দিছি। এখনও মামলার তদন্তে যাইনি, ঘটনাস্থলে গেলে আরো কিছু জানা যাবে’।
আসামীদের দেওয়া ভুল তথ্যের ব্যাপারে বলেন, আসামীদের দেওয়া মৌখিক তথ্যে এজাহার দায়ের করা যায়, আইন আছে। প্রথম পর্যায়ে আসামীরা যে নাম ঠিকানা দেয়, সে অনুযায়ীয় মামলা দায়ের করা হয়। তাছাড়া তাদের ছবি তোলা আছে, এখান থেকে আমি চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় পিসি-পিআর যাচাই করতে পাঠাবো। দু’তিনদিন পর প্রকৃত তথ্য জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম খান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দর্শনা বাসস্টান্ড যাত্রী ছাউনির কাছে মাদক বিরোধী অভিযান চালায়। ওই স্থানে একটি কালো রঙের পেগাসাস মোটরসাইকেল আরোহী রিজভী ও সাকিবকে সন্দেহ হলে তাদের দেহ তল্লাশী করে দু’জনের পকেট থেকে ২০পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় তাদেরকে আটক করে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতেই তাদের দু’জনকে দামুড়হুদা থানায় প্রেরণ করে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম খান। এজাহারে আসামীদের পিতার প্রকৃত নাম ও ঠিকানার পরিবর্তে অন্যের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করায় এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

দর্শনায় ইয়াবাসহ গ্রেফতার রিজভী ও সাকিব’র দেয়া মিথ্যা পরিচয়ের ভিত্তিতে দামুড়হুদা থানায় মামলা : অনুসন্ধানে মিললো আসল পরিচয়

আপলোড টাইম : ০৪:৫৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২ অগাস্ট ২০১৭

