দেশে সাতটি নতুন রোগ : চাপ বাড়ছে অর্থনীতিতে
- আপলোড টাইম : ০৬:১৭:৩৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০১৭
- / ৩৮৩ বার পড়া হয়েছে
সমীকরণ ডেস্ক: এডিস মশা যে তিনটি রোগ ছড়ায়, তার সব কটিই বাংলাদেশে শনাক্ত হয়েছে। ১৯৯৯ সালে প্রথম ডেঙ্গু শনাক্ত হয় ঢাকায়। ২০০৮ সালে চিকুনগুনিয়া রাজশাহীর পবায় এবং ২০১৪ সালে চট্টগ্রামে জিকা শনাক্ত হয়। গত ২৮ বছরে এই তিনটি রোগসহ দেশে মোট সাতটি নতুন রোগ শনাক্ত হয়েছে। বাকি চারটি হলো এইচআইভি/এইডস, নিপাহ, বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ও সোয়াইন ফ্লু।
যেসব রোগ কখনোই মানুষের ছিল না এবং তা যদি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়, তখন তাকে নতুন রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের মতো সীমিত সম্পদের দেশে এমন রোগ স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে একটা বড় চাপ সৃষ্টি করছে।
নতুন সাত রোগে গত বছর ১৪ জন মারা গেছে। এ বছর এ পর্যন্ত ২ জন মারা গেছে। গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা শহরের কাঁঠালবাগান এলাকায় ৩০ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। ব্রাজিলসহ কয়েকটি দেশে জিকা মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়লেও বাংলাদেশে এখনো তেমন কোনো নজির দেখা যায়নি। চট্টগ্রামের একজন এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন ২০১৪ সালে। এটা শনাক্ত করেছিল আইইডিসিআর।
এছাড়া ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া বা জিকাই শুধু নতুন রোগ নয়। ২০০১ সালে নিপাহ, ২০০৭ সালে বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং ২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত মানুষ দেশে প্রথম শনাক্ত হয়। এরমধ্যে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মাঝেমধ্যে দু-একজনের মৃত্যু হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর। বার্ড ফ্লু নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল প্রথমত পোলট্রি শিল্পের মালিকদের। অনেক খামারে এই রোগ দেখা দেয়। এছাড়া দেশে একাধিক মৃত্যু ঘটনাও ঘটে। সোয়াইন ফ্লু রোগটিও দেশে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগে এ পর্যন্ত ছয়জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর সূত্র। তবে বাইরে থেকে আসা রোগের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে এইচআইভি/এইডস নিয়ে। ১৯৮৯ সালে একজন বিদেশি এবং ১৯৯০ সালে দুজন দেশি এইডস রোগী শনাক্ত হয়। প্রতিবছর এই রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর এই রোগে ১৪১ জন মারা গেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ একাধিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বলছে, বর্তমানে নতুন যেসব রোগ দেখা যাচ্ছে, তার ৭০ শতাংশ পশুপাখি থেকে আসছে। সোয়াইন ফ্লু, বার্ড ফ্লু, নিপাহ ভাইরাস আসে পশুপাখি থেকে। মানুষ, প্রাণী ও প্রতিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার কারণে এসবের উৎপত্তি হচ্ছে। একই সঙ্গে মানুষ ও পশুপাখির ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এসব রোগের বিস্তার বেশি।
মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে ‘অজ্ঞাত রোগে’ মানুষ আক্রান্তÍ এমন খবর বের হয়। কিছু ক্ষেত্রে রোগ শনাক্ত করতে বিলম্ব হয়। যেমন সম্প্রতি হামে আক্রান্ত হয়ে সীতাকু-ের ত্রিপুরাপাড়ায় ৯ শিশুর মৃত্যু হয়েছে এবং ৮৫টি শিশু হাসপাতালে ভর্তি ছিল। প্রথমে বলা হয়েছিল, এরা ‘অজ্ঞাত রোগে’ আক্রান্ত। ২০১৪ সালে ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত এক ব্যক্তি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি, এমন কথা শোনা যায়। একই বছর ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে মার্স করোনারি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ভর্তি আছে, এমন শোনা যায়। দুটি ঘটনাই অনুসন্ধান করে আইইডিসিআর। প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, দুটিই ছিল গুজব। এগুলো সব পুরোনো রোগ নতুন ভাবে আসছে।
আবার পুরোনো কিছু রোগ নতুনভাবেও দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে অ্যানথ্রাক্স একটি। ২০০৯ সাল থেকে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ এলাকায় মানুষ নিয়মিতভাবে অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হচ্ছে।
যক্ষ্মা পুরোনো রোগ হলেও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (এমডিআর-টিবি ও এক্সডিআর-টিবি) নতুন সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালে ২০০২ সালে প্রথম ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রোগের ওপর নজরদারির ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে। জনস্বাস্থ্যবিদ, পশুস্বাস্থ্যবিদ, কৃষিবিদ, পরিবেশবিদ একসঙ্গে নজরদারিতে অংশ নিতে হবে। স্বাস্থ্য এখন শুধু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার কাজ নয়।