ইপেপার । আজ শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

সমীকরণ প্রতিবেদন
  • আপলোড টাইম : ০৬:১৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০১৭
  • / ৩৩০ বার পড়া হয়েছে

14সমীকরণ ডেস্ক: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে অনলাইন গণমাধ্যম বিষয়ক নীতিমালার খসড়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিষদ। গতকাল পরিষদের এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়। সম্পাদক পরিষদ সভাপতি ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার-এর সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার ডেইলি স্টার কার্যালয়ে পরিষদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সব বিষয় বিদ্যমান থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। এই ১৯ ধারাতেও তথাকথিত মানহানি, সামাজিকভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা বিশেষভাবে রাখা হয়েছে। যদিও আইনমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ৫৭ ধারাটি থাকছে না। কিন্তু প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯ ধারাতে আরো শক্তভাবে তা রাখা হচ্ছে। আমরা এটা ভেবেও উদ্বিগ্ন যে, প্রস্তাবিত খসড়ার ১৫(৫) ধারা চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আরেকটি বড় বাধা হবে। কারণ এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কোনো বক্তব্য সরকারি ভাষ্যের বিপরীত হলে তা ‘ডিজিটাল সন্ত্রাসী অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হবে। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক বিধান পর্যালোচনা ও সংশোধন করে দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনার সুযোগ করে দিতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সম্পাদক পরিষদ অনলাইন গণমাধ্যম বিষয়ক নীতিমালার খসড়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতেও ৫৭ ধারাসহ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই খসড়া নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারণ, এতেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায় হয়, এমন সব বিধি-বিধান বাদ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানির অভিযোগকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেয়ার বিধানও বাদ দেয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি। আমরা এই ধরনের বিষয়ের প্রতিবিধানের জন্য সবার আগে প্রেস কাউন্সিলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানাচ্ছি। দেওয়ানি অভিযোগের ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ দাবির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সরকারের কোনো নীতিমালা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম-তাদের সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল মিডিয়া তথা ওয়েবসাইট, অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে কোনো রকম হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন প্রচলিত গণমাধ্যমের নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন।
সম্পাদক পরিষদ সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত সব হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করে এই ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারাদেশে যত মিথ্যা মামলা করেছেন, তা প্রত্যাহারের দাবি করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় যত মামলা আছে, তা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিকদের মুক্তি দাবি করছে।
সবশেষে আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই, আইসিটি আইন থেকে ৫৭ ধারা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং কোনো নতুন আইনে এ ধারাগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা, এই আইনের ধারাগুলো সংবিধান পরিপন্থি এবং সংবিধানে রক্ষিত স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি।
সম্পাদক পরিষদের সভায় উপস্থিত ছিলেন গোলাম সারওয়ার, মাহফুজ আনাম, তাসমিমা হোসেন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান চৌধুরী, শ্যামল দত্ত, ইমদাদুল হক মিলন, নঈম নিজাম, খন্দকার মনিরুজ্জামান, সাইফুল আলম, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও মতিউর রহমান।

ট্যাগ :

নিউজটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন

আজকের সমীকরণ ইপেপার

You cannot copy content of this page

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সম্পাদক পরিষদের উদ্বেগ

আপলোড টাইম : ০৬:১৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ জুলাই ২০১৭

14সমীকরণ ডেস্ক: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে অনলাইন গণমাধ্যম বিষয়ক নীতিমালার খসড়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিষদ। গতকাল পরিষদের এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়। সম্পাদক পরিষদ সভাপতি ও সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার-এর সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার ডেইলি স্টার কার্যালয়ে পরিষদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলো গৃহীত হয় বলে বিবৃতিতে জানানো হয়।
এতে বলা হয়, সম্পাদক পরিষদ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রস্তাবিত খসড়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। এই আইনের খসড়ার ১৯ ধারায় বিদ্যমান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার সব বিষয় বিদ্যমান থাকায় আমরা উদ্বিগ্ন। এই ১৯ ধারাতেও তথাকথিত মানহানি, সামাজিকভাবে অপদস্থ করার চেষ্টা বিশেষভাবে রাখা হয়েছে। যদিও আইনমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ৫৭ ধারাটি থাকছে না। কিন্তু প্রস্তাবিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৯ ধারাতে আরো শক্তভাবে তা রাখা হচ্ছে। আমরা এটা ভেবেও উদ্বিগ্ন যে, প্রস্তাবিত খসড়ার ১৫(৫) ধারা চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য আরেকটি বড় বাধা হবে। কারণ এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে কোনো বক্তব্য সরকারি ভাষ্যের বিপরীত হলে তা ‘ডিজিটাল সন্ত্রাসী অপরাধ’ হিসেবে গণ্য হবে। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণমূলক বিধান পর্যালোচনা ও সংশোধন করে দেশের সমৃদ্ধ ইতিহাস নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনার সুযোগ করে দিতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সম্পাদক পরিষদ অনলাইন গণমাধ্যম বিষয়ক নীতিমালার খসড়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এতেও ৫৭ ধারাসহ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিধানগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই খসড়া নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। কারণ, এতেও কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানিকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। সম্পাদক পরিষদ মত প্রকাশের স্বাধীনতার অন্তরায় হয়, এমন সব বিধি-বিধান বাদ দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কথিত মানহানির অভিযোগকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে নেয়ার বিধানও বাদ দেয়ার জন্য আমরা দাবি জানাচ্ছি। আমরা এই ধরনের বিষয়ের প্রতিবিধানের জন্য সবার আগে প্রেস কাউন্সিলে যাওয়া বাধ্যতামূলক করার আহ্বান জানাচ্ছি। দেওয়ানি অভিযোগের ক্ষেত্রেও ক্ষতিপূরণ দাবির ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত।
আমরা পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সরকারের কোনো নীতিমালা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম-তাদের সংশ্লিষ্ট ডিজিটাল মিডিয়া তথা ওয়েবসাইট, অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমে কোনো রকম হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য হবে না। তবে অনিয়ন্ত্রিত অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতি আমাদের আহ্বান, তারা যেন প্রচলিত গণমাধ্যমের নীতিমালার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকেন।
সম্পাদক পরিষদ সাংবাদিকদের ওপর সংঘটিত সব হামলার দ্ব্যর্থহীন নিন্দা করে এই ঘটনাগুলোর নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের হয়রানি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য সারাদেশে যত মিথ্যা মামলা করেছেন, তা প্রত্যাহারের দাবি করছে সম্পাদক পরিষদ। একই সঙ্গে সম্পাদক ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় যত মামলা আছে, তা প্রত্যাহার এবং গ্রেপ্তারকৃত সাংবাদিকদের মুক্তি দাবি করছে।
সবশেষে আমরা সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই, আইসিটি আইন থেকে ৫৭ ধারা সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং কোনো নতুন আইনে এ ধারাগুলো পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা, এই আইনের ধারাগুলো সংবিধান পরিপন্থি এবং সংবিধানে রক্ষিত স্বাধীন মতপ্রকাশ ও সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি।
সম্পাদক পরিষদের সভায় উপস্থিত ছিলেন গোলাম সারওয়ার, মাহফুজ আনাম, তাসমিমা হোসেন, রিয়াজউদ্দিন আহমেদ, এএইচএম মোয়াজ্জেম হোসেন, মতিউর রহমান চৌধুরী, শ্যামল দত্ত, ইমদাদুল হক মিলন, নঈম নিজাম, খন্দকার মনিরুজ্জামান, সাইফুল আলম, দেওয়ান হানিফ মাহমুদ ও মতিউর রহমান।