Police Newsনিজস্ব প্রতিবেদক: দর্শনায় ইয়াবাসহ গ্রেফতার রিজভী ও সাকিব পুলিশের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছে। পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য বিশ্বাস করে এর ভিত্তিতে দামুড়হুদা থানায় মামলা নং-০১, তারিখ -০১/০৮/১৭ইং, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৯০ এর ৯ (ক) ধারায় মামলা রুজু করে আদালতে সোপর্দ করলে বিজ্ঞ আদালত তাদেরকে জেলহাজতে প্রেরণ করে।
গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দর্শনা বাসস্টান্ড যাত্রী ছাউনি থেকে তাদেরকে ২০পিস ইয়াবাসহ আটক করে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম খান। এরপর তিনি বাদী হয়ে দামুড়হুদা থানায় এদের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করেন। এজাহারে গ্রেফতারকৃত জুবায়ের হোসেন রিজভীর পিতার নাম ও ঠিকানা পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার আ: রশিদ টিটু ও একই পাড়ার ফেরদৌস মুন্সির ছেলে সাকিব হাসান উল্লেখ করা হয়। এ সংক্রান্ত সংবাদ গতকাল মঙ্গলবার দৈনিক সময়ের সমীকরণ এ প্রকাশিত হলে পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার আ: রশিদ টিটুসহ অনেকেই সমীকরণ অফিসে ফোন করে এই সংবাদে যে পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে তা মোটেও সঠিক নয় বলে জানান। এরপরই অনুসন্ধানে নামে সময়ের সমীকরণ’র টিম।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ২০পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক জুবায়ের হোসেন রিজভীর পিতা পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার আ: রশিদ টিটু নন। তার পিতা পৌর শহরের জ্বিনতলা পাড়া নিবাসী ও পুরাতন বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী লাল মিয়া ও সাকিব হাসান ওরফে রিশানের পিতা একই পাড়ার ফেরদৌস মুন্সি নন। সে জ্বিনতলা পাড়ার বাসিন্দা ফেরীঘাট রোডের মুদি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেনের ছেলে। অথচ এই দুইজনই পুলিশের কাছে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানা ভুল দেয়। আসামীদের দেওয়া তথ্য বিশ্বাস করে সত্যতা যাচাই ছাড়াই পুলিশ এর ভিত্তিতে এজাহার দায়ের করলে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।
তথ্যানুসন্ধানে আরো জানা যায়, লাল মিয়ার ছেলে জুবায়ের হোসেন ওরফে রিজভী পুরাতন হাসপাতাল পাড়ার আ: রশিদ টিটুর ছেলে জুবায়ের রশিদের মামাতো ভগ্নিপতি। এই সূত্রে জুবায়ের রশিদের ব্যবহৃত যমুনা’র তৈরী কালো রঙের  রেজিস্ট্রেশন বিহীন পেগাসাস মোটরসাইকেল নিয়ে রিজভী তার সহযোগী রিশানকে সাথে নিয়ে দর্শনায় যায়। দর্শনা থেকে মাদকসেবন শেষে ফেরার পথে ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হলে তাদের ব্যবহৃত ওই মোটরসাইকেলটিও আটক করে পুলিশ।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসীরা বলেন, রিজভী ও রিশানকে প্রায়ই এ গলিতে (পুরাতন হাসপাতাল পাড়া) জুবায়ের রশিদের সাথে দেখা যায় এবং গ্রেফতারকৃত রিজভী মাদকব্যবসার সাথে জড়িত বলেও অনেকে নিশ্চিত করেছে।
এ ব্যাপারে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, আসামীদ্বয়কে ২০পিস ইয়াবাসহ আটক করা হয়। পরে আসামীর মৌখিক তথ্যের ভিত্তিতেই এজাহার দায়ের করে দামুড়হুদা থানায় হস্তান্তর করি।
আসামীর দেওয়া তথ্য যাচাই বাছাই করেছেন কী না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামীর দেওয়া তথ্য সঠিক। কেউ তো আর নিজের বাবার নাম মিথ্যা বলে না। তাছাড়া ওদের নাম ঠিকানা দিয়ে পিসি-পিআর যাচাই করা হয়েছে, ওখানে ওই নাম ঠিকানায় আসছে। এরপরও যদি তারা মিথ্যা তথ্য দেয় তবে তাদের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হবে।
বিস্তারিত জানতে চাইলে এসআই জাহাঙ্গীর উক্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দামুড়হুদা থানার এসআই তপন’র সাথে কথা বলতে বলেন।
এ বিষয়ে এসআই তপন বলেন, ‘আমি আসামী দু’জনকে পাইছি, তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি, পরে কোর্টে চালান দিছি। এখনও মামলার তদন্তে যাইনি, ঘটনাস্থলে গেলে আরো কিছু জানা যাবে’।
আসামীদের দেওয়া ভুল তথ্যের ব্যাপারে বলেন, আসামীদের দেওয়া মৌখিক তথ্যে এজাহার দায়ের করা যায়, আইন আছে। প্রথম পর্যায়ে আসামীরা যে নাম ঠিকানা দেয়, সে অনুযায়ীয় মামলা দায়ের করা হয়। তাছাড়া তাদের ছবি তোলা আছে, এখান থেকে আমি চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় পিসি-পিআর যাচাই করতে পাঠাবো। দু’তিনদিন পর প্রকৃত তথ্য জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, গত সোমবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম খান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে দর্শনা বাসস্টান্ড যাত্রী ছাউনির কাছে মাদক বিরোধী অভিযান চালায়। ওই স্থানে একটি কালো রঙের পেগাসাস মোটরসাইকেল আরোহী রিজভী ও সাকিবকে সন্দেহ হলে তাদের দেহ তল্লাশী করে দু’জনের পকেট থেকে ২০পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এ সময় তাদেরকে আটক করে দর্শনা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে নিয়ে যায় পুলিশ। রাতেই তাদের দু’জনকে দামুড়হুদা থানায় প্রেরণ করে তাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন দর্শনা তদন্ত কেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম খান। এজাহারে আসামীদের পিতার প্রকৃত নাম ও ঠিকানার পরিবর্তে অন্যের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করায় এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়।